Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

আল জাজিরা নিয়ে রিটে মত দিলেন ছয় অ্যামিকাস কিউরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ফেব্রুয়ারি ১৫, ২০২১, ০৩:০০ পিএম


আল জাজিরা নিয়ে রিটে মত দিলেন ছয় অ্যামিকাস কিউরি

বাংলাদেশে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল জাজিরা নেটওয়ার্কের সম্প্রচার বন্ধ চেয়ে দায়ের করা রিট শুনানিতে ছয়জন অ্যামিকাস কিউরি আদালতে তাদের মতামত দিয়েছেন।

সোমবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) বিচারপতি মো. মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে শুনানি গ্রহণ করা হয়।

এ দিন ছয়জন অ্যামিকাস কিউরির মতামত শেষ হয়েছে। আগামী বুধবার পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন আদালত।   

সম্প্রতি আল জাজিরার প্রচারিত তথ্যচিত্র ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ প্রসঙ্গে বেলা ১১টা থেকে অ্যামিকাস কিউরিদের মধ্যে এ জে মোহাম্মদ আলী, কামালুল আলম, ফিদা এম কামালসহ একে একে ছয়জন বক্তব্য দেন।

শুনানির শুরুতে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী সরকার চাইলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারত। সরকার তো কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। বরং রিটকারীর এখানে সংক্ষুব্ধ হওয়ার কিছুই নেই। তাই রিটের গ্রহণযোগ্যতা নেই।     

আইনজীবী কামাল-উল আলম বলেন, ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার হলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নাম বলা হচ্ছে। অভিযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু তার (প্রধানমন্ত্রী) সঙ্গে কোনো যোগসূত্র দেখাতে পারলেন না। গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত রাষ্ট্রের প্রধান ব্যক্তিকে বিতর্কিত করা হলে রাষ্ট্রকেই বিতর্কিত করা হয়।

তিনি বলেন, রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার যৌক্তিকতা নেই। রিটটি গ্রহণযোগ্য নয়।

অপর তিন অ্যামিকাস কিউরি সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ফিদা এম কামাল, আইনজীবী প্রবীর নিয়োগী ও ড. শাহদীন মালিক রিট গ্রহণযোগ্য নয় বলে মত দেন।

তবে রিটের পক্ষে বক্তব্য দিয়ে সাবেক আইনমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, এ প্রতিবেদনের মাধ্যমে দেশের সুনাম নষ্ট করা হয়েছে। দেশে বিদেশে বাংলাদেশকে ছোট করতে একটি চক্র এ কাজ করেছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনীর সম্মান নষ্ট করা হয়েছে। আদালত চাইলে একটি আদেশ দিতে পারেন। আর সাংবিধানিক অধিকারবলে রিটকারী রিট করেছেন।

‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’ শিরোনামে ডকুমেন্টারি প্রচারের প্রেক্ষাপটে কাতারভিত্তিক টিভি চ্যানেল আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ ও এ সংক্রান্ত ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে অপসারণের নির্দেশনা চেয়ে রিটটি করা হয়েছে। গত ৮ ফেব্রুয়ারি রিটটি দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. এনামুল কবির ইমন।

গত ১০ ফেব্রুয়ারি শুনানিকালে রিট আবেদনকারীকে প্রশ্ন করা হয়- আল-জাজিরায় সম্প্রচারিত তথ্যচিত্রে তিনি কীভাবে সংক্ষুব্ধ হয়েছেন, সংক্ষুব্ধ হয়ে থাকলে রিট আবেদনের আগে সংশ্লিষ্টদের উকিল নোটিশ বা ডিমান্ডিং জাস্টিস দেয়া হয়েছিল কি না এবং এই রিটকে তিনি ‘জনস্বার্থে’ বলছেন কীভাবে। জবাবে রিটকারী আইনজীবী মো. এনামুল কবির ইমন বলেন, ‘রাষ্ট্রের নিরাপত্তা অক্ষুণ্ন রাখতে এই রিট করা হয়েছে।’

ওইদিন শুনানিতে যুক্ত হয়ে বিটিআরসি’র আইনজীবী খন্দকার রেজা-ই রাকিব বলেন, আল-জাজিরার কোনো বাংলা ভার্সন নেই। কিন্তু ওই কন্টেনটি বাংলায় করেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যাতে এ সংক্রান্ত ডকুমেন্টারি আর প্রচার না করা হয় সেজন্য পদক্ষেপ নিতে আদালত আদেশ দিতে পারেন। যেমনটি নোয়াখালীর এক নারীর নির্যাতনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার ঘটনায় দেয়া হয়েছিল। আর দেশের মধ্যে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ করা সম্ভব।

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী বলেন, ডিমান্ডিং জাস্টিস না দিলেও রিট করা যায়। আল-জাজিরার ওই রিলেটেড ইস্যুতে আরও পর্ব আসতে পারে। বিটিআরসির উচিত ছিল পদক্ষেপ নেয়া। কিন্তু এক্ষেত্রে তারা নিষ্ক্রিয়তা (ফেলিউর) দেখিয়েছে।

রিটকারী আইনজীবী মো. এনামুল কবির ইমন বলেন, রিটে বাংলাদেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টারস মেন’ নামে সম্প্রচারিত প্রতিবেদনটি ইউটিউব, ফেসবুক ও টুইটার থেকে অপসারণের নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে।

রিটে ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব, তথ্য সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, বিটিআরসির চেয়ারম্যান, পুলিশের আইজিসহ সংশ্লিষ্টদেরকে বিবাদী (রেসপনডেন্ট) করা হয়েছে।

রিটের গ্রহণযোগ্যতাসহ পাঁচটি বিষয়ে মতামত দিতে ১০ ফেব্রুয়ারি অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছয়জন আইনজীবীর নাম ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। অ্যামিকাস কিউরি হলেন- আদালতের আইনি সহায়তাকারী। রিট আবেদনকারীর সংক্ষুব্ধ হওয়ার দিক, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে কোনো আদেশ দেওয়া হলে বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের ক্ষেত্রে তা কার্যকর করা যাবে কি না, কোনো আইনি নোটিশ ছাড়া রিট (ম্যান্ডামাস) চলে কি না, রিটের প্রার্থনা অনুসারে এই আদালত থেকে আল জাজিরার তথ্যচিত্রটি সব মাধ্যম থেকে বন্ধ করার কোনো নির্দেশনা দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না, ১ ফেব্রুয়ারি তথ্যচিত্রটি প্রকাশের পর এত দেরিতে রিট করার প্রেক্ষাপটে কোনো নির্দেশ দেওয়ার প্রয়োজন আছে কি না- এসব বিষয়ে অ্যামিকাস কিউরিদের মতামত দিতে বলা হয়েছে।

মতামত দেওয়ার জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা হয়। বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার হাইকোর্ট বেঞ্চে আজ শুনানি শুরু হয়।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার এনামুল কবীর ইমন। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) পক্ষে ছিলেন খোন্দকার রেজা ই রাকিব, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।

আমারসংবাদ/জেআই