শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়ে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী

সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ হলেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বৃহস্পতিবার (৪ মার্চ) গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, এনএসটি ফেলোশিপ এবং গবেষণা-অনুদান বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনার কারণে সুরক্ষা দিতেই একবছর ধরে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে- এ সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভ্যাকসিন দেওয়া শেষ হলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হবে। শিক্ষাকে সবসময় গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে আওয়ামী লীগ সরকার, অতীতে শিক্ষাখাতে বিজ্ঞানে উৎসাহ ছিল না শিক্ষার্থীদের, তবে বিজ্ঞান ও গবেষণা ছাড়া কোনো জাতি এগিয়ে যেতে পারে না। তাই জ্ঞান ও দক্ষতা বাড়াতে আধুনিক শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে সরকার।
তিনি বলেন, অতীতে সামরিক শাসকরা ক্ষমতাকে নিষ্কণ্টক করার জন্য দেশের যুব সমাজ, ছাত্র-শিক্ষক সবার ওপরেই তারা যেমন অত্যাচার করেছে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংসের পথে নিয়ে গেছে। আমরা দেখেছি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান অস্ত্রের ঝনঝনানি, বোমা-বারুদ, মেধাবী ছাত্রদের হাতে অস্ত্র তুলে দেওয়া, অর্থ তুলে দেওয়া, তাদের বিপথে নিয়ে যাওয়া এবং তাদের ব্যবহার করা।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ নিয়ে শিক্ষার একটা পরিবেশ সৃষ্টি করতে সক্ষম হয়েছি। যদিও করোনা ভাইরাস আমাদের আরেকটা সমস্যা সৃষ্টি করে দিয়েছে। প্রায় এক বছরের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ রাখতে হয়েছে, এটা মানুষের জীবনকে সুরক্ষিত করার জন্যই করা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে আমরা ভ্যাকসিন শুরু করেছি। টিকা দেওয়ার কর্মসূচিতে শিক্ষকদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। শিক্ষক-কর্মচারীদের প্রাইমারি থেকে শুরু করে একেবারে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া শেষ হলে মার্চ মাসের শেষদিকে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে সক্ষম হবো।
জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে গবেষণা চালিয়ে যেতে শিক্ষক, বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি সব সময় চাই যে মানবকল্যাণে কাজ করতে হবে এবং আপনারা এইটুকু মনে রাখবেন যে, আমরা যে ফেলোশিপ দিচ্ছি বা অর্থ বরাদ্দ করেছি এটা কিন্তু জনগণেরই অর্থ। কাজেই তা যেন জনগণের কল্যাণে লাগে, সেই দিকটায় বিশেষ করে দৃষ্টি দিয়ে গবেষণাকাজ আপনারা চালিয়ে যাবেন, সেটা আমরা চাই।
জাতির পিতা দেশের মানুষকে দক্ষ করে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে জাতির পিতা যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ গড়ে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন। আমরা এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আজকে আমাদের অবস্থানটা করতে পেরেছি। আমরা ভবিষ্যতে উন্নত দেশ হিসেবে নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠিত করব। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে মর্যাদা পেয়েছে। এখন আর বাংলাদেশকে কেউ অবহেলার চোখে দেখতে পারবে না।
আওয়ামী লীগ সরকার শিক্ষাকে গুরুত্ব দেয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন অবাক হয়ে দেখলাম বিজ্ঞানের জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না, গবেষণার জন্য কোনো বরাদ্দ ছিল না। এমনকি শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিল। কিন্তু বিশ্বব্যাপী আমরা যদি দেখি, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এটা তো আমাদের অগ্রগতি সাধন করবার একটা উপায়। গবেষণা ছাড়া বা বিজ্ঞান প্রযুক্তি শিক্ষা ছাড়া কিভাবে একটা জাতি সামনের দিকে এগিয়ে যেতে পারে? কারণ বিজ্ঞানের যুগে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন উদ্ভাবন হচ্ছে। তার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আমাদের চলতে হবে।
আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর গবেষণার জন্য বাজেটে আলাদা বরাদ্দ রাখার পাশপাশি বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসারে নানা উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে শিক্ষা ও গবেষণায় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়ার কথাও জানান সরকার প্রধান।
তিনি বলেন, ২০০৮ সাল থেকে এই পর্যন্ত সব কয়টি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার ফলে আমরা যেহেতু দীর্ঘদিন সরকারে থাকার সুযোগ পেয়েছি এবং সরকারের ধারাবাহিকতা আছে, যার কারণে আজকে মানুষের যে মৌলিক চাহিদা, সেগুলো পূরণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি।
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে বলে করোনা ভাইরাস মোকাবিলায়ও যথেষ্ট সহযোগিতা ও সুযোগ পাওয়া গেছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, আমি মনে করি বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে, এই অগ্রযাত্রা কেউ থামাতে পারবে না। আর করোনাভাইরাস যখন পারে নাই, তখন আর কেউ পারবে না। এটাই আমার বিশ্বাস। সবাইকে আমি ধন্যবাদ জানাই। সবার সহযোগিতায় এই অর্জন সম্ভব হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গবেষণার মধ্য দিয়েই আমরা ব্যয় কমাতে পারি, উৎপাদনের উৎকর্ষতা বাড়াতে পারি, পরিমাণ বৃদ্ধি করতে পারি। আমাদের রপ্তানি খাতে আমরা শুধু একটা বা দুইটার (পণ্য) উপর নির্ভরশীল না। আমরা বহুমুখী পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করতে পারি।
নতুন নতুন পণ্য তৈরি ও রপ্তানির উপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দেশের অনেক সুযোগ রয়েছে। রপ্তানি পণ্য বাড়াতে হলে সেখানেও কিন্তু গবেষণার প্রয়োজন আছে। কাজেই আমি আশা করি, সবাই নতুন নতুন পণ্য সৃষ্টি এবং আমাদের রপ্তানি যেন অব্যহত থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দেবেন।
কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থার আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণের ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, আমাদের জনসংখ্যা বেশি। কৃষি উৎপাদনের জায়গা কম। কিন্তু সেটাও আমরা ব্যবহার করে আমাদের দেশে আমরা কিন্তু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছি। কাজেই সেটা মাথায় রেখেই আমাদের গবেষণায় আরো জোর দিতে হবে।
দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টি করে দেশ ও বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সেদিকে লক্ষ্য রাখছি। আর প্রতিটি শিল্প কারখানায় গবেষণা ও উন্নয়ন শাখাকে কার্যকর ও শক্তিশালী করতে হবে। আমরা ১০০টা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। শিল্প প্রতিষ্ঠিত হবে, কিন্তু সেখানেও গবেষণার একান্ত প্রয়োজন আছে।
মুজিববর্ষে ভূমিহীন ও গৃহনহীনদের ঘর করে দেওয়ার কথা তুলে ধরার পাশাপাশি অনুষ্ঠানে বিজ্ঞানকে ব্যবহার করে এগিয়ে যাওয়ার কথা বলেন শেখ হাসিনা।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান ‘বঙ্গবন্ধু বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফেলোশিপ’, এনএসটি ফেলোশিপ এবং বিশেষ গবেষণা অনুদানের চেক হস্তান্তর করেন।
ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তন প্রান্তে এই সময় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আ ফ ম রুহুল হক, মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. আনোয়ার হোসেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
আমারসংবাদ/জেআই