Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

‘তরুণ প্রজন্ম নষ্টের জন্য দায়ী জিয়াউর রহমান’

নিজস্ব প্রতিবেদক

জুন ১৭, ২০২১, ০৮:২০ এএম


‘তরুণ প্রজন্ম নষ্টের জন্য দায়ী জিয়াউর রহমান’

চিত্রনায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের সূত্র ধরে রাজধানীর বিভিন্ন ক্লাব, মদ ও জুয়া নিয়ে উত্তপ্ত আলোচনা হয়েছে জাতীয় সংসদে।

সরকারি কর্মকর্তারা কীভাবে এসব ক্লাবের সদস্য হন, এত টাকা তারা কোথায় পান, এসব ক্লাবে যে পরিমাণ মদ বিক্রি হয় তার কতটা বৈধ- এসব প্রশ্নও এসেছে সাংসদদের কথায়।

আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও তরিকত ফেডারেশনের সংসদ সদস্যদের অনির্ধারিত আলোচনায় বৃহস্পতিবার (১৭ জুন) কিছুক্ষণের জন্য সংসদ সরব হয় ওঠে।

অধিবেশনে দিনের কর্মসূচির শুরুতেই পয়েন্ট অব অর্ডারে ফ্লোর নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন জাতীয় পার্টির জ্যেষ্ঠ সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু।

পরে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলুল করিম সেলিম, বিএনপির হারুনুর রশীদ, তরিকত ফেডারেশনের সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এবং বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গাঁ আলোচনায় অংশ নেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসময় সংসদে উপস্থিত ছিলেন।

আলোচনার শুরুতে চুন্নু বলেন, কয়েকদিন ধরে একজন চিত্রনায়িকার বিষয়ে আলোচনা হচ্ছে। যেখানে ঘটনাটি ঘটেছে, উত্তরা বোট ক্লাব, কে করল এই ক্লাব? এই ক্লাবের সদস্য কারা হয়? শুনেছি ৫০-৬০ লাখ টাকা দিয়ে এর সদস্য হতে হয়। এত টাকা দিয়ে কারা এর সদস্য হয়? আমরাতো ভাবতেই পারি না। সারাজীবন এত ইনকামও করি না।

রাজধানীর কয়েকটি ক্লাবের নাম ধরে জাতীয় পার্টির এই কো-চেয়ারম্যান বলেন, এসব ক্লাবে মদ খাওয়া হয়। জুয়া খেলা হয়। বাংলাদেশে মদ খেতে হলে লাইসেন্স লাগে। সেখানে গ্যালন গ্যালন মদ বিক্রি হয়। লাইসেন্স নিয়ে যদি খায়, তবে তো এত মদ বিক্রি হওয়ার কথা নয়। সরকারি কর্মকর্তারা এখানে কীভাবে সদস্য হয়? এত টাকা কোথা থেকে আসে?

রাজধানীর অভিজাত এলাকায় ‘ডিজে পার্টি’ বন্ধে প্রধানমন্ত্রীর হস্তেক্ষেপ চেয়ে চুন্নু বলেন, গুলশান-বারিধারা এলাকায় ডিজে পার্টি হয়। সেখানে ড্যান্স হয়। নেশা করা হয়। মদ খাওয়া হয়। এসব আমাদের আইনে নেই, সংস্কৃতিতে নেই, ধর্মে নেই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলব, আপনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নির্দেশ দেন- কেন এসব হচ্ছে? কেন বন্ধ করা হবে না? ওইসব ক্লাবের সদস্য কারা হয়? পরীমনির যে ঘটনা, সেটা বোট ক্লাবে। ওই জায়গার একজন মালিক আছে। তিনি যেতেও পারে না। এসব দেখতে হবে।

চুন্নুর বক্তব্যের পর শেখ সেলিম ফ্লোর নিয়ে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে মদ ও জুয়ার লাইসেন্স দেওয়ার জন্য বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে দায়ী করেন।

তিনি বলেন, এতো বোট ক্লাব, জিয়াউর রহমান স্টিমার ক্লাব করেছিল। বঙ্গবন্ধু মদ-জুয়ার লাইসেন্স বন্ধ করে দিয়েছিলেন। জিয়াউর রহমান আবার দিয়েছিল। যারা অপরাধের শুরু করেছে, তাদের আগে বিচার করা উচিত। ওখান থেকে ধরতে হবে।

শেখ সেলিম বলেন, তরুণ প্রজন্ম নষ্টের জন্য জন্য দায়ী হলো বিএনপি, দায়ী জিয়াউর রহমান। অন্য কেউ দায়ী নয়।

বিএনপির হারুনুর রশীদ এ সময় স্পিকারের কাছ থেকে ফ্লোর নিয়ে বলেন, আমাদের বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য একটা বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু সিনিয়র একজন সদস্য (শেখ সেলিম) কোথায় চলে গেলেন? বাংলাদেশে অনেক বিদেশি থাকেন। এছাড়া অন্য ধর্মের মানুষদের জন্য, ডোমদের জন্য মদের বৈধতা আছে। কোনো মুসলমানের জন্য আইনে অনুমতি নেই। জিয়াউর রহমান যদি মুসলমানদের মদের লাইসেন্স দিয়ে থাকেন, যদি প্রমাণ করতে পারেন, আমি সদস্য পদ ছেড়ে দেব।

হারুন বলেন, এই সব ক্লাবে মদের ব্যবসার সঙ্গে সরকারি লোক জড়িত। আমি চ্যালেঞ্জ করছি। পুলিশ এসব জায়গা থেকে টাকা নেয়। প্রধানমন্ত্রী কোনো দলের নন, উনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। এসব খুঁজে দেখা হোক।

হারুনের বক্তব্যের পর শেখ সেলিম আবারও ফ্লোর নেন। তিনি বলেন, লাকী খানের নাচের কথা কী ভুলে গেলেন? হিযবুল বাহার? জিয়াউর রহমান ওগুলো করেছিল। সরকার কোনো মুসলমানকে মদের পারমিশন দেয়নি। বন্ধ করতে গেলে আপনারাই (বিএনপি) চিল্লাচিল্লি করবেন। বলবেন, ফরেনারদের পারমিশন লাগবে।

তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভাণ্ডারী এই অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, হারুন সাহেবের সদস্য পদ আজই ছেড়ে দেওয়া উচিত। উনি বললেন, জিয়াউর রহমান মুসলমানদের মদ খাওয়ার পারমিশন দেননি। উনি দেখাক, আইনে কোথায় বলা আছে, মুসলমানরা মদ খেতে পারবেন না। আইন এখানে এনে দেখাক। পদ ছেড়ে দিক।

পরে জাতীয় পার্টির সদস্য বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ মশিউর রহামান বলেন, এখানে রাষ্ট্রীয় কিছু বিষয় আছে। বঙ্গবন্ধু লাইসেন্স দেননি। তারপর আইনটা অপব্যবহার হচ্ছে। ক্লাবগুলোতে একজন ডাক্তার দিয়ে সার্টিফিকেট নিয়ে নেয়, দৈনিক মদ খেতে হবে। তারপর লাইসেন্স দেওয়া হয়। বিএনপি এই লাইসেন্স দিয়েছিল। এখন কোনো মুসলমান যদি মদ খায়, সেখানে সরকারের কিছু করার নেই।

বিরোধী দলীয় প্রধান হুইপ রংপুরের ইসলামিক বক্তা আবু ত্ব-হা মোহাম্মদ আদনানকে খুঁজে বের করার দাবি জানান।

পরীমনির মামলায় আটক জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিষয়ে রাঙ্গাঁ বলেন, পরীমনি অভিযোগ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছেন। একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিচার হবে। দোষী হলে শাস্তি হবে।

আমারসংবাদ/জেআই