Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪,

টিকে থাকার লড়াইয়ে ঐতিহ্যের ‘টমটম’

জুন ১৯, ২০২১, ১১:০৫ এএম


টিকে থাকার লড়াইয়ে ঐতিহ্যের ‘টমটম’

ঘোড়ার গাড়ি যেন বাংলার রাজকীয় ঐতিহ্য। ঘোড়ার গল্প তো মানুষের মুখে মুখে। পঙ্খিরাজ ঘোড়া। রাজপুত্রের টগবগিয়ে চলা তেজি ঘোড়া। ঘোড়া নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রুপকথা-উপকথা। এক সময় তা গ্রাম-গঞ্জের মানুষের অতি প্রয়োজনীয় বাহনে পরিণত হয়। কিন্তু যান্ত্রিকতার এ যুগে প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে প্রায় দেড়শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী এই যান। ইতিহাস বলছে, ভারত বর্ষে ইংরেজ শাসন‍ামলে ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হয়। আর ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন হয় ১৮৩০ সালে। সময়ের ব্যবধানে বাংলার ঐতিহ্যের তালিকাতেও জায়গা করে নিয়েছে বাহনটি। শুধু গ্রামে গঞ্জেই নয় শহরেরও ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন রয়েছে। বিশেষ করে পুরান ঢাকায়। ‘টমটম’ নামেই পরিচিত এই গাড়ির। 

ঘোড়ার গাড়ির যখন প্রচলন হয় তখন ভারতবর্ষে চলে ইংরেজ শাসন। ঢাকায়ও ঘোড়ার গাড়ি আসে সে সময়ই। ঘোড়ার গাড়ির ঢাকা শহরে চলাচলের সুবিধার্থে রাস্তাঘাটের সংস্কার করা হয়। প্রথমে ইট-সুরকি, সিমেন্ট-বালি পরে পিচঢালা ইট দিয়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করা হয়েছিল। সর্বপ্রথম ঘোড়ার গাড়ির ব্যবহার ইংরেজরা শুরু করলেও স্থানীয় অভিজাত শ্রেণির মানুষও এই সুবিধা নেয়। একসময় তা চলে আসে সাধারণ মানুষের মধ্যে। এ দেশে ঐতিহ্য বেয়ে ১৫০ বছরেরও বেশি সময় পার করেছে রাজকীয় বাহন ঘোড়ার গাড়ি। বর্তমানে এটি বিলুপ্তির পথে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৮৫৬ সালে সিরকোই প্রথম ঢাকায় ঘোড়ার গাড়ির প্রচলন করে যা তখন ‘ঠিকা গাড়ি’ নামে পরিচিল ছিল। ঢাকায় যেসব ঘোড়ার গাড়ি দেখা যায় সেগুলোর নাম ক্রাহাঞ্চি বা ক্রাঞ্চি গাড়ি। এগুলোকে ‘কারাচি গাড়ি’ও বলা হতো।বিনোদন কিংবা শখ মেটাতে অনেকেই চড়ে থাকেন টমটমে। এখনও পুরান ঢাকার সদরঘাট-গুলিস্তানে যাত্রী পরিবহনের ব্যবহৃত হচ্ছে ঘোড়ার গাড়ি। যাত্রী পরিবহন ছাড়াও বিয়ে ও পূজায় ঐতিহ্যবাহী টমটমের ব্যবহার রয়েছে। বিভিন্ন দিবসের শোভাযাত্রা কিংবা চলচ্চিত্রের শুটিংয়েও ব্যবহৃত হয় যানটি। পুরান ঢাকার বিয়েতে যেন ঘোড়ার গাড়ি না হলেই নয়।

ইট-পাথর আর যান্ত্রিকতার শহর ঢাকা এখন যানজটের নগরীতে পরিণত হয়েছে। রাস্তাজুড়ে চোখে পরে শুধু রিকশা, ব্যক্তিগত গাড়ি, লক্কর-ঝক্কর বাস, মিনিবাস কিংবা মালবাহী ট্রাক। চলাচলে একটু আনন্দ ও সুবিধা পেতেই অনেক চড়ে থাকেন ঘোড়ার গাড়িতে। ঢাকায় বর্তমানে, বঙ্গবাজার, লক্ষ্মীবাজার, আজিমপুর, বকশীবাজার, নারিন্দা, সিদ্দিকবাজার, কেরাণীগঞ্জে প্রতিদিন ৪০-৫০টি ঘোড়ার গাড়ি চলাচল করছে। ঢাকার ঐত্যিহের সাথে যেন মিলে মিশে একাকার হযে আছে এই ঘোড়ার গাড়ি। কিন্তু দিনদিন এর হারিয়ে যাওয়া মানতে হৃদয়ে ব্যাথার সৃষ্টি করে ঘোড়ার গাড়ি প্রেমিদের। কোচোয়ান বা গাড়োয়ানদের মনেও প্রায় সময় সঙ্কার সৃষ্টি করে। 

টমটমে চড়া এক যাত্রী বলেন, প্রতিদিন বিভিন্ন কাজে বাহির হতে হয়। আর পুরান ঢাকা তো জ্যাম আর জ্যাম। বাস বা সিএনজিতে উঠে যদি জ্যামে পড়ে থাকি ভেতরে থাকা যায় না। এমনিতেই গরম তারউপর ইঞ্জিনের তাপ। তাছাড়া ঘোড়ার গাড়িতে ১০ টাকা বেশি লাগলেও আরাম আছে। খোলা মেলা পরিবেশ। ঘোড়ার গাড়িতে বসলে নিজেকে রাজা বাদাশাদের মতো লাগে। ঢাকা শহরে আরো বেশি ঘোড়ার গাড়ি নামানো উচিত। 

আরেক যাত্রী বলেন, ঘুরতে বের হলে ঘোড়ার গাড়ির বিকল্প নেই বিশেষ করে পুরান ঢাকায়। একদিকে ঘুরা ও হলো আবার শখও মিটে গেলো। ঘোড়ার ঠকঠক করে চলার শব্দ আমার কাছে দারুণ লাগে। তবে নতুন প্রজন্মের গাছে ঘোড়ার গাড়ির ঐতিহ্যও তুলে ধরার সুযোগ এট।
 
রাজধানীর গুলিস্তানে ঘোড়ার গাড়ি চালানোর এক গাড়োয়ানের সাথে কথা হলে তিনি জানান, প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তিনি এ টমটম চালান। উত্তরাধিকার সূত্রেই তিনি গাড়োয়ান। দিনভর যাত্রী আনা নেয়া করে ১-২ হাজার টাকা আয় করেন বলে জানান তিনি। ঈদ, পূজার সময় বেশি আয় হয় এ গাড়োয়ানের। এক একটি ঘোড়ার গাড়ি তৈরি করতে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা খরচ হয় বলে জানান তিনি। গাড়ির আকার ও ঘোড়ার সংখ্যার উপর নির্ভর করে যাত্রী কতজন উঠানো যাবে। সাধারনত চার চাকা আর দুই ঘোড়া দিয়ে গাড়িতে ৮-১০ জন যাত্রী উঠতে পারেন। আর গাড়ি নিয়ন্ত্রনের জন্য কেচোয়ান বা গাড়োয়ানের সাথে থাকে একজন সহকর্মী। 

কোচোয়ান আরো জানান, বর্তমানে এই টমটম(ঘোড়ার গাড়ি) কমে যাচ্ছে। বাংলার এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সবাইকেই এগিয়ে আসতে হবে। আস্তে আস্তে হারিয়ে যাওয়ার পথে এই গাড়ি। এই ঐতিহ্য টি হারিয়ে গেলে তাদের উর্পাজনের পথটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে। অনেক কোচোয়ান এখন এই ব্যবসায় ছেড়ে অন্যদিকে চলে গেছে বলেও তিনি জানান।

আমারসংবাদ/জেআই