Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

চাঁদপুর-গোপালগঞ্জ-ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থী করোনাক্রান্ত, ক্লাস স্থগিত

আমার সংবাদ ডেস্ক

সেপ্টেম্বর ২৩, ২০২১, ০৩:৫০ পিএম


চাঁদপুর-গোপালগঞ্জ-ঠাকুরগাঁওয়ে শিক্ষার্থী করোনাক্রান্ত, ক্লাস স্থগিত

চাঁদপুর, গোপালগঞ্জ ও ঠাকুরগাঁওয়ে বেশ কয়েকজন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। এ ঘটনায় ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নির্ধারিত শ্রেণিকক্ষে পাঠদান স্থগিত করা হয়েছে।

এর মধ্যে চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার হাসিমপুরে ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্ত হয়েছে। 

কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান চিকিৎসক ও উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. সালেহউদ্দীন আহমেদ জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের ৫০ শিক্ষার্থীর নমুনা সংগ্রহ করা হয়। বুধবার তিন জনের করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে।

এ ব্যাপারে ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মো. শহীদুল ইসলাম জানান, বুধবার তিন শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের রিপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথেই তাদের অভিভাবকদের কলেজে ডেকে এনে করোনা শনাক্ত হওয়ার বিষয়টি জানানো হয়। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী করোনা শনাক্ত তিন শিক্ষার্থীকে হোম আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, কলেজ ছাত্রীবাসে থাকতে ইচ্ছুক এমন ৫০ জন শিক্ষার্থীর করোনা পরীক্ষা করা হয়েছে। ৪৭ জনের রিপোর্ট নিগেটিভ এসেছে এবং তিন শিক্ষার্থীর রিপোর্ট পজিটিভ পাওয়া গেছে। এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোন কারণ নেই। আমরা প্রতিদিন শিক্ষার্থীদের তাপমাত্রা মেপে কলেজে প্রবেশ করাই। কারও তাপমাত্রা একটু বেশি হলেই আমরা করোনা পরীক্ষার ব্যবস্থা নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ক্লাস পরিচালনা করছি।

এদিকে গোপালগঞ্জের দুটি আলাদা স্কুলের দুজন ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গেছে। বুধবার বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মোনালীসার করোনা পরীক্ষার ফল পজেটিভ আসে। এর আগে ১৭ সেপ্টেম্বর করোনা আক্রান্ত হয় জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার ৪ নম্বর ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তানিয়া খানম।

দুই শিক্ষার্থীর করোনা শনাক্তের খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যালয় দুটির শ্রেণিকক্ষ তালাবন্ধ করে দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। তবে উপজেলা প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ দাবি করে- বাড়ি বা অন্য কোনো স্থান থেকে ওই দুই ছাত্রী করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে।

বীণাপানি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পারভীন আক্তার জানান, ১২ সেপ্টেম্বর বিদ্যালয় খোলার পর নিয়মিত ক্লাস করছিল পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী মোনালীসা। ১৪ সেপ্টেম্বর তার মাথা ব্যাথা ও জ্বর শুরু হয়। এরপর থেকে সে আর বিদ্যালয়ে আসেনি। ২১ সেপ্টেম্বর করোনা পরীক্ষা করা হয়। ২২ সেপ্টেম্বর মোনালীসার করোনা পজেটিভ আসে।

কোটালীপাড়ার ৪ নম্বর ফেরধারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী তিনা খানম ১২ সেপ্টেম্বর থেকে স্কুলে আসে এবং নিয়মিত ক্লাসে করতে থাকে। ১৩ সেপ্টেম্বর তিনা জ্বরে আক্রান্ত হয়। পরে ১৬ সেপ্টেম্বর তার নমুনা পরীক্ষা করানো হয়। ১৭ সেপ্টেম্বর পরীক্ষার ফলাফলে জানা যায় তিনার করোনা পজেটিভ। এরপর থেকে তাকে নিজ বাড়িতে মায়ের সঙ্গে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। বাড়িতেই তার চিকিৎসা চলছে।

কোটালীপাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা শংকর কুমার বিশ্বাস বলেন, এক শিক্ষার্থী করোনায় আক্রান্ত হয়েছে জানতে পেরে স্কুলে গিয়ে ওই শিক্ষার্থীর খোঁজ খবর নিই। পরে তাকে বিভিন্ন ধরনের ফল ও খাবার দিয়ে হোম কোয়ারেন্টাইনের ব্যবস্থা করি। তৃতীয় শ্রেণির ওই কক্ষটি ১৪ দিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে স্কুল বন্ধ করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।

অন্যদিকে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বাহাদুরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির ৫ জন শিক্ষার্থী করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোছা. ফারহানা পারভীন জানান, গত ২০ সেপ্টেম্বর ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চতুর্থ শ্রেণির ২ জন ও পঞ্চম শ্রেণির ৩ জন ছাত্রীর করোনা ভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা প্রদান করা হলে মঙ্গলবার নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে।  

শিক্ষার্থীদের বয়স ১০ থেকে ১২ বছরের মধ্যে এবং এই ৫ জনই ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবারের (বালিকা) সদস্য। 

প্রধান শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪২৬ জন। এর মধ্যে চতুর্থ শ্রেণিতে ৮৪ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৭৬ জন রয়েছে।

তিনি জানান, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই শিক্ষার্থীরা ক্লাস উপস্থিত থেকে ক্লাস করেছে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাদের নমুনা করোনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।

ঠাকুরগাঁও সরকারি শিশু পরিবার বালিকার উপ-তত্ত্বাবধায়ক মোছা. রিক্তা বানু বলেন, গত ১৬ সেপ্টেম্বর শহরের হাজীপাড়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ুয়া এক জন শিক্ষার্থী সর্দি-জ্বরে আক্রান্ত হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে আরও ওই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থীর সর্দি-জ্বর দেখা যায়।  

সোমবার থেকে বুধবার পর্যন্ত শিশু পরিবার কর্তৃপক্ষ ২৫ জন শিক্ষার্থীর নমুনা পরীক্ষার জন্য ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠায়। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষার্থী ও মাধ্যমিকের ৮ জন শিক্ষার্থীর করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ১৩ জন শিক্ষার্থীকে আলাদাভাবে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার রকিবুল আলম বলেন, সরকারি শিশু পরিবার (বালিকা)র ১৩ জন শিক্ষার্থী করোনা আক্রান্ত হওয়ায় তাদেরকে আইসোলেশনে রেখে চিকিৎসার পাশাপাশি তাদের শারীরিক অবস্থা পর্যক্ষেণ করা হচ্ছে।

করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছে মানিকগঞ্জ এসকে সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির মেধাবী ছাত্রী সুবর্ণা ইসলাম রোদেলা। বুধবার সন্ধ্যায় মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায় সে। 

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ আব্দুল লতিফ বলেন, মেয়েটি গত ১৫ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ স্কুলে গিয়েছিল। তখন তার শরীরে কোনো সমস্যা ছিল না। গত তিন দিন ধরে তার জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। শনিবার দুপুরে তাকে মুন্নু হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং সেখান থেকে ঢাকায় নেওয়ার পথে সে মারা যায়।

তিনি আরও জানান, যেহেতু ওই স্কুল ছাত্রীর পরিবার সরকারি কোনো হাসপাতালে করোনা পরীক্ষা করাননি। এমনকি করোনা রেজাল্ট পজিটিভ আসেনি তাই এটা করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বলে তিনি অভিহিত করেন।

এর আগে ওই বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী করোনা পজিটিভ হওয়ায় ওই শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছিল। পরে তার ৫৮ সহপাঠীকে করোনা পরীক্ষা করা হয়। তবে  কারও দেহে করোনা শনাক্ত না হওয়ায় এবং আক্রান্ত শিক্ষার্থী সুস্থ হওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে ওই শ্রেণির পাঠদান চালু করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

এছাড়া বাগেরহাটের মোংলা উচ্চবালিকা বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ায় সেখানকার সব শিক্ষক-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা করতে বলেছে স্থানীয় প্রশাসন।

বৃহস্পতিবার স্কুল পরিদর্শন করে মোংলার ইউএনও কমলেশ মজুমদার বলেন, কয়েক দিন আগে বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষকের স্ত্রীর করোনাভাইরাসের উপসর্গ দেখা দেয়। তিনি একটি সরকারি হাসপাতালের নার্স।

মঙ্গলবার র‌্যাপিড এন্টিজেন পরীক্ষায় তার করোনাভাইরাস শনাক্ত হয় জানিয়ে ইউএনও বলেন, সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষকের পরীক্ষা করালে তারও পজিটিভ আসে। এরপর থেকে তারা হোম কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন। স্কুল পরিদর্শন করেছি। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ওই শিক্ষক স্কুলে আসায় সংক্রমণ ঝুঁকি এড়াতে স্কুলের শিক্ষক-কর্মচারী ও আড়াই শতাধিক শিক্ষার্থীর সবার পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে কারও উপসর্গ দেখা দিলে তাকে স্কুলে না আসতে বলা হয়েছে। তাছাড়া কর্তৃপক্ষকে স্কুল চলাকালে কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

প্রসঙ্গত, করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘ দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত ১২ সেপ্টেম্বর থেকে দেশব‌্যাপী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়া হয়েছে।

আমারসংবাদ/জেআই