Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ঘুষ দিতে না পারায় নাম আসেনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়!

মিরাজ আহমেদ মাগুরা প্রতিনিধি:

অক্টোবর ২৮, ২০২১, ০১:৩৫ পিএম


ঘুষ দিতে না পারায় নাম আসেনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়!

দশ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পারায় নাম আসেনি আজও মুক্তিযোদ্ধা তালিকায়' যার কারনে বীর মুক্তিযোদ্ধার জীবন চলে ফুটপাতে চা বিক্রি করে, এমন অভিযোগ তুলেছেন মাগুরার বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী। 

সাংবাদিকের এক সাক্ষাৎ কারে তিনি বলেন, আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমার সমস্ত বৈধ কাগজপত্র আছে। তারপর ও বার বার ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে আমাকে ,তাদের কথা একটাই টাকা নিয়ে আসেন,নাম তুলে দিবো তালিকায় । আর ১৯৭২ সাল থেকে আজ পযন্ত পারিনি দশ হাজার  টাকা যোগাড় করতে। তাই নাম ও উঠে নি আজ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়। তাহলে কি ঘুষের টাকা ছাড়া উঠবেনা তার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায়..! এমন অভিযোগ তুলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, তার কাছে চা খেতে আসা মানুষদের কাছে বলতে থাকেন অধিকাংশ সময় । 

বুধবার (২৭ অক্টোবর) দুপুরে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমি একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমার সমস্ত বৈধ কাগজপত্র আছে।

তিনি আরো বলেন, আমি মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলার আকবর বাহিনীর সদস্য ছিলাম। দীর্ঘ নয় মাস দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। কিন্তুু আমার কপাল খারাপ যখনি আমি আমার বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত হতে যাই আমার কাছে টাকা চায়,আপনারা বলেন, আমি ফুটপাতে চা বিক্রি করে সংসার চালাই। আমি দশ হাজার টাকা কোথায় পাবো,টাকা দিতে পারিনি বলে এবারো আমার নাম উঠেনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন, আর বলতে থাকেন কত কষ্ট করে দেশের জন্য যুদ্ধ করলাম! এখন দশ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পাড়ায় নাম উঠে না আমার। এ কষ্টের কথা আমি কার কাছে বলবো। 

এই বিষয়ে কেন্দ্র করে বিশেষ এক সাক্ষাৎ কারে, মেজর জেনারেল (অবঃ) এটিএম আব্দুল ওয়াহাব ৮নং সাব-সেক্টর কমান্ডার,এবং মাগুরা জেলার সাবেক সংসদ সদস্য,জানিয়েছেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আমার সাথে ৮নং সাব  সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দ্বায়িত্ব নিয়োজিত থাকা কালীন সময়ে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী পিং খোরশেদ আলী তিনি আমার বাহিনীর সহিত স্বাধীনতা বিরোধী শএুদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রনাঙ্গনে সক্রিয়ভাবে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন। দেশ স্বাধীন হবার পর তাহার ব্যবহারকৃত অস্ত্র মাগুরা মিলিশিয়া ক্যাম্পে জমা দেন, তাহার মিলিশিয়া সনদ ক্রমিক নম্বর ১৩৫৮১ এবং  রের্কড নাম্বার ১০০৬৩৪,অদ্যবদি তিনি মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত হইতে পারে নাই,যা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্য মানষিক বিড়ম্বনা। 

জেলা পরিষদের কার্যালয় প্রত্যায়ন পত্রে দেখা যায়, এ্যাড, সৈয়দ শরিফুল ইসলাম প্রশাসক জেলা পরিষদ মাগুরা তিনি বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর প্রত্যায়ন পএে উল্লেখ করেন, মিলিশিয়া সনদ নং ১৩৫৮১ এবং দাবীদার তালিকা নম্বর ২৫৫ তিনি একজন প্রকৃত মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে সর্বপ্রকার সাহায্য সহযোগিতা পাওয়ার যোগ্য বলে উল্লেখ করেন। 

সরেজমিনে, বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর, দেশরক্ষা বিভাগ কতৃক স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী ৮নাম্বার সেক্টরে স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেছেন,মর্মে দেশরক্ষা বিভাগ কতৃক স্বাধীনতা সংগ্রামের সনদপত্রে সহি করেছেন গত ২৪.০২.৭২ সালে, বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী অধিনায়ক বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী। 

শ্রীপুর উপজেলা ভিত্তিক মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ফর্ম পূরন করেন, ১০, ১১, ২০১৬ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী (ক হতে ঝ) পর্যন্ত।তিনি  মুক্তি যোদ্ধা সংক্রান্ত তথ্য ফর্মে অনলাইনে আবেদন করেন,আবেদনের জি,ডি, নং DGI132500 আবেদনের তাং ২৭,০৩,২০১৪,বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর সনদ প্রএে মুক্তি যোদ্ধা হিসেবে সনদ পএ প্রদান করেন, আলহাজ্ব আকবর হোসেন মিয়া, মাগুরা জেলার শ্রীপুর বাহিনীর অধিনায়ক, শ্রীপুর বাহিনী ৮নং সেক্টর যশোর, শ্রীপুর মাগুরা। 

সব কাগজ ঠিক থাকলেও সামান্য দশ হাজার টাকা ঘুষ দিতে না পাড়ায় নাম উঠে নি মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় এই মুক্তি যোদ্ধা আকবর আলীর...! 

তবে এ ব্যাপারে মাগুরা জেলা প্রাশাসক মোঃ আফাজ উদ্দিন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) জানান, মুক্তিযোদ্ধা তালিকা জুমাকা কতৃক যাচাই-বাছাই এর সুযোগ রয়েছে। তালিকা ভুক্ত হইতে হলে নিজ উপজেলায়, নির্বাহী কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে জামুকা নিয়ম অনুযায়ী প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো উপস্থাপন করতে হবে, ইতিমধ্যে জামুকা কতৃক যাচাই-বাছাই বিষয় মাগুরা চার উপজেলা পরিষদে কাজের দ্বায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করতে সক্ষম হয়েছেন। 

বৃহস্পতিবার ২৮ অক্টোবর দুপুরে মাগুরা শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিউজা-উল-জান্নাহ এর মুঠোফোন সাক্ষাৎ কারলে তিনি বলেন, আমি গতকাল  জামুকা কতৃক বীর মুক্তিযোদ্ধা তালিকা ভুক্ত সবাইকে যাচাই-বাছাই এর মাধ্যমে হেড অফিসে পাঠিয়েছি, আমাদের পাঠানো তালিকায় ২৬৫ জন মুক্তি যোদ্ধার নাম দেয়া হয়েছে দেখতে হবে তাদের মধ্যে বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলীর নাম আছে কি না। এ বিষয়ে যদি কেউ সুনির্দিষ্টভাবে আমার কাছে অভিযোগ দায়ের করে তাহলে বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া আমরা যাচাই-বাছাইয়ের যে তালিকা জামুকা বা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি তার বিষয়ে নতুন করে কোনো নির্দেশনা এলে আমরা সে মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

আমারসংবাদ/ইএফ