নিজস্ব প্রতিনিধি
জানুয়ারি ১৮, ২০২১, ০৭:৫০ এএম
নির্বাচন নিয়ে নানা অভিযোগের মধ্যেও আঁটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। দলের সব পর্যায়ের নেতাকর্মীরা তার পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। সুষ্ঠু ভোট হলে চট্টগ্রামের নগর পিতার দায়িত্ব ধানের শীষের প্রার্থীই পাবেন বলে আশা করেছেন ডা. শাহাদাত। বললেন, নির্বাচিত হলে চট্টগ্রামকে স্মার্ট ও পরিচ্ছন্ন নগর হিসেবে গড়ে তুলবেন।
আগামী ২৭ জানুয়ারি ইভিএমে ভোট হবে চট্টগ্রামে। ভোট সামনে রেখে দৈনিক আমার সংবাদকে দেয়া সাক্ষাৎকারে নির্বাচনের পরিবেশ, দলের সাংগঠনিক পরিস্থিতি, নগরের উন্নয়নে প্রতিশ্রুতি ও চট্টগ্রাম মহানগর নিয়ে নিজের ভাবনা তুলে ধরেছেন চসিক নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত মেয়র প্রার্থী ডা. শাহাদাত হোসেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন চট্টগ্রামের ব্যুরো এএইচএম কাউসার ও স্টাফ রিপোর্টার মোহাম্মদ আলী।
নির্বাচনী পরিবেশ কেমন দেখছেন? আর প্রচারে জনগণের সাড়া কেমন-
ডা. শাহাদাত হোসেন: গত এক যুগে নানা প্রতিকূলতার পরও বিএনপি ঐক্যবদ্ধ আছে। আর নির্বাচনকে ঘিরে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপিও শতভাগ ঐক্যবদ্ধ। ভোটাধিকার প্রয়োগের দায়িত্ব জনগণের। তারা এগিয়ে আসবেন বলে আশা করি। সুন্দর নগরী গড়ে তোলার জন্য নির্বাচনে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে এগিয়ে এলে ধানের শীষের বিজয় সুনিশ্চিত। এখন পর্যন্ত ভালো সাড়া পাচ্ছি। সামনে তা আরও বাড়বে বলে আশা করি।
নির্বাচন কমিশনের একের পর এক বিতর্কিত ভূমিকার কারণে জনগণের পাশাপাশি বিএনপিও এত দিন হতাশ ছিল। কিন্তু এখন আর হতাশ হয়ে থাকতে চায় না। জনগণকে সঙ্গে নিয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ন্যায় প্রতিষ্ঠা করতে চায়। জনগণ ঐক্যবদ্ধ হলে বিএনপি সঙ্গে থেকে সব অন্যায়ের সমুচিত জবাব দিতে চায়। আর এ জবাব হবে সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক পদ্ধতিতে।
ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গায় বিপুল ভোটে বিএনপির প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। চট্টগ্রাম নিয়ে কী আশা করছেন?
ডা. শাহাদাত হোসেন: ঢাকা সিটিতে ৬০ লাখ ভোটারের মধ্যে মাত্র ২০ ভাগ লোক ভোটকেন্দ্রে গেছে। ভোট নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যে দুই মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, তারা ৮০ ভাগ লোকের মেয়র হতে পারেননি। এ ধরনের ভোটে বিজয়ী মেয়রের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতাও থাকে না। এ জন্য দায়ী ইসি ও সরকার। এটা যেন চট্টগ্রামে না হয়; উৎসবমুখর ভোটের পরিবেশ চাই।
নির্বাচনের মাঠে শেষ পর্যন্ত থাকার ঘোষণা দিয়েও ঢাকা সিটি নির্বাচনে ভোটের দিন নেতাকর্মীরা ছিলেন না। চট্টগ্রামে এমনটা হবে না তো-
ডা. শাহাদাত হোসেন: আসলে ক্ষমতাসীনদের নানা চাপে নেতাকর্মীরা থাকতে পারেননি। তবে চট্টগ্রাম নির্বাচনে এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি এখন কোন্দলমুক্ত ও শক্তিশালী। এখানে কে মনোনয়ন পেল, কে পেল না তা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ নেই। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপি অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ঐক্যবদ্ধ। তাই নির্বাচনে সবাই জোটবদ্ধভাবে কাজ করছে। আর শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের মাঠে থেকে বিজয় নিশ্চিত করে ঘরে ফেরার শপথ নিয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করেন?
ডা. শাহাদাত হোসেন: যে নির্বাচনগুলো দেশ-বিদেশে বিতর্কিত হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না ঘটে। গণমুখী, ভোটারদের উপস্থিতিতে উৎসবমুখর নির্বাচন যেন হয়। এটা চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। ভোটারদের নিরাপত্তা দিতে হবে। গোটা নির্বাচনকে যারা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের নিরপেক্ষ হতেই হবে। এসব কাজ নির্বাচন কমিশনকে করতে হবে। প্রতিটি দলের পোলিং এজেন্ট যাতে কেন্দ্রে থাকতে পারে, তাদের যেন কেউ বের করে দেওয়া না হয়, সেই সুরক্ষা দেওয়ার দায়িত্বও নির্বাচন কমিশনের। এসব বিষয় নিশ্চিত করতে পারলে, যেকোনো ধরনের কারচুপি বন্ধ করতে পারলে বিএনপির পক্ষে ইতিবাচক প্রভাবই পড়বে।
নির্বাচন নিয়ে সব সময়ই ভোটারদের মাঝে নানা শঙ্কা থাকে-
ডা. শাহাদাত হোসেন: চট্টগ্রাম মহানগরবাসীকে বলব, আপনারা নির্বিঘ্নে নিশ্চিন্তে ভোটকেন্দ্রে যাবেন। বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোটারদের সব ধরনের সহযোগিতা দেবে। সব বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিলে এবং মোটামুটি সুষ্ঠু ভোট হলে ধানের শীষ বিপুল ভোটে বিজয়ী হবে।
ইভিএমে ভোটে মানুষ ধীরে ধীরে পরিচিত হয়ে উঠছে। ঢাকা সিটিতে ইভিএমে ভোট হয়েছে। আপনাদের সিটিতেও হবে-
ডা. শাহাদাত হোসেন: বিএনপি নির্বাচনের কোনো পদ্ধতিরই বিরোধী নয়। শুধু কারচুপির নির্বাচনের বিরুদ্ধে। এ মেশিনের মাধ্যমে কারচুপি করবে ক্ষমতাসীনরা, এ জন্য বিএনপি বিরোধিতা করেছে। কারণ ইভিএমের কারিগরি বিষয়ে নানা ত্রুটি রয়েছে। এখানে ব্যালট প্যানেলের কোনো সুরক্ষা থাকে না। এটা ইসিকে দিতে হবে। বুথের ভেতরে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতি থাকতে হবে। ইভিএমে যেহেতু রেকর্ডিং সিস্টেম নেই, সে জন্য ভিভিপ্যাডের সংযোজন করতে হবে। ইভিএমের ব্যালট প্যানেলকে সুরক্ষা দিতে হবে। প্রিজাইডিং অফিসারের ভোটের হার ৫ ভাগ না রেখে ১ ভাগ রাখা যেতে পারে। তাদের এখতিয়ারে ১ ভাগ রাখতে হবে। আগে থেকে বুথের মধ্যে নৌকার ক্যাডাররা উপস্থিত থাকবে, ভোটাররা নিজেদের পছন্দমতো ভোট দিতে পারবেন না- সেটা হবে না।
বিজয়ী হলে নগরবাসীর জন্য কী করতে চান?
ডা. শাহাদাত হোসেন: বিগত সময়ে যারা মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন, তারা জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারেনি। আমি প্রত্যাশা পূরণ করতে চাই। চট্টগ্রাম আজ নানা সমস্যায় জর্জরিত। এখানে জলাবদ্ধতা লেগেই আছে। যানজট আগের চেয়ে বহুগুণে বেড়েছে। এ সবের জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সবাইকে নিয়ে বাস্তবায়ন। নগরবাসী আমাকে সুযোগ দিলে চট্টগ্রাম মহানগরকে একটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ব। এই শহর হবে পরিবেশবান্ধব, স্মার্ট ও হেলদি।
আমারসংবাদ/কেএস