Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ইইউবি ক্যাম্পাস

যুবায়ের আহমাদ, ইইউবি

অক্টোবর ২৯, ২০২১, ১১:৩৫ এএম


শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত ইইউবি ক্যাম্পাস

করোনা পরিস্থিতির কারণে গত বছরের ১৭ মার্চ দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার পর ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি) সশরীরে ক্লাস শুরু হয়েছে।

ক্লাসে ফেরা শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে আবারও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। অনেকদিন পর উৎসবের আমেজে মেতেছে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার দিনটিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে সাজানো হয়েছে বর্ণিল সাজে।

শিক্ষকদের আন্তরিক সহযোগিতায় পড়ালেখায় করোনার ক্ষতি পুষিয়ে স্বাভাবিক শিক্ষাজীবনে ফেরার প্রত্যাশা করছেন শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘ বিরতির পর শ্রেণিকক্ষে ফিরতে পেরে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা। ক্লাসে ফিরে প্রিয় সহপাঠী ও বন্ধুদের পেয়ে অনেকেই আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার, ক্যাফেটেরিয়া এখন শুধুই শিক্ষার্থীদের পদচারনায় মুখরিত। শিক্ষার্থীদের কলরবে প্রাণ ফিরেছে ক্যাম্পাসে। শিক্ষার্থীদের স্বাগতের অংশ হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত ক্যাফেটেরিয়ার উদ্ভোধন করা হয়েছে।

দীর্ঘ বিরতির পর ক্লাসে ফেরার অনুভূতি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী এস এম নুরনবী বলেন, এতো দিন পর মনে হচ্ছে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। আমাদের বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীদের লাগে হাতে কলমে শিক্ষা যা এতো দিন অনলাইন ক্লাসে সম্ভব হয় নি। দীর্ঘসময় পর প্রিয় শিক্ষক ও বন্ধুদের নিয়ে ক্লাসে ফিরতে পেরে আমরা আনন্দিত। ক্যাম্পাসে আবারও গল্প-আড্ডা জমবে ভাবতেই ভালো লাগছে।  

সিভিল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী রাহুল হাসনাইন বলেন, দীর্ঘ বিরতির পর বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাসে ফিরে প্রাণ ফিরে পেলাম বলে মনে হচ্ছে। আবারও চিরচেনা প্রাণবন্ত ক্যাম্পাসে আসতে পেরে খুবই আনন্দিত। এ আনন্দ-অনুভূতি সত্যিই বলে প্রকাশ করার মতো নয়।

ক্যাম্পাসে অস্থায়ী করোনা ভ্যাকসিন বুথ স্থাপনের দাবী জানিয়ে ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী অহিদুল ইসলাম অন্তর বলেন, দীর্ঘদিন পর সশরীরে ক্লাস করতে পেরে আমরা আনন্দিত। সশরীরে ক্লাসের বিকল্প হতে পারে না। করোনার এই নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রাখতে সকল শিক্ষার্থীদের করোনা ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী করোনা ভ্যাকসিন বুথ স্থাপনের দাবী জানাই।

ক্লাসে ফেরার অনুভূতি জিজ্ঞেস করতেই আবেগের ঝাঁপি খুলে দেন ইইই বিভাগের শিক্ষার্থী সিনথিয়া আহমেদ। বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন পর ক্যাম্পাসে ফেরার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করে বুঝানোর মতো নয়। অনার্সের শেষ পর্যায়ে চলে এলেও ক্যাম্পাসে ফিরে প্রাণভরে শ্বাস নেওয়ার স্বাদই অন্যরকম।

সিএসই’র অনলাইনে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী শিশির পল্লল বলেন, আমরা করোনার সময়ে ভর্তি হয়েছি। অনলাইনেই ক্লাস করেছি। ক্লাস শুরুর পর আমাদেরকে ফুল ও চকলেট দিয়ে বরণ করা হয়েছে। ক্যাম্পাসকে সাজানো হয়েছে। এতে আমরা খুবই আনন্দিত।

টেক্সটাইল চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শামীম আহমেদ বলেন, অনলাইন ক্লাসে অনেক শিক্ষার্থীই বেশকিছু সমস্যার মুখোমুখি হয়েছে। এখন আর সেসব সমস্যা হবে না। তাছাড়া দীর্ঘদিন পর ক্লাসে ফিরতে পেরে, সবার সাথে পুনরায় দেখার হওয়ার পর বেশ ভালো লাগছে।

সিভিল বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী সামি আহমেদ মেহেদি বলেন, দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্পাসে ফিরতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত। আগের মত সব রকমের কার্যক্রমের সাথে জড়িত হতে পারবো ভেবেই অনেক ভালো লাগছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রিক্যাল ও ইলেকট্রনিক্স বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ হযরত আলী বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর আমরা শিক্ষার্থীদের ক্লাসরুমে পাইনি। তবে অনলাইনে আমাদের শ্রেণি কার্যক্রম চালু ছিল। কিন্তু ক্লাসের যে আনন্দ-উল্লাস এতদিন মিস করছিলাম, তা আবারও ফিরে পেলাম। 

সশরীরে ক্লাস শেষে কম্পিউটার সায়েন্স ও ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চেয়ারম্যান মোঃ ওবায়দুর রহমান বলেন, শিক্ষকতা জীবনে শিক্ষার্থীদের সান্নিধ্য ভালো লাগার একটি বিষয়। যেটি অনলাইনে পাওয়া সম্ভব হয় না। আমার মনে হয়, আমার মতো অন্য শিক্ষকরাও সশরীরে ক্লাস শুরু হওয়ায় আনন্দিত।

সিভিল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মোঃ আবুল কালাম আজাদ বলেন, করোনায় লেখাপড়ায় যা ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য আমাদের প্ল্যান রয়েছে। আমরা চাইছি শিক্ষার্থীদের যে সময়টুকু নষ্ট হয়েছে, তা যেন আমরা পুষিয়ে নিতে পারি। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব অফিসার ইউনেস্কো চাকমা বলেন, করোনার এই সময়ে অনলাইনে থিওরি ক্লাস হলেও প্র্যাকটিকাল ক্লাস সম্ভব হয় নি। তাই আমরা যথাসম্ভব প্র্যাকটিকালগুলো পুষিয়ে নিতে চেষ্টা করবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. কাজী বজলুর রহমান বলেন, দীর্ঘ দেড় বছর পর আমরা ক্লাসে ফিরেছি এটা আমাদের জন্য অনেক স্বস্তিদায়ক। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ও সামাজিক দুরুত্ব বজায় রেখে ক্লাস করার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করছি। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্যের কথা মাথায় রেখে দীর্ঘ দিনের বন্ধ থাকা পানের নিরাপদ পানির জন্য ফিল্টার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে।  

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানানো হয়, কোভিড-১৯ প্রতিরোধে অন্তত এক ডোজ টিকা নেওয়ার শর্তে ও সরকার ঘোষিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে নিয়মিত ক্লাস পরিচালিত হবে।

আমারসংবাদ/এআই