Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

মুনিয়ার ডায়েরির হাতের লেখা যাচাই করবে পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

এপ্রিল ২৯, ২০২১, ০১:১০ পিএম


মুনিয়ার ডায়েরির হাতের লেখা যাচাই করবে পুলিশ

গুলশানে মোসারাত জাহান মুনিয়া নামের তরুণীর ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের ঘটনায় জব্দ করা তার ছয়টি ডায়েরির তথ্য ও হাতের লেখা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

এর আগে মুনিয়াকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে মামলা হয় বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান আনভীরের বিরুদ্ধে। মামলা তদন্তে বিভিন্ন আলামত বিশ্লেষণ করছে পুলিশ।

তরুণীর ব্যবহৃত দুটি স্মার্টফোন, ছয়টি ডায়েরি, ওই বাসার সিসিটিভি ফুটেজসহ বেশ কিছু আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ। তারা বলছেন, প্রাথমিক আলামতে ঘটনাটি আত্মহত্যা মনে হলেও ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হওয়া যাবে।

তদন্তকারীরা জানান, প্রাথমিক অনুসন্ধানে ওই তরুণীর সঙ্গে আনভীরের সম্পর্কের প্রমাণ পাওয়া গেছে। একইসঙ্গে আনভীরের সঙ্গে ওই তরুণীর বিভিন্ন কথোপথন ও পারিপার্শিকতা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। তরুণীর মৃত্যুর আগে আনভীরের পক্ষ থেকে তাকে কোনো ধরনের চাপ দেয়া হয়েছে কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। পুলিশ বলছে, তরুণীকে চাপ প্রয়োগের যথাযথ প্রমাণ পেলেই আনভীরকে গ্রেপ্তার করা হবে।

সোমবার সন্ধ্যার দিকে গুলশান ২ নম্বরের ১২০ নম্বর সড়কের ফ্ল্যাট থেকে ওই তরুণীর ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়। তার বাড়ি কুমিল্লায়। মেয়েটিকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা দেয়ার অভিযোগে সোমবার রাতেই গুলশান থানায় মামলা করেন তার বোন।

এ মামলার পর মঙ্গলবার সায়েম সোবহান আনভীরের বিদেশে যাত্রায় নিষেধাজ্ঞা দেয় আদালত। তবে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, ওই নিষেধাজ্ঞার আগেই দেশ ছেড়েছেন আনভীর। পুলিশ ও ইমিগ্রেশনের দায়িত্বশীলরা অবশ্য বলছেন, আকাশপথে আনভীরের দেশ ছেড়ার কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তিনি যাতে স্থলসীমান্ত পার হয়ে দেশ ছাড়তে না পারেন সেজন্যও সতর্কতা জারি করা হয়েছে।

বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের কয়েকটি সূত্র বলছে, কার্গো বিমানে যাত্রী যাওয়ার রেকর্ড নেই। কেবল উড়োজাহাজের ক্রুরা এতে যেতে পারেন। ক্রুর বাইরে অন্য কোনো যাত্রী ইমিগ্রেশনকে ম্যানেজ করে কার্গো বিমানে যদি গিয়ে থাকেনও, তাহলেও তিনি অবতরণ করা দেশের ভেতরে ঢুকতে পারবেন না। সেক্ষেত্রে ওই দেশের সরকারের বিশেষ অনুমতি লাগবে।

ইমিগ্রেশনের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার খুরশিদ জাহান বলেন, ‘কার্গো বিমানে শুধু বিমানের ক্রুরা যেতে পারেন, আর কেউ নন। আমরা তার (আনভীর) পাসপোর্ট নম্বর মিলিয়ে দেখেছি, তিনি যান নাই।’

মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট একাধিক কর্মকর্তা জানান, ওই তরুণীর ব্যবহৃত মোবাইল ফোন, ডায়েরি, তার বাসার সিসিটিভি ফুটেজ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত। এর প্রতিটিতেই আনভীরের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। এছাড়া বেশ কিছু কথোপকথনের ফোন রেকর্ড পেয়েছে পুলিশ।

ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়না তদন্তের রিপোর্ট পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। এছাড়া মামলার অভিযোগের বিষয়ে আমাদের তদন্ত চলছে। এতে আনভীরের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।’

ওই তরুণীর ছয়টি ডায়েরি গত বছর ও এ বছরে লেখা। সবশেষ তিনি ডায়েরি লিখেছেন ২৪ এপ্রিল। এরপর বিশেষভাবে চিহ্নিত করা আরও কিছু লেখা রয়েছে। সেগুলো গত ২৬ এপ্রিলের বলে ধারণা করছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।বিশেষভাবে চিহ্নিত ওই লেখাগুলো সরাসরি সুইসাইডাল নোটের মতো না হরেও সেখানে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের’ কথা রয়েছে।

উপকমিশনার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী বলেন, ‘আমরা হ্যান্ডরাইটিং এক্সপার্ট দিয়ে এসব লেখা যাচাই করব। এই ডায়েরিগুলো গুরুত্বপূর্ণ আলামত। এতে তার (ওই তরুণী) সামাজিক স্বীকৃতিসহ নানা টানাপড়েনের কথা রয়েছে।’

আমারসংবাদ/আরএস