Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

আমাদের নিয়ে ভাবুন, রাষ্ট্রের ভাবনা আমাদের

ডিসেম্বর ১৪, ২০১৫, ০৯:১৫ এএম


আমাদের নিয়ে ভাবুন, রাষ্ট্রের ভাবনা আমাদের

সোনার বাংলাদেশকে কিভাবে আরও স্বর্ণালী করা যায় সেই চিন্তা ঘিরেই এদেশের প্রতিটি শিক্ষার্থীর স্বপ্নগুলি নিয়ত আবর্তিত হয়। এদেশের শিক্ষার্থীদের প্রত্যুষে ঘুম ভাঙ্গে দেশকে নিয়ে চোখেমুখে আঁকা বাহারি স্বপ্ন নিয়ে এবং দিনের শেষে ঘুমাতেও যায় দেশের মঙ্গল সর্বাঙ্গীন কামনা করে । আমরা যারা শিক্ষার্থী তারা দেশকে ঘিরে আমাদের স্বপ্ন-পরিকল্পনাগুলিকে বাস্তবায়িত করতে বদ্ধপরিকর । যে কোনমূল্যে দেশকে নিয়ে হৃদয়ে প্রোথিত বাসনাকে বাস্তবতায় রূপ দিতে চাই । ছাপান্ন হাজার বর্গমাইলের সূজল-সূফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশকে স্বতন্ত্র মহিমায় স্বভাস্বর করতে চাই বিশ্ব দরবারে ।


বর্তমানে দেশের প্রায় তিনকোটি শিক্ষার্থী যেমনি করে কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ নিয়ে প্রত্যহ স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় অভিমূখে যাত্রা করে তেমনি এই শিক্ষার্থীরা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হওয়ার পর দেশকে তথা দেশের সম্মানকে বহন করবে পৃথিবীর সর্বত্র । পৃথিবী ছাপিয়ে বাংলাদেশের নামের বর্ণগুলি জ্বল জ্বল করবে মঙ্গলগ্রহে । বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর সাথে সমানতালে প্রতিযোগীতা করবো আমরা, আমাদের দেশ । আমাদের অবদানে পুষ্ট এক পরিণত বাংলাদেশের সোনালী ইতিহাস বিশ্ববাসী অধ্যয়ণ করবে গভীর বিস্ময়চোখে ।

এদেশ আমাদের জন্ম দিয়েছে, এদেশের প্রকৃতি আমাদের লালন পালন করেছে, আলো-বাতাস গ্রহনের সুযোগ দিয়ে হৃষ্টপুষ্ট করেছে । কাজেই বাংলাদেশের কাছে আমরা চিরঋণী । দেশের ঋণ শুধু ভাষার ব্যঞ্জনে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেই শেষ করা যাবে না বরং দেশের জন্য নিজেদেরকে উৎসর্গ করতে হবে । এদেশের জন্য যেমনটা করেছিল ভাষা শহীদেরা, মুক্তিকামীরা তেমনিভাবেই ভবিষ্যতে দেশগঠনে আমরা প্রত্যেক শিক্ষার্থীরাই দৃঢ় প্রতিজ্ঞ কিন্তু আমাদেরকে দক্ষ করে গড়ে তোলার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ।

রাষ্ট্রের অগ্রগতি-উন্নতিতে আমরা ভূমিকা রাখতে চাইলেই হবে না কেননা এজন্য চাই যথার্থ শিক্ষা এবং উন্নত প্রশিক্ষণ ।আর কিছুদিন পরেই আমরা রাষ্ট্রের হাল ধরব কিন্তু কান্ডারীর ভূমিকায় আমাদের হাত যদি প্রকম্পিত হয় তবে দেশের ভবিষ্যতও অনিশ্চতার নিকষ কালো অন্ধকারে ছেয়ে যাবে । কাজেই আমাদের যদি যথাযথ ব্যবস্থায় রাষ্ট্র গড়ে তুলতে পারে তবে আমাদের কাঁধে দেশ কখনো পথ হারাবে না; আমাদের তথা দেশের গন্তব্য তার অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছবেই ।

শিক্ষার্থী হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে আমাদের কিছু দাবী আছে; এগুলো দাবী নয় বরং আমাদের প্রাপ্য অধিকার । আবার রাষ্ট্রের আমাদের জন্য অনেক কিছু করণীয় রয়েছে । উভয়ের যৌথ দেনা-পাওনা যখন শোধ হবে তখন আমরা হব এ দেশের দক্ষ জনশক্তি । তখন রাষ্ট্রের উন্নয়ণে ইস্পাত কঠিন হবে আমাদের মনোবল, আমাদের দৃঢ়তা সকল অক্ষমতাকে দূর করবে আমাদের নাগাল থেকে । শিক্ষার্থী হিসেবে রাষ্ট্রের কাছে আমাদের যতগুলো চাওয়া তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে, শিশু শিক্ষার প্রতি অধিক মনযোগী হতে হবে ।

শিশু বয়সেই অসংখ্য বইয়ের চাপে শিশুর মননে শিক্ষার প্রতি বিরাগ তৈরি না হয় । নিরস পাঠের বিষয়গুলো থেকে শিশুদেরকে মুক্তি দিয়ে সরস পাঠ্যকে শিশুর জন্য নির্ধারণ করতে হবে । যে ছড়া-কবিতাগুলোকে শিশুদের পাঠ্যক্রমের অন্তভূর্ক্ত করা হয় সেগুলো যেন অবশ্যই মজা এবং আনন্দ প্রদানের উপযোগী এবং নৈতিক শিক্ষা গঠনের সহায়ক হয় । গতানুগতিক তথা সনদ অর্জন কেন্দ্রিক শিক্ষার চেয়ে উৎপাদনমূখী শিক্ষার প্রতি গুরুত্বারোপ করতে হবে । এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে অভিভাবক মহলকে । উন্নত পর্যবেক্ষনের মাধ্যমে রাষ্ট্রকেই নির্ধারণ করতে হবে কোন শিক্ষার্থী কি বিষয়ে পাঠের যোগ্য ।

শিক্ষাক্ষেত্রে বর্তমান সময়ে অমানিষার বিম্বাশা ছড়াচ্ছে । পরীক্ষার পূর্বে প্রশ্নফাঁস নামক ব্যধি পড়ুয়া-অপড়ুয়া শিক্ষার্থীদের এক কাতারবদ্ধ করছে । পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁস হলে শিক্ষার্থীরা কার্যত পঙ্গু জাতি হয়ে তাদের শিক্ষা জীবন শেষ করবে । ফাঁস হওয়া প্রশ্নপত্রের পিছনে শিক্ষার্থীদের যারা ছুটছে তাদেরকে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে দ্ষো দেয়ার নৈতিক অধিকার তখন হারিয়েছি যখন বারবার প্রতিশ্রুত হয়েও রাষ্ট্র প্রশ্নফাঁস বন্ধে কার্যত সফল কোন ভূমিকা দেখাতে পারছেনা ।

সর্বশেষ এমবিবিএস ও বিডিএস পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার নামে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে তাতে যদি রাষ্ট্রকে নিয়ে আমাদের স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয় তবে সে ব্যর্থতা একান্তই রাষ্ট্রের । চাকরির ক্ষেত্রে ৫৬ ভাগ সংরক্ষিত কোটা যদি বহাল রাখা হয় তবে মেধাবীদের সেবা থেকে রাষ্ট্র বঞ্চিত হবে । চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি দূর না হলে রাষ্ট্রের অগ্রগতি তো দূরের কথা বরং পশ্চাদমূখী হবে ।

ছাত্ররাজনীতির সাথে জড়িত নেতা-কর্মীদেরকে যদি রাষ্ট্রের জাতীয় স্বার্থের বীপরিতে কেউ ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার-অপব্যবহার করে তবে শিক্ষার্থীরা তাদের সঠিক গন্তব্য থেকে বিচ্যুত হবে । এবার সিদ্ধান্ত নেয়ার পালা রাষ্ট্রের । রাষ্ট্র যদি আমাদের শিক্ষার্থীদের কল্যানকামীতা নিয়ে ভাবে তবে আমরা এ রাষ্ট্রকে উন্নতির উচ্চ শিখরে পৌঁছে দিতে আমাদের সমগ্র সামর্থ বিনিয়োগ করবো । আর যদি এর ব্যতিক্রম কিছু ঘটে তবে তৎপরবর্তী সকল দায়ভার দেশ ও দেশের বর্তমান নীতিনির্ধারকদের কাঁখেই বর্তাবে ।