Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ঋণ খেলাপি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে

ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৬, ০৮:৩০ এএম


ঋণ খেলাপি টাকা আদায়ের উদ্যোগ নিতে হবে

সভ্যতার আর একটি অবদান ব্যাংকি সিস্টেম। ব্যাংকিং সিস্টেমের ফলে টাকার নিরাপত্তা নিশ্চিত মনে করা হয়। বাসা বাড়িতে টাকা রাখা নিরাপদ নয়। চুরি, ডাকাতির ঘটনা ঘটে যেতে পারে। কিন্তু ব্যাংকে টাকা রাখাও যে নিরাপদ নয়, তা নিশ্চিত করেছে জালিয়াতচক্রের এক হোতা। বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে শক্তিশালী স্কিমিং ডিভাইসের মাধ্যমে এমন কাজটি করেছে। আবাক করে দিয়েছে পুরো জাতিকে। ব্যাংকিং খাত ডিজিটাল করতে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করা হচ্ছে। হিসাব করে দেখা গেছে, দেশের ৫৬ ব্যাংক এ খাতে ২২ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে। ব্যংগুলোর লক্ষ্য গ্রাহকদের অর্থের নিরাপত্তা বিধান করা। বিদেশ থেকে আনা হয়েছে নতুন নতুন সফটঅয়্যার। এসব পরিচালনায়ও ব্যয় হচ্ছে বিশাল অঙ্কের টাকা। তারপরও গ্রাহকের অর্থ নিরাপদ রাখতে পারছে না।

তবে এ কথা স্বীকার করতেই হবে যে, পুলিশের বিরুদ্ধে যতই অপবাদ থাক না কেন ঘুষ দুর্নীতির, তদন্তকারী সংস্থা বুদ্ধি এবং জ্ঞান দিয়ে অনেক অকল্পনীয় ক্লুলেস মামলার সুরাহা করতে সক্ষম হয়েছে অতীতে যা সত্যিকার অর্থে প্রসংশার দাবি রাখে। ব্যাংক বুথ জালিয়াতির মামলারও একটি সুরাহা হবে বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন। কিন্তু ব্যাংকিং খাতে ৫১ হাজার কোটি টাকার ঋণ খেলাপির পরিণতি কি হবে, এমন একটি প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ২০১৫ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকগুলোর মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫১ হাজার ৩৭১ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। ঋণ পুন:তফসিল ও পরিশোধের মেয়াদ বাড়ানোর ফলে খেলাফি ঋণ কমেছে।

এর আগে জুন প্রান্তিকে ব্যাংগুলোর মোট ঋণ ছিল ৫২ হাজার ৫১৯ কোটি টাকা। যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যারা ব্যাংক থেকে কোনো প্রকল্পের নামে মোটা অংকের টাকা ঋণ নিয়ে থাকেন, তারা সামাজের অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি বর্গ। টাকা ফেরত দিতে হবে অনেকের মধ্যে এমন চিন্তা ভাবনা কম থাকে। এ সব প্রভাবশীদের সাথে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগের ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের সাথে রয়েছে সখ্যতা। এমন কথাও শোনা গেছে, সরকারের চেয়েও ঐ সব প্রভাবশালীদের ক্ষমতা অনেক বেশী, যে ক্ষমতাকে সরকারে থাকা ব্যক্তিরাও ভয় পায়। তাদের সন্তুষ্ট না রাখতে পারলে সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকাই দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। যে কারণে ঋণ আদায়ের ক্ষেত্রে তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যায় না।

অন্য দিকে সরকারে থাকা প্রভাবশালীরাও এ ধরনের কর্মকান্ডের সাথে সহযোগী হয়ে থাকেন। ফলে মোটা অংকের ঋণ নেয়া সহজ হয়ে থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ব্যাংক কর্মকর্তা জানিয়েছে, স্বল্প ঋণের গ্রহিতারা নিয়মিতভাবে ঋণের টাকা পরিশোধ করে থাকেন। তারা ঋণের টাকা দিতে গড়িমসি করেন না। সেই ঋণের পরিমান এক লাখ থেকে পনেরো লাখ টাকা। কিন্তু শত শত কোটি টাকার ঋণ গ্রহিতার মধ্যে এমনই মানসিকতা থাকে, টাকা ফেরত না দেয়ার যত প্রকার ফন্দি ফিকির আছে, তা তারা অবলম্বন করে থাকেন। প্রয়োজনে অর্থ এবং মূল্যবান উপঢৌকন দিয়ে ঋণ মওকুপের চেষ্টাও করে থাকেন। ঋণ প্রদানের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তারাও জড়ি থাকেন। জানা গেছে, ্ঋণ নিতে হলে তাদের একটা পার্সেন্টটিজ দিতে হয়।

পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানা যায়, ব্যাংকিং সংক্রান্ত যত অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার প্রত্যেকটির সাথে ব্যাংক কর্মকর্তা কর্মচারীরা জড়িত ছিল। অনেক ব্যাংক ব্রাঞ্চ থেকে কর্মকর্তারা টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে বিভিন্ন সময়ে। সব মিলিয়ে গ্রাহকরা ব্যাংকে টাকা রেখে যতটা নিশ্চিন্ত হতে পেরেছেন, এখন আর সে ভরসা পাচ্ছেন না। এক দিকে খেলাপি ঋণের টাকা আদায় করার যেমন চেষ্টা চালাতে হবে, তেমনি ব্যাংকে টাকা রাখতে গিয়ে যে আস্থা হারিয়ে ফেলেছেন তা ফিরিয়ে আনতে হবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।