Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

হত্যাযজ্ঞ থামছে না কিছুতেই প্রশাসনের টনক নড়া উচিত

জুন ৭, ২০১৬, ০৫:৩০ এএম


হত্যাযজ্ঞ থামছে না কিছুতেই প্রশাসনের টনক নড়া উচিত

দিনেদুপুরে চট্টগ্রামে পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খাতুন মিতুকে নির্মম ভাবে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। গতকাল রোববার, ৫জুন, সকালে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার জিইসি মোড়ে তাদের ভাড়াবাসার কাছেই এ নৃশংস হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে। একই দিনে সকালে নাটোরে খিস্টান ব্যবসায়ী সুনীল গোমেজকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনায় সন্দেহের তীর নিষিদ্ধ জঙ্গিদের দিকে। অন্যদিকে রাজধানীর উত্তরায় পৃথক ঘটনায় জবাই করে ও পিটিয়ে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তার বৃদ্ধা-মা সহ দু’জনকে হত্যা করা হয়েছে। গত শনিবার গভীর রাতে এ দুটি হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটে।

পুলিশ নিহতদের লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। নির্মান শ্রমিক হত্যার ঘটনায় ১ জনকে আটক করা হলেও কর্নেলের বৃদ্ধা মাকে হত্যার ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ।চট্টগ্রামের এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু পাঁচলাইশের ১০০ গজ দূরে ছেলেকে স্কুলে দিতে গিয়ে ছিলেন। তখন দুর্বৃত্তরা মোটর সাইকেল যোগে এসে তাকে কুপিয়ে ও গুলি করে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মাহমুদার নিথর দেহ উদ্ধার করে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, এ হত্যাকান্ড পরিকল্পিত এবং টার্গেট কিলিং। জঙ্গিরা এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সন্দেহভাজন কয়েকজনকে আটক করেছে পুলিশ। খনীদের শনাক্ত করতে একাধিক পুলিশের টিম মাঠে নেমেছে। পদোন্নতি পেয়ে ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মরত ছিলেন এসপি বাবুল আক্তার। ঢাকায় কর্মস্থলে যোগ দিতে অতি সম্প্রতি তিনি চট্টগ্রাম ছেড়ে গেলেও তার স্ত্রী ছেলেমেয়েকে নিয়ে নগরীর জিইসি মোড় সংলগ্ন ওআর নিজাম এলাকার একটি ফ্লাটে থাকতেন। বাবুল ও মিতু দম্পতির এক কন্যা ও পুত্র সন্তান রয়েছে। তারা নাবালগ। তারা চির দিনের জন্য মাতৃহারা হলো। তাদের বুকফাটা আর্তনাদের ছবি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে এবং টিভি চ্যানেলে দেখানো হয়েছে।

এসপি বাবুল আক্তার জঙ্গি দমন অভিযানে চট্টগ্রাম এলাকায় দক্ষতা ও সফলতা অর্জনের পর এই নির্মম, নির্দয় প্রতিশোধের শিকার হলেন। জঙ্গিরা বাবুল আক্তারকে বাগে না পেয়ে তার স্ত্রীকে তার নাবলগ সন্তানের সামনে হত্যা করে মাটিতে ফেলে দেয়। আগে থেকেই জঙ্গিদের আক্রোশের শিকার হয়েছিলেন বাবুল আক্তার। তার গোটা পরিবার জঙ্গি হুমকির আওতায় ছিলো। এই নৃশংস হত্যায় পুলিশ অফিসারদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এভাবে মৃত্যুর আতঙ্ক ছড়ানো জঙ্গিদের একটি মোক্ষম কৌশল। এ জন্য জঙ্গিরা মৃতুকে পাশবিক করারও চেষ্টা করে। তাদের কাছে আধুনিক প্রযুক্তি আছে, অস্র আছে, তারপরও তারা চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে জখম করে তারপর গুলি করে। তারা সব সময় দলে তিন জন থাকে, আজরাইল হয়ে অবতরণ করে মোটরসাইকেলে।

এ কথা ভাবতে হবে যে, রাজনৈতিক ভাবে মৌলবাদী- জঙ্গিরা পৃথিবীর কোনোদেশেই জয়ী হতে পারেনি তাই তারা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর সব দেশেই গুপ্ত হত্যার পথ বেছে নিয়েছে। ভাবতে হবে জঙ্গিরা একজন নারীকে এভাবে হত্যা করলো, সুনীল গোমেজের মতো একজন বৃদ্ধ দোকানদারকে হত্যা করলো। নির্দোষ, নান্দনিক, জনপ্রিয়, সমাজসেবী লোকজন ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের হত্যা করে যাচ্ছে জঙ্গিরা। যাতে বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ-সভ্য দেশ হিসেবে বিশ্বে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে। আইএসের নাম ব্যবহার করার তাৎপর্য হচ্ছে জঙ্গিরা আইএসের কায়দায় বাংলাদেশকে মধ্যপ্রাচ্যের মতো কংকালের জনপদে পরিণত করতে চায়। আমরা এসপি বাবুল আক্তারকে সহানুুভূতি ও শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তার এই জঙ্গিবিরোধী তৎপরতার ত্যাগ অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হবে। সরকারকে এবং তার প্রশাসনকে বলি,চোখ অন্ধ করলেই প্রলয় বন্ধ হয় না।