Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক

আগস্ট ২৫, ২০১৬, ০৫:২৫ এএম


সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হোক

সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়া হত্যা মামলার পরবর্তী শুনানি আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ করেছেন হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ এবং বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক। গত মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট নির্ধারিত দিনে এ মামলায় পলাতক ৯ জনের মধ্যে ৮ জনের মালামাল ক্রোকের আদেশ দেয়া হলেও এক পলাতক আসামি মুফতি শফিকুর রহমানের মালামাল ক্রোকাদেশ এখনো তামিল হয় নি। আদালত সূত্রে জানা গেছে, কিবরিয়া হত্যা বিস্ফোরক মামলায় মোট ৩২ জন আসামি রয়েছেন। এর মধ্যে সাবেক স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, সিলেটের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জের মেয়র জিকে গউছ ও হুজি নেতা মুফতি হান্নানসহ ১৫ জন দেশের বিভিন্ন কারাগারে আটক আছেন। পলাতক আছেন ৯ জন। উচ্চ আদালত থেকে জামিনে রয়েছেন বিএনপি নেতা আবদুল কাইয়ুমসহ ৮ জন। গত ২৩ আগস্ট, কিবরিয়া হত্যা মামলার নির্ধারিত দিন আদালতে হাজির ছিলেন ৭ জন। অপরদিকে ৯ জনের মধ্যে ৮ জনের মালামাল ক্রোকের আদেশ তামিলের প্রতিবেদন ইতোমধ্যে আদালতে জমা দেয়া হয়েছে। আদালতের পিপি সিরাজুল হক চৌধুরী জানান, পলাতক মুফতি শফিকুর রহমানের মালামাল ক্রোকাদেশ তামিলের প্রতিবেদন এখনো জমা হয় নি। এ প্রতিবেদন এলে পলাতকদের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হবে বলে জানিয়েছেন পিপি জনাব সিরাজুল হক চৌধুরী। এরপর অভিযোগ গঠনের মাধ্যমে বিচার কার্যক্রম শুরু হবে।

প্রসঙ্গত, ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জ সদর উপজেলা বৈদ্যের বাজারে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভা শেষে ফেরার পথে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন এই বাঙালি। তিনি একা নন, তাঁর ভাতিজা শাহ মঞ্জুর হুদাসহ আরো ৫ জন নিহত হন ওই হামলায়।

এ ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে আলাদা দু‘টি মামলা দায়ের করা হয়েছিলো। একাধিকবার এ মামলার তদন্ত হয়েছে। সর্বশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা সিলেটের সিআইডির সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মেহেরুন্নেছা পারুল দীর্ঘ তদন্ত শেষে উভয় মামলায় ৩২ জনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। হত্যা মামলাটি বর্তমানে সিলেট দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন আছে। কিবরিয়া সাহেবের মতো একজন খ্যাতিমান, সজ্জন, অর্থনীতিবিদ ও সংস্কৃতিবান বাঙালিকে ঠা-া মাথায় হত্যা করার পর তৎকালীন জোট সরকারের আমলে এর কোনো বিচার হয় নি, বর্তমান সরকারের আমলেও মামলাটি দীর্ঘসূত্রিতার কবলে পড়ে গেছে। কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রী চিত্রশিল্পী আসমা কিবরিয়া ও তাঁর ছেলে ড. রেজা কিবরিয়াসহ পরিবারের সকলে রাজপথে নেমেছিলেন কিবরিয়া হত্যার বিচারের জন্য। দুঃখের বিষয় তারা যথার্থ বিচার পান নি। এর মধ্যে কিবরিয়া সাহেবের স্ত্রী বিচার পাওয়ার প্রত্যাশা বুকে নিয়ে মৃত্যুর পরপারে চলে গেছেন।

কিবরিয়া সাহেবের পরিবারের পক্ষ থেকে আজকাল আর কোনো কথাবার্তা শোনা যায় না এ মামলা সম্পর্কে। বাংলাদেশের রাজনীতিতে এএমএস কিবরিয়ার বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ অবদান আছে। তিনি ছিলেন তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক উপদেষ্টা। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার সরকার গঠনের পর তাঁকে অর্থ মন্ত্রীর দায়িত্ব দেয়া হয়েছিলো। এক সময় তিনি একটি জাতীয় পত্রিকায় ‘মৃদু ভাষণ’ নামে নিয়মিত কলাম লিখতেন। এই নামে একটি সাপ্তাহিক পত্রিকাও বের করেছিলেন। তিনি রাজনৈতিক বক্তৃতায় এবং কলামে কখনো উগ্র মত প্রকাশ করতেন না। বিনম্র যুক্তিই ছিলো তাঁর অবলম্বন। সংস্কৃতিবান ও মননশীল ব্যক্তিত্বের প্রতিচ্ছবি ছিলেন কিবরিয়া সাহেব। এমন একজন মানুষকেও হত্যা করা হয়েছে। তাঁর বিচার কার্যক্রম এক যুগের দীর্ঘ সূত্রিতার আবর্তে পড়ে গেলো। এ জন্য অনুতাপ হচ্ছে আমাদের। আমরা চাই কিবরিয়া হত্যার বিচার দ্রুত কার্যকর হোক।