Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সুস্থধারায় ফিরে আসুক যুবনেতৃত্ব

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৬, ০৬:০২ এএম


সুস্থধারায় ফিরে আসুক যুবনেতৃত্ব

যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক মিল্কী হত্যার পর এবার মতিঝিলে দলীয় কোন্দলে হত্যার শিকার হলেন যুবলীগ নেতা রিজভী হাসান বাবু। গুলিবিদ্ধ হয়েছেন আরো ১ যুবলীগ নেতা আহসানুল হক ইমন। গত শুক্রবার রাত সোয়া ১১টার দিকে মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ড, সরকারি এজিবি কলোনির ভেতরে যুবলীগ অফিসের সামনে এ ঘটনা ঘটে। গুলিবিদ্ধ ইমনকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। পুলিশের ধারণা, কোরবানির হাটের ইজারার ভাগ, টেন্ডারবাজি নিয়ে বিরোধ, চাঁদার টাকার ভাগ বাটোয়ারাসহ অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এমন বাঞ্ছিত ঘটনায় সমগ্র এজিবি কলোনিতে আতঙ্ক বিরাজ করছে। গত শনিবার রাতে এ ঘটনায় মতিঝিল থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে নিহত বাবুর জানাজার পর তাঁকে পারিবারিকভাবে দাফন করা হয়েছে। পত্রিকায় ছাপা হয়েছে নিহত বাবুর স্বজনদের আর্তনাদের ছবি। যে কোনো মৃত্যুই শোকাবহ।

কিন্তু নিহত বাবুর কচি মুখটা পত্রিকায় দেখেও অনেকে তাঁর প্রতি সহানুভূতিশীল হতে অপারগ হবেন। কারণ, অন্যায়ের প্রতিকার করতে গিয়ে তিনি জীবন হারান নি, তিনি রাজনীতির নোংরা খেলার শিকার হয়ে জীবন হারালেন। আমাদের ছাত্র রাজনীতি আর তারুণ্যের অধপতন দেখে হতাশায় আক্রান্ত হচ্ছি। এর জন্য শুধু তরুণরা দায়ী নয়; মূল রাজনীতির মধ্যে আছে দলাদলি, পকেট নীতি, আধিপত্য বিস্তারের লড়াই, এলাকা দখলের মল্লযুদ্ধ। এরই কু-প্রভাব পড়েছে যুবলীগের তথা ছাত্রলীগের রাজনীতির ওপর। মতিঝিল ঢাকা রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র। এটা জমজমাট বাণিজ্যিক এলাকা। অনেকগুলো ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় মতিঝিলে। অনেক সরকারি বেসরকারি অফিস এখানে। এখানে টাকা উড়ে বেড়ায়। রাজনৈতিকভাবে মতিঝিল দখলে রাখার লড়াই অনেক দিনের। এক সময় মোস্তফা মহসীন মণ্টু মতিঝিল যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা ছিলেন। তিনিও বিতর্কিত হয়েছিলেন আধিপত্য বিস্তারের রক্তাক্ত ঘটনা নিয়ে। দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন।

পত্রিকার সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই যুবলীগ নেতা মিল্কী হত্যার পর মতিঝিলে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে দুটি গ্রুপের সৃষ্টি হয়। নিহত মিল্কীর অনুসারি ও মিল্কী হত্যার নেপথ্য পরিকল্পনাকারী নেতাদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে লড়াই চলছিলো বহুদিন ধরেই। আমরা জেনেছি, এজিবি কলোনির ভেতরে যে যুবলীগ অফিস, সেখানে সুস্থ রাজনীতির চর্চা হয় না। সেখানে চলে বাজে আড্ডা। এ অফিসে প্রতিদিন জুয়া খেলা থেকে শুরু করে নানা ধরনের অপকর্ম হয়। ওই অফিস নিয়ন্ত্রণ করে পুরো মতিঝিল এলাকার চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি। এই চাঁদাবাজির অবৈধ টাকা ভাগাভাগি নিয়ে জীবন হরণকারী অস্ত্রবাজির ঘটনা ঘটেছে। টাকার নেশা বড় নেশা। আর নেশাখোরদের সুস্থ-স্বাভাবিকতা বলে কিছু থাকে না, তারা স্বদলের প্রতিপক্ষকে খুন করবে এটাই স্বাভাবিক।

মতিঝিলে যুবলীগের দলীয় কোন্দল ও চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি নিয়ে যে খুনখারাবি হলো, তাতে বর্তমান রাজনীতির আদর্শ বিবর্জিত, নোংরা রাজনীতির চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। স্বাধীনতার নেতৃত্ব দানকারী, ঐতিহ্যবাহী দলটির অঙ্গ সংগঠনের ভেতরে বাসা বেধেছে দুষ্ট রাজনীতির মাকড়শার জাল। এই জাল ছিন্ন করতে হবে। মূল দলে অবশ্যই আদর্শবাদী নেতা-কর্মীর অভাব নেই। সুযোগের দিনে দলে আগাছার জন্ম হওয়া স্বাভাবিক। সৎ নেতৃত্ব এই আগাছা উৎপাটন করে সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে বলে আমরা আশাবাদী। এ জন্য মূল দলের মুরুব্বীদের শক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। রাজনীতিতে জবাবদিহিতা তৈরি করতে হবে। যুব নেতৃত্বকে সুস্থ ধারায় ফিরিয়ে আনতে হবে।