Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আমাদের কাম্য নয়

অক্টোবর ৪, ২০১৬, ০৬:৩৮ এএম


ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আমাদের কাম্য নয়

যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা সফর করে তার অভিজ্ঞতা তুলে ধরার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য রাখেন। গণভবন থেকে প্রধানমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে সম্প্রচার করা হয়। এই গুরুত্ত্বপূর্ণ সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী যথেষ্ঠ বিবেচনা সম্পন্ন বক্তব্য রেখেছেন; অত্যন্ত ধীর-স্থির মেজাজে তাঁর অভিমত ব্যক্ত করেছেন। যে কোনো ধরনের উস্কানি পরিহার করে মতামত দিয়েছেন। পাক-ভারত যুদ্ধংদেহী প্রেক্ষাপটে তিনি বলেছেন, ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ আমাদের কাম্য নয়। পাক-ভারত যুদ্ধে বাংলাদেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা প্রধানমন্ত্রীর কাম্য নয়।


প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তান একটি পরাজিত শক্তি। যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রসঙ্গে তারা কি বললো না বললো তাতে আমাদের কিছু আসে যায় না, আমরাতো আমাদের কাজ করেই যাচ্ছি। বরং ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তে ভেজা মাটিতে যারা পাকিস্তানের দোসর তাদের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক থাকা উচিত নয়। তিনি বলেন, এ কথা ভাবতেও মনে কষ্ট পাই যে, পাকিস্তানের দোসররা এ দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, স্পিকার ও রাষ্ট্রপতি হয়েছে। তারা গাড়িতে রক্তে কেনা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে পতাকার মর্যাদা ভূলুণ্ঠিত করেছে। এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে কোনো ধরনের উত্তেজনা সৃষ্টি হোক, যুদ্ধ বিগ্রহ হোক বাংলাদেশ তা চায় না। এতে বাংলাদেশের উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্ত হবে। তাই এ অঞ্চলে কোনো সংঘাত বাংলাদেশের কাম্য নয়। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার পরিস্থিতির বিষয়টি ওই দুই দেশের ব্যাপার। বাংলাদেশের প্রত্যাশা, দুই দেশ আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করবে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা নিরসনে কিছু করণীয় থাকলে বাংলাদেশ তা করবে।

একটু খেয়াল করতে হবে যে, ভারতের সীমান্ত অঞ্চল উরির সেনা ঘাটিতে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী সংগঠন জৈশ-ই-মহম্মদ অতর্কিতে হানা দিয়ে ১৮ জন ভারতীয় সেনা হত্যা করার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস দমনে ভারতের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। পাকিস্তানের উস্কানিমূলক আচরণ ভারত-বাংলাদেশ দ’ুদেশকেই ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বাংলাদেশের জঙ্গিদের এবং যুদ্ধাপরাধীদের পাকিস্তান সবসময় সহযোগিতা ও সমর্থন করে থাকে। বাংলাদেশের জঙ্গিরাও বাংলাদেশকে একটি মিনি পাকিস্তান বানাতে চায়। বাংলাদেশের মাটিতে পাকিস্তান সমর্থক আছে, জনগণকে সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেন প্রধানমন্ত্রী।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরে প্রতিদিন ঘটছে রক্তাক্ত ঘটনা। এই সেদিনও পাকিস্তানের উত্তর অঞ্চলের একটি মসজিদে ২৫ জন মুসুল্লি হত্যা করেছে একটি সন্ত্রাসী দল আত্মঘাতী বোমা ছুঁড়ে। তারপরও সেই দেশটি জঙ্গি পাঠিয়ে ভারতকে অস্থির করে তুলেছে। এ সব সৎ প্রতিবেশীসুলভ আচরণ হতে পারে না। ভারত-বাংলাদেশ দু’দেশকেই সদাসতর্ক থাকতে হয় পাকিস্তানের ভয়ানক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সম্পর্কে। সে সব প্রেক্ষিত বিবেচনায় থাকা সত্ত্বেও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধের মতো অকল্যাণকর সিদ্ধান্ত সমর্থন করেননি। কেন বাংলাদেশ সার্ক সম্মেলন বর্জন করেছে তারও যৌক্তিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছেন তিনি। বলেছেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে পাকিস্তান বক্তব্য দেয়ায় বাংলাদেশ নিজেদের সার্ক সম্মেলন থেকে প্রত্যাহার করেছে। তাছাড়া পাকিস্তান সার্ক সম্মেলন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয়েছে। তবে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যৌথ উদ্যোগ থাকা ভালো। এটা এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের জন্যই প্রয়োজন। কেননা এ অঞ্চলের সমস্যাগুলো প্রায় অভিন্ন। তাই যৌথভাবে এ সমস্যা সমাধানের পথ বের করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের অগ্রগতি ও সমৃদ্ধিকে প্রাধান্য দিয়ে, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গুরুত্ত্ব দিয়ে, কুশলী বক্তব্য দিয়েছেন। যুদ্ধকে উস্কানি দিয়ে কোনো বক্তব্য তিনি রাখেননি। সার্বিকভাবে বাংলাদেশ কূটনীতিতে জয়ী হয়েছে, পাকিস্তান পরাজিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আমাদের অভিনন্দন।