Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

কলঙ্কিত জেলহত্যা দিবস চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী

নভেম্বর ৩, ২০১৬, ০৫:৫৬ এএম


কলঙ্কিত জেলহত্যা দিবস চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলী

১৯৭৫ সালের ২ নভেম্বর দিবাগত রাতে কেন্দ্রীয় কারাগারে ঢুকে কারা অন্তরীণ জাতীয় ৪ নেতাকে বর্বরোচিতভাবে হত্যা করে এ দেশের কতিপয় কুসন্তান। সেই কালরাতে নির্দয়ভাবে যাদেরকে হত্যা করা হয়েছিলো তাঁরা হলেন:- মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ, উপ-রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, অর্থমন্ত্রী এম মনসুর আলী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানকে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে তাঁরা যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন করে ফেলেন। বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে, মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে এই চার নেতার অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এই দিনটি সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে নজিরবিহীন একটি কলঙ্কিত দিন। জেলখানায় প্রবেশ করে কারাবন্দি ৪ নেতাকে হত্যার ঘটনা ছিলো সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক ও আইনের শাসনের প্রতি পদাঘাত। জেল হত্যার নায়করাই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিলো। তখনকার রাষ্ট্রীয় অবস্থা কতটা নৈরাজ্যের অন্ধকারে নিপতিত হয়েছিলো, জেল হত্যার ভেতর দিয়ে তা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এমন একটা ধারণা খুনীদের মধ্যে কাজ করেছিলো যে, জেলে অন্তরীণ ৪ নেতা বেঁচে থাকলে তাঁরা ভারতের সহায়তায় ক্ষমতা দখল করবে। তাঁদের নেতৃত্বে জনগণ বিদ্রোহ করবে। সেই ভয় থেকে বিশ্বের সভ্য মানুষকে স্তম্ভিত করে খুনীরা বেআইনি ভাবে কারাগারে ঢুকে এই অমানবিক ঘটনা ঘটায়। মনুষ্যত্ব বর্জিত, পথভ্রষ্টদের পক্ষেই এমন কাজ করা সম্ভব। বেদনাবহ এই দিনটি আবার ঘুরে এসেছে আমাদের কাছে। আজ বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায়। আজ জাতীয় ৪ নেতার সন্তানরা আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসীন। বঙ্গবন্ধু হত্যা ও জেল হত্যারও বিচার করেছেন শেখ হাসিনার সরকার। শেখ হাসিনা জেল হত্যার শোককে শক্তিতে রূপান্তরিত করেছেন। হত্যার পরিণতি কখনো ভালো হয় না, ইতিহাস তা প্রমাণ করেছে। জেল হত্যার নেপথ্য নায়করাও ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জাতীয় ৪ নেতার অবদান জাতি কখনো ভুলতে পারবে না। মহান মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস কত কঠিন দায়িত্ব, কত পরিশ্রম করেছেন তাঁরা, ইতিহাসে তা লিপিবদ্ধ আছে। এই ৯ মাসে তাঁরা আরাম-আয়েশ ত্যাগ করেছিলেন। পরিবার পরিজনদের সঙ্গে দেখা করেন নি। রাতে ঘুমাতে পারেন নি। লক্ষ লক্ষ বীর মুক্তিযোদ্ধা সামাল দিয়েছেন। এক কোটি শরণার্থীর জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করেছেন। কত ষড়যন্ত্র, জটিলতা, কলহ, মনোমালিন্য, চক্রান্ত, তাঁদের মেধা দিয়ে মোকাবেলা করেছেন। তাঁরা ছিলেন মুজিবনগর সরকারের প্রাণপুরুষ; তাঁদের নেতৃত্বের ওপর ভিত্তি করে ভারত সরকার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলো। ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধ মুজিবনগর সরকারের দ্বারা পরিচালিত হয়েছে। দেশ স্বাধীন হয়েছে। দেশ স্বাধীনের পর এই ৪ নেতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গঠনে ভূমিকা রেখেছেন। জাতীয় ৪ নেতা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ যোগ্যতা সম্পন্ন, মেধাসম্পন্ন নেতা ছিলেন, বিদ্বান ছিলেন, আইনজীবী ছিলেন, অর্থনীতিবিদও ছিলেন। ধর্মভীরু ছিলেন। জেল খানায় কামরুজ্জামান পবিত্র কোরআন শরীফ তেলাওয়াত করছিলেন, সেই অবস্থায় তাঁকে হত্যা করা হয়। রক্তে পবিত্র কোরআনের অক্ষর ভিঁজে গিয়েছিলো। তাজউদ্দিন মন্ত্রীত্ব ত্যাগ করে নিরীহ জীবন-যাপন করছিলেন। তাঁকেও হত্যা করা হলো। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী। তাঁকে বলা হয় স্বাধীনতার প্রকৌশলী। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী। প্রথম বাজেট প্রণেতা। জাতীয় ৪ নেতাকে যারা হত্যা করেছে তাদের প্রতি জাতির ঘৃণা চিরকাল বহমান থাকবে। ৪ নেতার জীবন চরিত, জীবনাদর্শ, আমাদের তরুণ প্রজন্মের সামনে তুলে ধরা উচিত। তাতে জাতি লাভবান হবে। তাঁদের আত্মার প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাঞ্জলী।