জানুয়ারি ৫, ২০১৭, ০৬:১২ এএম
আজ ৫ জানুয়ারি। দশম জাতীয় সংসদের ৩য় বছর পূর্ণ হলো। ২০১৪ সালের এই দিনে বাংলাদেশে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এই নির্বাচনে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি ও তাদের জোট অংশ গ্রহণ থেকে বিরত থাকে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। জেনারেল এরশাদ চিরাচরিত স্বভাব অনুযায়ী নানা পরস্পর বিরোধী ঘোষণা দিয়ে শেষ পর্যন্ত ১৪ দলের সঙ্গে সমঝোতা করে নির্বাচনের মাঠে থেকে গিয়েছিলেন। অতীত কিছু তিক্ত অভিজ্ঞতার প্রেক্ষাপটে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তত্ত্বাবধায়ক প্রথা বাতিল করে একটি স্বাধীন, শক্তিশালী নির্বাচন কমিশনের অধীনে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে বলে ঘোষণা দেন। বিএনপি-জামায়াত জোট এই ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে জঙ্গি আন্দোলনে নেমে পড়ে। এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় বিএনপি-জামায়াত জোট শুধু নির্বাচন বয়কট করে নি, বজ্রকণ্ঠে ঘোষণা দিয়েছিলো, কিছুতেই নির্বাচন করতে দেয়া হবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন একটি সহায়ক সর্বদলীয় সরকার করার কথা ঘোষণা দিয়ে বিএনপিকে সে সরকারের পছন্দমত মন্ত্রণালয় গ্রহণ করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সরাসরি বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছিলেন। কিন্তু বরফ গলাতে পারেন নি। বেগম জিয়া তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে ছাড়া নির্বাচন করবেন না বলে অনড় ছিলেন। নির্বাচন প্রতিহত করার জন্য অসহযোগ, ঘেরাও, হরতাল ও অবরোধ আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়েছিলেন। তাতে বাংলাদেশ প্রায় অচল হয়ে পড়েছিলো। একই সঙ্গে চলছিলো ১৯৭১-এর মানবতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া। এই পরিস্থিতিতে জামায়াত-শিবির শুরু করেছিলো অগ্নিসন্ত্রাস। শতাধিক নরনারী তারা আগুনে পুড়িয়ে হত্যা করে। তবুও নির্বাচন ঠেকানো সম্ভব হয় নি। সরকার অনেক প্রতিকূলতার ভেতর দিয়ে নির্বাচন সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। তখন এতটা কঠিন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছিলো যে, কোনো কোনো প্রার্থী বিমানে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কমিশন অফিসে এসে নমিনেশন পত্র দাখিল করেছিলেন। পথে পথে গাছ কেটে ফেলে রাখা হয়েছিলো। এর এক বছর পর ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারিও বিএনপি-জামায়াত একই ধরনের সহিংস আন্দোলন করেছিলো। অগ্নিবোমায় আবাল-বৃদ্ধ-বণিতা পুড়ে মারা গিয়েছিলো। আজ সেই ৫ জানুয়ারি। এই দিনটিকে সরকার তথা ১৪ দল বলেছে ‘গণতন্ত্র রক্ষা দিবস’ আর বিএনপি বলেছে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’। আজ বেগম খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরা দিতে যাচ্ছেন। আদালতে যাওয়ার পথে তাঁকে অভ্যর্থনা জানানোর মাধ্যমে নেতাকর্মীরা মাঠে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তারা কালো পতাকা মিছিল করারও সিদ্ধান্ত নিয়েছে কালোব্যাজ ধারণ করে দলীয় কার্যালয়ে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে কর্মীদের। এই দিন ঢাকায় বিএনপি কোনো বড় সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নেয় নি। অন্যদিকে সরকার দিনটিকে গণতন্ত রক্ষা দিবস হিসেবে উৎসবের সঙ্গে পালন করছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যে যার মতো করে দিনটি পালন করুক। কোনো সংঘাত না লাগুক। কাউকে মাঠে নামতে না দেবার ঘোষণাকে আমরা ভালো মনে করি না। আবার কর্মসূচি পালনের নামে নৈরাজ্য বা অগ্নিসন্ত্রাসও সমর্থন করি না। রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন হওয়া দরকার। রাজনীতিকে যুক্তিতর্ক প্রাধান্য দিয়ে হিংসামুক্ত করে তোলা দরকার। সাধারণ মানুষের রক্ত ঝরিয়ে, তাদের প্রাণ কেড়ে নিয়ে রাজনীতি করা হলে তার পরিণাম হবে আত্মঘাতী। আমাদের বড় দুই রাজনৈতিক দলকে এ কথা বুঝতে হবে মানতে হবে। আজকের দিনটি নিয়ে অনেকের চোখেমুখে আতঙ্কের ছায়া দেখেছি। আবার দুই দলের সংঘাত হয় কি না, আবার মানুষের প্রাণ যায় কি না, রক্ত ঝরে কি না। এই আতঙ্ক, আশঙ্কা বাস্তবের দিকে না গড়াক, আমাদের তা চাই। দুই দল তাদের নিজস্ব অহিংসার কৌশল অবলম্বন করে ৫ জানুয়ারি পালন করুক, তাদের বক্তব্য জনগণের কাছে প্রাঞ্জল ভাষায় তুলে ধরা হোক। শো-ডাউনের রাজনীতি পরিহার করা দরকার। আর আমরা সংঘাতের পুনরাবৃত্তি চাই না।