Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বাড়লো গ্যাসের দাম দূর করা হোক সংকট

ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৭, ০৫:৪৬ এএম


বাড়লো গ্যাসের দাম দূর করা হোক সংকট

গত বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪ টায় গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। এই ঘোষণা কার্যকর হবে মার্চ ও জুন মাস থেকে, দুই ধাপে। ঘোষণা অনুযায়ী আবাসিক গ্রাহকদের ১ মার্চ থেকে এক চুলার জন্য মাসে ৭৫০ টাকা এবং দুই চুলার জন্য ৮০০ টাকা দিতে হবে, যা এতদিন ছিলো যথাক্রমে ৬০০ টাকা ও ৬৫০ টাকা। আর দ্বিতীয় ধাপে ১ জুন থেকে এক চুলার জন্য ৯০০ টাকা ও দুই চুলার জন্য ৯৫০ টাকা দিতে হবে। আবাসিকে যারা মিটার গ্যাস ব্যবহার করেন, তাদের মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটার গ্যাস ব্যবহারের জন্য ৯ টাকা ১০ পয়সা এবং জুন থেকে ১১ টাকা ২০ পয়সা করে পরিশোধ করতে হবে। যানবাহনে ব্যবহৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের দাম মার্চ থেকে প্রতি ঘনমিটারে দিতে হবে ৩৮ টাকা, জুন থেকে ৪০ টাকা। বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দামও। কিন্তু বর্তমানে বাসাবাড়ি ও শিল্পকারখানায় লাগাতারভাবে গ্যাস সংকট চলছে, গ্যাস চুরিও হচ্ছে। গ্যাসের এই নৈরাজ্য কিছুতেই দূর হচ্ছে না। রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে গ্যাসের অপ্রতুলতা দেখা দিয়েছে। নতুন সংযোগও দেয়া হচ্ছে না। এমন অবস্থায় এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ভোক্তা, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তা, রাজনীতিবিদ, সুশীলসমাজসহ সবার বিরোধিতা উপেক্ষা করে ফের গ্যাসের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এর দায় সরকারের ঘাড়ে বর্তাবে যে, গ্রাহকরা গ্যাসের কষ্টে দিন যাপন করছে, চাহিদা মাফিক গ্যাস ব্যবহার করতে পারছে না অথচ প্রতি মাসে তাদের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। গ্যাসের অন্দরে মারাত্মক অনিয়ম, চুরি, ডাকাতি, দালালি চলছে, সে দিকে কোনো খেয়াল করা হচ্ছে না। নতুন সংযোগ দেয়া হচ্ছে না, গ্যাস-নৈরাজ্য দূর করা হচ্ছে না, নিয়মিত ও সময়মতো গ্যাস পাচ্ছে না আবাসিক গ্রাহকরা, অথচ গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। সরকারের পক্ষ থেকে গ্রাহকদের ওপর এটাকে অবিচারই বলতে হবে। গ্যাস ব্যবহার না করে, পরিপূর্ণ গ্যাস সুবিধা ভোগ না করে গ্যাসের দাম পরিশোধ করতে হবে, এটাতো মগের মুল্লুকের দশা। গ্যাসের দাম বাড়তেই পারে। কিন্তু এই মুহূর্তে গণশুনানিতে গ্যাসের দাম বৃদ্ধির যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া যায় নি। কেননা বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, পেট্রোবাংলাসহ গ্যাস বিক্রেতা সরকারি কোম্পানিগুলো প্রতিটিই লাভজনক। তাই গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন ছিলো না। এতে জনজীবনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা আছে। ব্যবসায়ীরা বলেছেন, গ্যাসের দাম বৃদ্ধিতে পোশাক শিল্পে এবং অন্য সকল পর্যায়ে প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। তারা আরো বলেছেন, এখন অধিকাংশ কারখানা নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস পাচ্ছে না। অনেক সময় যথার্থ গ্যাস সাপ্লাই থাকে না। অথচ প্রতিমাসে মূল্য পরিশোধ করতে হচ্ছে। মাত্র দেড় বছরের ব্যবধানে কয়েক দফায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলো, এতে করে কারখানায় উৎপাদন খরব দ্বিগুণ বেড়ে গেছে। অযৌক্তিকভাবে কারখানায় উৎপাদন খরচ বাড়তে থাকলে আন্তর্জাতিক বাজার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা মুশকিল হবে। এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট খরচ চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়বে। যেমন, বাড়িভাড়া, পরিবহনভাড়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের দামও বাড়বে। সরকারকে এতগুলো ঋণাত্মক দিক গভীরভাবে ভাবতে হবে। সরকার গ্যাসের দাম বাড়িয়ে আর কমাতে পারবে না তা জানা কথা, কিন্তু সরকার যা পারে তা হলো গ্যাসের সংকট দূর করতে, গ্যাস নিয়ে যে জালিয়াতি, দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি চলছে তা দূর করতে। এ সব না করে, নতুন গ্যাস সংযোগ না দিয়ে গ্রাহকদের ওপর দাম বাড়ানোর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। এটা একটা ওয়েল ফেয়ার স্টেটের দৃষ্টিভঙ্গি হতে পারে না। উন্নয়নের নামে শোষণের প্রক্রিয়া প্রখর হোক এটা আমরা চাইতে পারি না। ধীরে ধীরে গ্যাস-বিদ্যুৎ ব্যবহারের সঙ্গে যেখানে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষকে সম্পৃক্ত করা দরকার, গ্রামের পাতাকুড়ানিদেরও গ্যাস সুবিধা দেয়া দরকার, গ্যাস লাইন বাংলাদেশের ৫৬ হাজার বর্গমাইলে ছড়িয়ে দেয়া দরকার, সেখানে গ্যাস সুবিধা সংকুচিত করা হচ্ছে অন্য দিকে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। এটা কি গণতান্ত্রিক সরকারের পদক্ষেপ হতে পারে? জনগণের সুবিধা দেয়াই সরকারের দায়িত্ব। গ্যাসের এই দাম বৃদ্ধির পদক্ষেপে জনগণের কী সুবিধা দেখছে সরকার? দাম বাড়ানোর পাশাপাশি গ্যাস সংকট নিয়ে যে অনিয়ম চলছে, সংকট চলছে তা দূর করার দাবি জানাচ্ছি আমরা।