Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিকার হওয়া উচিত

ফেব্রুয়ারি ২৭, ২০১৭, ০৬:২৫ এএম


অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু প্রতিকার হওয়া উচিত

 মাত্র একদিনের জাতীয় পত্রিকায় অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর খবর প্রকাশিত হয়েছে; যা পড়তে গেলে হৃদয় বিদীর্ণ হয়। চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানার রাজাখালী এলাকায় তুচ্ছ ঘটনায় এক এসএসসি পরিক্ষার্থীকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় বিবদমান দুই পক্ষের ঝগড়া থামাতে গেলে হামলার শিকার হন আহমেদ ওয়াছিনুর আদেল নামে ওই এসএসসি পরিক্ষার্থী ও তার বাবা বদিউল আলম বাচ্চু। গত শনিবার ভোরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আদেল।

আদেলের পরিবারের সদস্যরা অভিযোগ করেছেন, মাদসাক্তদের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে বদিউল আলমের ছোট ভাই শাহনেওয়াজের ভাড়াটিয়া শাহজাহান মিয়া ওরফে আলমগীরের নেতৃত্বে হামলা চালিয়েছে সন্ত্রাসীরা। গন্ডগোলের পরিবেশ তৈরি হয়েছে রাজাখালী মাস্টার কলোনিতে। এখানে বদিউল আলমের অন্যান্য ভাইয়েরা ছোট ছোট ঘর উঠিয়ে নির্বিচারে ভাড়া দিয়েছে। এই ভাড়াটিয়ার স্রোতে মাস্টার কলোনিতে ঢুকে পড়েছে সন্ত্রাসী ও মাদসাক্তরা।

এদের অশালীন কলহ থামাতে গিয়ে প্রাণ হারালেন এসএসসি পরিক্ষার্থী আদেল। ‘কলোনি’ শব্দটাই খারাপ। কলোনিতে অনেক সময় সুস্থ পরিবেশ থাকে না। বাছবিচার না করে, টাকার লোভে মাদকাসক্তদের ঘর ভাড়া দেয়ার পরিণাম দাঁড়ালো আদেল নামের তরুণের অকাল মৃত্যু। ব্যাপারটি বড়ই পরিতাপ জনক যে, একজন এসএসসি পরিক্ষার্থী নোংরা, অসামাজিক লোকজনের হাতে বেঘোরে জীবন হারালো। আমাদের সমাজের পরতে পরতে মাদকাসক্তদের প্রভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর প্রতিকার হওয়া জরুরি।

এটাতো লোমহর্ষক খবর যে সড়কে ১ দিনেই ঝরলো ১৭ টি প্রাণ। সড়কে কিছুতেই লাশের মিছিল থামছে না। গত শনিবারের মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ মৃত্যুর বীভৎস বর্ণনা পত্রিকায় এসেছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালো বেসরকারি মেডিকেল কলেজের ছাত্রী সাদিয়া হাসান খান। পত্রিকায় তার নিষ্পাপ ছবি দেখে কেউ অশ্রু সংবরণ করতে পারবেন না। বিয়ের নিমন্ত্রণ খেতে রাজশাহী গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলেন সাদিয়া। গত শুক্রবার রাতের বাসে তিনি মায়ের সঙ্গে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।

গত শনিবার ভোরে কল্যাণপুর বাসস্ট্যান্ডে নেমে তারা সিএনজি চালিত অটো রিকশায় করে পুরান ঢাকার কলেজ হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিলেন। পথে নয়াবাজার এলাকায় কলেজের অদূরে সদরঘাটগামী একটি বাস তাদের পেছনে ধাক্কা দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক সাদিয়াকে মৃত ঘোষণা করেন। মায়ের সামনেই এমন যোগ্য সন্তানের মৃত্যু হলো।

স্বজনদের মধ্যে, সহপাঠীদের মধ্যে সাদিয়ার অকাল মৃত্যুর শোক ছড়িয়ে পড়েছে। আরেকটি হৃদয়বিদারক খবরঃ বন্ধুদের সঙ্গে গত শনিবার গাজীপুর থেকে বইমেলায় এসেছিলেন কলেজছাত্র আকাশ চৌধুরী। মেলা থেকে আবার ট্রেনে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। রাজধানীর তেজগাঁও রেল স্টেশনে ট্রেন থেকে পড়ে করুণ মৃত্যুর শিকার হন আকাশ।

সূত্র জানাচ্ছে, যে বন্ধুদের সঙ্গে ট্রেনে ফিরছিলো আকাশ তাদের একজনকেও দুর্ঘটনার পর খুঁজে পাওয়া যায় নি। এমন কি আকাশের মানিব্যাগ ও মোবাইল ফোন সেটটিরও হদিস নেই। দুর্ঘটনার বিষয়টি রহস্যজনক। দেখা যাচ্ছ পর পর ৩টি মৃত্যুর পেছনে বিবেকহীনতা আর হৃদয়হীনতা কাজ করেছে।

মাদকাসক্তরা কলোনিতে হত্যা করলো আদেলকে, নেশাগ্রস্ত গাড়ির চালক পেছন থেকে ধাক্কা দিয়ে হত্যা করলো মেডিকেল কলেজের ছাত্রী সাদিয়া হাসান খানকে, এরপর আকাশ চৌধুরী রহস্যজনক ভাবে ট্রেন থেকে পড়ে জীবন হারালেন। এখানে আকাশের ট্রেন থেকে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারে বন্ধুদের হাত থাকা অসম্ভব নয়। একজন কলেজে পড়ুয়া যুবক ট্রেন থেকে অটোমেটিক সিস্টেমে পড়ে যাবেন, তাতো হতে পারে না। কী ছিলো আকাশের বন্ধুদের মনে তা তারাই জানে। আমরা পুলিশের কাছে ৩টি হত্যাকান্ডের সঠিক তদন্ত দাবি করছি। এ ব্যাপারে শৈথিল্য দেখানো হলে সামাজিক অপরাধকে প্রশ্রয় দেয়া হবে।