Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

প্রাণ গেলো কলেজছাত্রের পরিবহনের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হোক

মার্চ ১১, ২০১৭, ০৫:৫২ এএম


প্রাণ গেলো কলেজছাত্রের পরিবহনের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ হোক

গত ১০ মার্চ একটি সহযোগী দৈনিকে মর্মান্তিক খবরটি ছাপা হয়েছে, ‘বাসে ওঠার ্আগেই টান, প্রাণ গেলো কলেজছাত্রের।’ রাজধানীর মৎস্য ভবনের মোড়ে বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে সাজেদিস সালেহীন শুভ নামের এক ছাত্র নিহত হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটে। শুভ ধানমণ্ডির ইংরেজি মাধ্যমের একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের এ-লেভেলের ছাত্র ছিলো। চালকসহ বাসটি আটক করা হয়েছে। মৎস্য ভবনের মোড় থেকে শাহবাগগামী রংধনু পরিবহন নামের একটি বাসে ওঠার চেষ্টা করে শুভ। বাসের পাদানিতে পা দেয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাসটি সামনের দিকে টান দিলে পা-পিছলে রাস্তায় পড়ে যায় শুভ। এ সময় ওই বাসের পেছনের চাকা তার পেটের ওপর দিয়ে চলে যায়। ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। ঢাকা রাজধানীতে এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। এটা পরিবহনের দুর্বৃত্তায়নের অন্যতম নমুনা। এই সম্পাদকীয় স্তম্ভে বেশ কয়েকবার লেখা হয়েছে, পরিবহন সেক্টরে মানবতার চর্চা হয় না। শিক্ষিত-মার্জিত লোকজনের বালাই নেই এই সেক্টরে। এরা নিরেট দুর্বৃত্ত। এমন প্রাণহানির ঘটনা রাজধানীর সর্বত্র এবং নিত্য দিনের। বাসের পাদানিতে যাত্রীরা পা দেবার আগেই নির্দয় চালক হুট করে বাস চালাতে শুরু করে। যাত্রীরা চীৎকার করতে থাকে, ‘এই দাঁড়াও, উঠতে দাও।’ চালক বা হেলপার কর্ণপাত করে না। যে যাত্রীদের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে চালক-মালিক-হেলপার জীবন ধারণ করে, সেই যাত্রীদের সঙ্গে অবর্ণনীয় ও অমানবিক ব্যবহার করে। মানবতার লেশমাত্র নেই বাসের লোকজনের। কোনোরকম নিয়মকানুন তারা মেনে চলে না। টাকার লিপসায় বাসে ইচ্ছে মতো লোক বোঝাই করে। ইচ্ছে মতো বাস চালায়, বাস থামায়। এক একটি বাস স্টপেজে অসংখ্য যাত্রী দাঁড়ানো থাকে। যানজটের কারণে দেরি করে বাস আসলে যাত্রীর সংখ্যা বেশি হবে, এটা স্বাভাবিক। তখন বাসে উঠতে হুড়োহুড়ি লেগে যাবে, এটাও স্বাভাবিক। ওই হুড়োহুড়ির মুহূর্তে বাসের চালক ও হেলপারের যে দায়িত্ব তা তারা পালন করে না। পালন করে বরং উল্টো দায়িত্ব। হুট করে বাস ছেড়ে দেয়, তখন কেউ উঠতে পারে, কেউ ঝুলে থাকে বাসের হ্যান্ডেল ধরে, কেউ হুমড়ি খেয়ে পড়ে রাস্তায়। এমনই চলছে রাজধানীর বাসের চালক-হেলপারের দুর্বৃত্তপনা। অথচ নিয়ম হলো, যতক্ষণ পর্যন্ত যাত্রী উঠবে ততক্ষণ বাস স্থির থাকবে। যাত্রীদের ধীরেসুস্থে বাসে ওঠার সুযোগ দিতে হবে। যাত্রী বোঝাই হলে বাস ছাড়তে হবে। অতিরিক্ত যাত্রীদের বলতে হবে, ‘আপনারা ধৈর্য ধরুন, আরো বাস আসবে। তাড়াহুড়ো করে উঠতে যাবেন না।’ কিন্তু না, তা বলা হয় না। যাত্রীদের মানুষ বলেই গণ্য করে না বাসের লোকজন। যাচ্ছেতাই ভাবে যাত্রী উঠিয়ে, আলুর মতো ঠেঁসে বাস বোঝাই করে রওয়ানা হয় গন্তব্যে। কেই উঠতে পারে, কেই ছিটকে পড়ে। এমন নৈরাজ্যকর ঘটনা নিত্য দিনের। অধিকাংশ মানুষ সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছে বাসের বেপরোয়া চলাচলের কারণে। ঢাকা দক্ষিণের সিটি মেয়র রাজধানীতে মরিয়া হয়ে নেমেছেন গাড়ির ফিটনেস পরীক্ষা করার জন্য। আরেকটি সহযোগী দৈনিক বলেছে, পরিবহনে লেগেছে বিশৃঙ্খলা। পরিবহন সেক্টরে নিয়ম চর্চা নেই। এ সেক্টরে আমরা দেখছি দায়িত্বহীনতার উড়নচ-ী দৃশ্য। যেন মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে। এ ব্যাপারে কী সেতুমন্ত্রী, পরিবহন মন্ত্রী ও দুই মেয়র সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারেন না? আমরা রংধনু পরিবহনের চালক, হেলপার, মালিকের উপযুক্ত শাস্তি চাই। ১৯ বছরের কিশোর শুভ, তার ছিলো উজ্জ্বল সম্ভাবনা, চোখে ছিলো রঙিন স্বপ্ন। অকালে সে মুকুলের মতো ঝ’রে গেলো। বুকফাঁটা আর্তনাদ করছে শুভ’র মা-বাবা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় বোঝা নাকি পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ। এ ক্ষেত্রেও তাই হলো। আমরা পরিবহন মন্ত্রীকে অনুরোধ জানাবো, শোকাহত শুভ’র পরিবারের পাশে দাঁড়াতে। ক্ষতিপূরণ দিতে হবে তার শোকগ্রস্ত পিতা মাতাকে। পরিবহনের দুর্বৃত্তায়ন বন্ধ করতে হবে।