Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মুরিদসহ পীরকে গলা কেটে হত্যা জঙ্গি পুনরুত্থান থামাতে হবে

মার্চ ১৫, ২০১৭, ০৬:০৫ এএম


মুরিদসহ পীরকে গলা কেটে হত্যা জঙ্গি পুনরুত্থান থামাতে হবে

জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের নির্মূল করা এখনো সম্ভব হয়নি, তাদের পুনরুত্থানের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জঙ্গি দমন নিয়ে আত্মতৃপ্তিতে নিমগ্ন হওয়ার অবকাশ নেই। জঙ্গিদের জেগে ওঠার খবর বিভিন্ন পত্রিকায় আসছে। গত ১৪ মার্চের কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ পেয়েছে, দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় ঘরে ঢুকে জনৈক পীর ও তাঁর নারী মুরিদকে কুপিয়ে ও গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসী-জঙ্গিরা। গত সোমবার রাত সাড়ে ৯ টায় এই মর্মান্তিক হত্যাক- ঘটে। ওই পীরের নাম ফরহাদ হোসেন চৌধুরী। বয়স ৬০ বছর। তিনি এক সময় পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। মেয়র পদে নির্বাচনও করেছিলেন। দিনাজপুর বাস মালিক সমিতির সভাপতিও ছিলেন এক সময়। তাঁরও স্ত্রী-সন্তান-পরিবার আছে। মৃত্যুর পূর্বে ইদানিং ফরহাদ হোসেন রাজনৈতিক পরিচয়ের চেয়ে পীর পরিচয় দিতেন। লোকজন তাঁকে সেভাবেই চিনতো। নিহত নারী মুরিদের নাম রূপালি বেগম। তাঁর বয়স ২২ বছর। তাঁর বাড়িও একই গ্রামে। কথিত পীরের বাড়িতে তিনি গৃহকর্মীর কাজও করতেন। পীরের প্রতিবেশিরা জানিয়েছেন, পীর ফরহাদ হোসেন বাড়িতে আখড়া গড়ে তুলেছিলেন। বাড়িটি ‘দৌলা দরবার শরীফ’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছিলো। প্রায় এক দশক ধরে এ আস্তানাটি চলছে। মুরিদরা এখানে সমবেত হয়ে জিকির করতেন। জিকিরে মশগুল থাকা অবস্থায় পীর ফরহাদ হোসেন ও তাঁর নারী মুরিদ রূপালি বেগমকে জঙ্গিরা অতর্কিত হামলায় হত্যা করে। প্রথমে এলোপাতাড়ি কোপায় তারপর গুলি করে জঙ্গিরা বরাবর যা করে আসছে। ২০১৩ সালে ঢাকার গোপীবাগে এক পীর ও তাঁর ৬ জন মুরিদকে হত্যা করে জঙ্গিরা কুপিয়ে এবং গুলি করে। পরের বছর আগস্ট মাসে রাজধানীর পান্থপথে মওলানা নূরুল ইসলাম ফারুকীকে হত্যা করে। সে হত্যার ঘটনা ছিলো নির্মম। লক্ষ্য করা গেছে, পীর-মাশায়েখ, ভিন্নমতাবলম্বী, শিয়া-কাদিয়ানি, বিভিন্ন দরগা শরীফের হুজুর, মুক্তচিন্তার বুদ্ধিজীবী, পুরুহিত, যাজক, ধর্মান্তরিত খিস্টানদের বেধড়ক কুপিয়ে, গুলি করে, হত্যা করে আসছে জঙ্গিরা। অতি সম্প্রতি পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিছুটা নিরুদ্বিগ্নতার তন্দ্রায় আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিলেন। সেই ফাঁকে দিনাজপুরের প্রান্তিক অঞ্চলে এই পাশবিক ঘটনা ঘটলো। জঙ্গিরা এক ধরনের কট্টরপন্থী ও নির্দয়। যাদেরকেই তারা ভিন্নমতাবলম্বী মনে করছে, তাদেরকেই হত্যা করছে। তারা দরগা ও মাজারের পীরদের ওপর মহাখাপ্পা। সর্বজন শ্রদ্ধেয় পীর হজরত শাহজালাল (রঃ)এর মাজারে তারা বোমা মারতে দ্বিধাবোধ করেনি। কট্টরপন্থীদের চেয়ে পীর-আউলিয়া ও তাঁদের মাজারের সঙ্গে আমজনতার সম্পর্ক বেশি। এখনো ভারত উপমহাদেশের সর্বজন শ্রদ্ধেয় পীর খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির মাজারে বোমা মারার খবর পাওয়া যায় নি। ধর্মকে ব্যক্তিগত আরাধনার পর্যায়ে রাখা উচিত এ কারণে যে, একই ধর্মের মধ্যে পরস্পর বিপরীত মতামত আছে, ধর্ম পালনের পদ্ধতিগত ভিন্নতা-বৈচিত্র্য আছে। এমনকি মাজারে মাজারে, মসজিদে মসজিদে মতপার্থক্য আছে। এতে নিষ্ঠুরতার জন্ম হচ্ছে। জঙ্গিদের ধারালো অস্ত্র থেকে মসজিদের মোয়াজ্জিন ও ইমাম রক্ষা পাচ্ছেন না। কয়েকদিন আগে পত্রিকায় দেখেছি কুষ্টিয়ার এক এলাকায় ১০/১২ টি কাদিয়ানি পরিবারকে ধর্মান্ধ, কট্টরপন্থী লোকজন অবরুদ্ধ করে রেখেছে। তারা ঘর থেকে বের হতে পারে না, হাটবাজার করতে পারে না। এটাকে জবরদস্তি ও জুলুম ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। বাংলাদেশে শিয়ারা অত্যন্ত আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপন করছে। সুতরাং আমরা বলতে পারি যে, দেশে জঙ্গি দমনের কাজটি শেষ হয়ে যায় নি। জঙ্গিদের অস্তিত্ব যেমন আছে, তেমনি তারা নতুন করে সংঘবদ্ধ হচ্ছে, অস্ত্র ধারাচ্ছে, নতুন নতুন হামলার স্পট চিহ্নিত করছে। আমরা পুলিশ প্রশাসনকে কুষ্টিয়ার কাদিয়ানিদের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করবো। দিনাজপুরের পীর ও নারী হত্যার তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তির আওতায় আনার দাবি জানাবো।