Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

বিশ্বব্যাপী আইএস’র তাণ্ডব সম্মিলিত মোকাবিলা জরুরি

মার্চ ২০, ২০১৭, ০৫:৩৭ এএম


বিশ্বব্যাপী আইএস’র তাণ্ডব সম্মিলিত মোকাবিলা জরুরি

ভারত উপমহাদেশসহ সমগ্র পৃথিবীতে ইসলামিক স্টেট তথা আইএস তা-ব চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের কৌশল হচ্ছে গোপনে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ। তাদের বোমার আঘাত থেকে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান কেউ রেহাই পাচ্ছে না। কেন তারা ইসলামের নাম নিয়ে পৃথিবীর সভ্যতা বিকাশের পথ রুদ্ধ করে দিচ্ছে, কেন তারা মানবসভ্যতার ভিত্তিমূল কাঁপিয়ে দিচ্ছে, তা কেউ বলতে পারে না। একমাত্র আইএস এর কারণে গোটা মধ্যপ্রাচ্যে চলছে রক্তের হোলিখেলা। রাশিয়া-আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের সিরিয়া ও ইরাকে আইএস দমনের জন্য ২৪ ঘন্টা বিমান হামলা চালাচ্ছে। তাতে কত শিশু, কত নারী, কত অসহায় নাগরিক প্রাণ হারাচ্ছে। বছরের পর বছর চলছে সেখানে আইএস বনাম রাশিয়া-আমেরিকার রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। আমাদের বাংলাদেশে জঙ্গিরা যে হামলা চালাচ্ছে তার দায় স্বীকার করে যাচ্ছে আইএস। এ নিয়ে প্রবল বিতর্ক আছে। জঙ্গিতো জঙ্গিই, নামে কী আসে যায়? তাদের কার্যক্রম তো একই, তাদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য এক, তাহলো সমগ্র মানবসভ্যতা ধ্বংস করা। হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার হামলার দায় স্বীকার করেছে আইএস। অতিসম্প্রতি প্রথমে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও পরে ঢাকার উত্তরায় র‌্যাবের সদর দপ্তরে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দু’জন র‌্যাব সদস্যকে আহত করেছে জঙ্গিরা। তার দায়ও স্বীকার করেছে আইএস। গত ২/৩ দিনের পত্রিকাগুলোর প্রথম পৃষ্ঠা ভরে গেছে জঙ্গি হামলা, জঙ্গি সংগঠন ও জঙ্গি উত্থানের খবরে। আত্মঘাতীরা সব জায়গায় নিহত হচ্ছে। অবাক হবার মতো ব্যাপার, তারা ভারতের আগ্রায় এবং তাজমহলে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। তাজমহল উড়িয়ে দেবার হুমকির পরদিনই জোড়া বিস্ফোরণে কেঁপে উঠলো আগ্রা। তাজমহল থেকে মাত্র ৯ কিলোমিটার দূরে পর পর দু’টি বিস্ফোরণ হয়। বাংলাদেশের সন্ত্রাসী, তথাকথিত মুফতি হান্নান- শেখ হাসিনার গোপালগঞ্জের জনসভায় ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখেছিলো। মুফতি হান্নান বঙ্গবন্ধুর মাজার উড়িয়ে দেবারও হুমকি দিয়েছিলো। অতি সম্প্রতি পাকিস্তানে ভয়াবহ বোমা হামলা ও বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে এবং তার দায় স্বীকার করেছে আইএস। গত ফেব্রুয়ারি মাসের ১৬ তারিখে পাকিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলের একটি মাজারে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ব্যাপক প্রাণহানি ঘটেছে। পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে অন্তত ৭২ জন নিহত হওয়ার কথা। এটি ছিলো একটি সুফি মাজার। একই তারিখে ইরাকের বাগদাদে একটি বোমা বিস্ফোরণে ৪৮ জন নারী-পুরুষ, শিশু ও সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। পত্রিকায় এসেছে, পাকিস্তানে আত্মঘাতী বোমা হামলা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ বেড়ে গেছে। এ সব সন্ত্রাসী হামলায় মারা গেছে অগণিত সাধারণ মানুষ। গত ১০ বছরে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলায় হত্যার চিত্র হলোঃ ২০০৭ সালে ১৩৯ জন, ২০০৮ সালে ৬০ জন, ২০০৯ সালে ২৯১ জন, ২০১০ সালে ৪০৫ জন, ২০১১ সালে ১৪০ জন, ২০১৩ সালে ২৫৩ জন, ২০১৪ সালে ২০৫ জন, ২০১৫ সালে ১০৬ জন, ২০১৬ সালে ২৫৬ জন এবং ২০১৭ সালে প্রাণ হারিয়েছে ৭২ জন। সেই তুলনায় ভারত-বাংলাদেশে জঙ্গিদের হামলায় প্রাণহানির সংখ্যা কমই। এই কম নিয়ে আত্মতৃপ্তির কিছুই নেই। হত্যার পরিমাণ বেড়ে যেতে কতক্ষণ? আইএস মানুষ হত্যাকে মুড়ি খাওয়ার পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তারা কিন্তু গোড়াঁ সুন্নী পন্থী। তারা হত্যা করে যাচ্ছে তাদের সঙ্গে ভিন্ন মতাবলম্বীদের শিয়া, কাদিয়ানি, ইয়াজিদী সম্প্রদায়, খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের লোকজন। এতে তিন দেশের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। তাই জঙ্গি বিরোধী উপমহাদেশীয় ঐক্য গড়ে তোলার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। জঙ্গিদের মোকাবেলা করতে হলে এই ঐক্য খুব জরুরি। জঙ্গিদের প্রতি দুর্বলতা কোনো দেশের জন্য মঙ্গলজনক হবে না। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যৌথভাবে সন্ত্রাস মোকাবেলার কথা বলেছেন। আমরা আশা করবো সন্ত্রাস বিরোধী উপমহাদেশীয় ঐক্য গড়ে উঠবে।