Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

জঙ্গিরা মুক্তি পাচ্ছে জামিনে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য

এপ্রিল ২৩, ২০১৭, ০৬:২০ এএম


জঙ্গিরা মুক্তি পাচ্ছে জামিনে সর্বোচ্চ সতর্কতা কাম্য

জঙ্গি হামলা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই এক বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। ইউরোপ, আমেরিকায়ও ছড়িয়ে পড়েছে জঙ্গি নেটওয়ার্ক। গত বৃহস্পতিবারও ফ্রান্সের প্যারিসে জঙ্গি হামলায় এক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত ও অপর এক কর্মকর্তা আহত হয়েছেন। বাংলাদেশেও জঙ্গিরা অনেক দিন ধরেই তৎপর। গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর বাংলাদেশে জঙ্গিদের কর্মকাণ্ড আন্তর্জাতিক নজর কাড়ে। অনেক দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে ভ্রমণের ওপর বিশেষ সতর্কতা জারি করে। দেশের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ও ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অব্যাহত তৎপরতায় বর্তমানে জঙ্গি তৎপরতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও যেকোনো সময় আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে। এরই মধ্যে জঙ্গিবিরোধী অভিযান চালাতে গিয়ে পুলিশ ও অন্যান্য বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন। এর পরও তাঁরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে জঙ্গিবিরোধী অভিযান অব্যাহত রেখেছেন এবং অনেককে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হচ্ছেন। কিন্তু প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, গ্রেপ্তার করা সন্দেহভাজন জঙ্গিরা খুব সহজেই জামিন নিয়ে বেরিয়ে যায় এবং পুনরায় জঙ্গি তৎপরতায় যুক্ত হয়। এমনকি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার একটি মামলার আসামিও জামিন পেয়ে গেছেন। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জঙ্গি কিংবা তাদের মদদদাতারা এভাবে জামিন পেয়ে গেলে পুরো জঙ্গিবিরোধী অভিযানই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাঁরা আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ ব্যাপারে আরো সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। জঙ্গিরা কতটা ভয়ংকর হতে পারে তা আমরা অতীতে দেখেছি। হলি আর্টিজানে যেভাবে নিরীহ লোকজনকে হত্যা করা হয়েছে, তা ভাবতেও গা শিউরে ওঠে। তারও আগে আদালত হামলার শিকার হয়েছেন। বিচারক, আইনজীবীরাও তাদের হামলার শিকার হয়েছেন। সারা দেশে একযোগে পাঁচ শতাধিক বোমা হামলা হয়েছে। মসজিদ-মন্দিরও বোমার টার্গেট হয়েছে। এ ভয়ংকর প্রবণতা রোধ করা জরুরি এবং এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বোচ্চ দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। অনেক সময় দুর্বল তদন্তের কারণেও বিচারক জামিন দিতে বাধ্য হন। সেটি যেন না হয় সে জন্য তদন্তসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের আরো আন্তরিক হতে হবে। আবার জামিনের ক্ষেত্রে জননিরাপত্তার হুমকিও বিবেচনায় রাখতে হবে। গত ফেব্রুয়ারিতে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট এক রায়ে বলেছেন, যারা নিরীহ মানুষ হত্যা করে সেই জঙ্গিদের জামিন বা প্যারলে মুক্তি দেওয়া যাবে না। আমাদের আইনে এ ধরনের অপরাধ জামিন অযোগ্য করার কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। 

জঙ্গিদের মামলা তদারকি ও তাদের জামিন ঠেকাতে একটি সমন্বয় সেল গঠনের কথা বলেছিলেন দেশের সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তেমন কোনো উদ্যোগও আজ পর্যন্ত নেওয়া হয়নি। নিজের জীবনের ওপর ঝুঁকি নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেসব জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেন, তারা এভাবে মুক্তি পেয়ে গেলে একসময় এসব বাহিনীর সদস্যদের মধ্যেও এক ধরনের হতাশা সৃষ্টি হতে পরে এবং তা হবে অত্যন্ত ক্ষতিকর। তাই সময় থাকতেই এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা আশা করি, সংশ্লিষ্ট সবাই এ ব্যাপারে সর্বোচ্চ সতর্কতার পরিচয় দেবেন।