Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

শিশুর মেধা বিকাশে মা-বাবা

অক্টোবর ৭, ২০১৫, ০৭:৫৪ এএম


শিশুর মেধা বিকাশে মা-বাবা


সব মা-বাবাই চান তাদের শিশু সন্তান বড় হয়ে মস্তবড় ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবে। কেউ বা আবার স্বপ্ন দেখেন তাদের সন্তান বড় হয়ে দেশের বড় বৈজ্ঞানিক হবে। বড় হয়ে অনেক অর্থ-বিত্তের অধিকারী হবে- এমনটাও অনেক মা-বাবা ভাবেন। শিশুর বড় হয়ে জ্ঞানী-গুণীজন হওয়া অসম্ভব কোন চাওয়া নয়। শিশুরাইতো দেশের ভবিষ্যৎ নেতা, জ্ঞানী, গুণী, বিশেষজ্ঞজন হবে। তাদের মেধা বিকাশ যথাযথভাবে ঘটলেই এমন চাওয়া-পাওয়া অকল্পনীয় কিছু নয়।

শিশুর মেধা বা বুদ্ধির বিকাশ ঘটার চারটি পর্যায় লক্ষ্য করা যায়। বিকাশের এধারায় মা ও বাবার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। তবে মা-বাবা ছাড়াও নিকট আত্মীয়, প্রতিবেশী, বন্ধু, সহপাঠী ও মুরব্বীদের ভূমিকা কম নয়। শিশুকাল থেকেই একটি শিশু পর্যবেক্ষণের মাধ্যমে যা দেখে ও শেখে তা শিশুমনে গেঁথে যায় এবং বড় হয়ে তার অনেকটাই প্রতিফলন ঘটে। শিশুর বুদ্ধি বিকাশের প্রথম পর্যায় জন্মের পর থেকে ২৪ মাস বা দুই বছর বয়স পর্যন্ত ধরা যায়। এ সময় শিশু নিজের হাত-পা নিয়ে নাড়া চাড়া করে। মায়ের দুধ চুষে পান করতে শেখে। কোন বস্তু ধরে নাড়া চাড়া করে। এসব শিশু নিজেই করে। তবে এক্ষেত্রে মা বা বাবা তাকে সহায়তা করলে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ দ্রুত ঘটে। শিশু প্রত্মপ্রত্যয়ী হয়। এ সময়ে শিশুর হাত থেকে কোন খেলনা পড়ে গেলে সে কাঁদে। মা বা বাবা তাকে সেটি তুলে হাতে দিলে সে খুশি হয় এবং সেটি নিজে করতে শেখে। এভাবে শিশুর ধীশক্তি বাড়ে।

শিশুর দুই থেকে সাত বছর বয়স পর্যন্ত বুদ্ধি বা মেধা বিকাশের দ্বিতীয় পর্যায় হিসেবে ধরা যায়। এসময় শিশু কথা বলতে শেখে। মা যেহেতু শিশুর সাথে বেশি সময় থাকে, মায়ের কথা বলার ভঙ্গী ও কৌশল সে তার কাছে থেকেই বেশি শেখে। বাবা এ ব্যাপারেও ভূমিকা রাখেন। মা বা বাবা এসময় রেগে কথা বললে শিশুর মধ্যে রাগের ধারণা জন্ম নেয় এবং সেও রেগে রেগে কথা বলতে চেষ্টা করে। কোন আচরণ করতে হবে, আর কোনটি করতে হবে না- তা শিশু এ সময়কালে শিখতে থাকে। ঘরের জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখা, ময়লা, আবর্জনা নির্দিষ্ট জায়গায় ফেলা, পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন পোশাক পরিধান করা, খাবার আগে ও পরে হাত ধোয়া, খেলনা গুছিয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় রাখা-শিশু এসব এ বয়সেই আয়ত্ত করে থাকে। এসময় মা ও বাবাকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে।

শিশুর সাত থেকে বারো বছর সময়কালে বুদ্ধির বিকাশ অনেকখানি পরিণত হবার পথে চালিত হয়। এ বয়সে বাচনভঙ্গী, আচরণ, আদব-কায়দা, নমনীয়তা, সময় বুঝে কাজ করা- এমন বিষয়গুলো পরিণতরূপ নিতে শুরু করে। মা-বাবা এসময় শিশুর প্রতি নজর রাখলে শিশু স্বাভাবিকভাবে বিকশিত হবে। সময়মতো পড়া-লেখা করা, খেলাধুলা করা, অতিথি ঘরে এলে অভ্যর্থনা জানানো, কুশল বিনিময় করা, মা-বাবাকে ছোটখাটো কাজে সাহায্য করা, নিজের কাজ নিজেই করতে শেখা- এসময়ে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবা দুজনকেই এসময় শিশুকে সঠিকভাবে পরিচালনা করতে হবে। মা শিশুকে বেশি সময় দেন বলে মাকে বেশি যতœবান হতে হবে। কর্মজীবী মায়েদের এ ব্যাপারে খুবই ধৈর্য্য ও শ্রম দিয়ে শিশুর মেধা বিকাশে সাহায্য করতে হবে।

বারো বছরের পর শিশু আনেকটাই আত্মনির্ভরশীল হতে শেখে। সে সবই পারে এবং সবই বুঝে- এমন একটা ধারণা তার জন্ম নেয়। বারো বছরের আগে শিশু যা শিখেছে, দেখেছে ও শুনেছে তার বেশ খানিকটাই সে নিজের মধ্যে আত্মস্থ করে ফেলে। এটি সঠিক কিনা তা দেখাও মা ও বাবা উভয়েরই দায়িত্ব। শিশুর বয়সের চারটি পর্যায়ে শিশুর বুদ্ধির বিকাশ ঘটে। শিশু ভুল শিখল কী-না তা সংশোধনও এসময়ের মধ্যে করতে হবে। সবকিছুই করতে হবে আন্তরিকতা, বিচক্ষণতা, ধৈর্য্যশীলতা ও মাধুর্য্যরে সাথে। এসময়টুকু শিশুর বুদ্ধির যথাযথ বিকাশের উপযুক্ত সময়। মা-বাবাকে এসময়েই বেশি বিচক্ষণ ও সহনশীল হতে হয়। এ সময় মা-বাবা যতখানি সচেতন হবে শিশু বড় হয়ে তারই প্রতিফলন ঘটাবে। শৈশবকাল অতিক্রম হয়ে গেলে শিশুকে শেখাবার তেমন বেশি কিছু থাকে না। শৈশবের পর তার বুদ্ধিবৃত্তির আরো বিকাশ হয় তার পূর্ব অভিজ্ঞতার আলোকে বর্তমান প্রতিবেশ, পরিবেশ ও সমসাময়িক পারিপার্শ্বিকতার আবহে।

শিশুর মেধা বিকাশে মা-বাবাকে প্রথম থেকেই বিবেচনাপ্রসূত কাজ করতে হবে। দেশের সুযোগ্য সন্তান আপনারই শিশুটি হবে যদি আপনি সেভাবে তাকে গড়ে তোলেন। ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতেই হবে- এমন ভাবনা বদ্ধমূল না হওয়াই বাঞ্ছনীয়। আপনার আমার শিশুটি বড় হয়ে দেশের সুযোগ্য নাগরিক হবে, মানুষের মত মানুষ হবে সেটিই বড় কথা। ২০১৪ সালে উন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়াবার পূর্বে আমাদের প্রজন্মকে ধীশক্তি ও মেধাসম্পন্ন নাগরিকরূপে গড়ে তুলতে সরকার জাতিগঠনমূলক বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এর সুফল গ্রহণ করে আগামী প্রজন্ম মেধা ও ধীশক্তি নিয়ে বেড়ে উঠুক এ প্রচেষ্টা শিশুর মা, বাবাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকেই অব্যাহত রাখতে হবে। শিশুকে বড় করা, মানুষের মতো মানুষ করতে সরকার স্বাস্থ্য, শিক্ষা, বিনোদন খাতে প্রতি বছরই বিপুল অংকের অর্থ ব্যয় করছে। সেটি কাজে লাগিয়ে শিশুর মেধা বিকাশে মা-বাবা যথাযথ দায়িত্ব পালন করলে দেশ ও জাতি আগামীতে দেশ বরেণ্য নেতা পাবে-এটি দেশ আশা করতেই পারে।