Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪,

ফিলিস্তিন সংকট ও মুসলমানদের করণীয়

মে ১৯, ২০২১, ০৮:২৫ এএম


 ফিলিস্তিন সংকট ও মুসলমানদের করণীয়

‘গুগল ম্যাপে গাজার স্যাটেলাইট ছবি কেন ঝাঁপসা করে রাখা হয়েছে।’ একটি পত্রিকার মোটা দাগে শিরোনাম। এর কারণ, আজকাল  স্যাটেলাইটে তোলা ছবি নানা কাজে ব্যবহার করা হয়। বিশেষ করে বিশ্বের যে-কোনো দেশের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাগুলো তুলে ধরতে এর ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। 

২০১৭ সালে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের গবেষকদল স্যাটেলাইট ছবির সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান প্ল্যানেট ল্যাবসের সাথে একত্রে কাজ করেছিলেন। ফলে তারা মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর হাতে কীভাবে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংস হয়েছে তার সঠিক চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরতে পেরেছে। এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছে স্যাটেলাইট। 

বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা দাবি করেছিল তাদের গ্রামে সামরিক বাহিনী আক্রমণ চালিয়েছিল। কিন্তু প্রমাণ কই? অবশেষে তারও প্রমাণ মিলল। স্যাটেলাইটের ছবিতে ধরা পড়ল তাদের নির্মমতার চিত্র। জানল বিশ্ববাসী। এমনকি চীনের শিনজিয়াং অঞ্চলে কী হয়েছিল তার ওপর নজর রেখেছে এই স্যাটেলাইট। 

এর তোলা ছবিতেই শনাক্ত হয়েছে সেখানে উইঘুর মুসলিমদের ‘নতুন করে শিক্ষা’ দেয়ার জন্য যেসব কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে তা। আর যখন ইসরাইলের মতো একটি অভিশপ্ত জাতি ফিলিস্তিনের মুসলমানদের উপর বর্বরোচিত হামলা চালাচ্ছে তা আড়ালের জন্য এরকম একটি ভিন্ন পথ বেছে নিলো। ঝাঁপসা হয়ে এলো স্যাটেলাইটে তোলা ছবি। বিশ্ব নীরব হয়ে দেখছে। 

গাজা উপত্যকায় চলছে ইসরাইলের নির্মম গোলাবর্ষণ। সব জেনেও এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসন ইসরাইলের কাছে ৭৩৫ মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি অনুমোদন দিয়েছে। বিষয়গুলো মুসলমানদের গভীরভাবে ভাবতে হবে। আজ যদি কোনো খ্রিষ্টান অধ্যুষিত রাষ্ট্র এ ধরণের হামলার শিকার হতো জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এখনো বসে থাকত না। প্রয়োজনে সেখানে তারা সামরিক শক্তি প্রয়োগ করত। কিন্তু মুসলমানদের বেলায় তা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে মুসলিম রাষ্ট্রগুলোর উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা নেই।   

মসজিদুল আকসা মুসলমানদের প্রথম কেবলা। সেখানে জড়িয়ে আছে প্রায় এক লক্ষ নবী-রাসুলের স্মৃতি। সেই ফিলিস্তিন আজ ইহুদিদের শিকার। রক্তের ধারা বইছে সেখানে। চারদিক থেকে ভেসে আসছে মুসলমানের কান্না। শিশুর হাহাকার। মুসলিম বিশ্ব আজ তা চোখ বুজে দেখছে। মসজিদুল আকসা এখন ইহুদিদের দখলে। আজান বন্ধ হয়ে গেছে। দীর্ঘ আটশো বছর যেখানে আল্লাহু আকবর ধ্বনিতে মুখরিত হয়েছে সেই পুণ্য ভূমি আজ ইহুদিদের কব্জায়। 

এই ইহুদিরা একটি অভিশপ্ত জাতি। যারা তুর পাহাড় থেকে শুরু করে ময়দানে তীহ সবই আজ বিষাক্ত করে তুলছে। সব জায়গায় এখন পাওয়া যাচ্ছে কামান আর গোলাবারুদের বিষাক্ত গন্ধ। কুরআনের সেই পুণ্যভূমি বায়তুল মোকাদ্দাসও রেহাই পায়নি তাদের কবল থেকে। 

সেই ফিলিস্তিনের পুণ্যভূমিতে আজ জালিম ইহুদিরা মুসলমানদের পদদলিত করছে। মা-বোনদের ইজ্জত লুটে নিচ্ছে। মানবতার চোখ বন্ধ হয়ে আছে। বিচার আজ হয়ে গেছে একপেশে। ফিলিস্তিনের মুসলমানদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই। যে অসহায় মুসলমানদের অন্তরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে তাদের কিছু করার শক্তি নেই। আছে বাবা কান্না। এটাই কেবল তাদের প্রতিবাদের ভাষা।  

মাত্র আট হাজার বর্গমাইলের একটি ছোট্ট ‘রাষ্ট্র’ ইসরাইন। যে ২৪ হাজার বর্গমাইলের একটি রাষ্ট্রকে দখল করে নিয়েছে। এটা মুসলমানদের জন্য বড় পরাজয়। আরব শক্তিগুলো আজ কোনো কাজে আসছে না। অথচ শক্তি, সাহস আর ক্ষমতায় তারা কোনো অংশে পিছিয়ে নেই। 

কিন্তু তারা পরিণত হয়েছে পরাশক্তির ক্রীড়ানক হিসেবে। মত্ত নিজেদের স্বার্থ নিয়ে। এখন প্রয়োজন আরেকজন সালাউদ্দিন আইয়ুবির। যে বাইতুল মোকাদ্দাস পুনরুদ্ধার করে মুসলমানদের বেদনা দূর করবে। আর জালিমদের দিবে উপযুক্ত শিক্ষা। তবেই মুসলমানদের এই বেদনার উপশম হবে। 

ফিলিস্তিন এই চরম পরাজয় মুসলমানদের জন্য লজ্জার। এই লজ্জাই একদিন বিজয়ের মালা পরিয়ে দিতে পারে। যদি মুসলমানরা এখান থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে। এই বিপর্যয়ে হতাশ না হয়ে নিজেদের বিবেককে জাগিয়ে তুলতে হবে। নিজেদের ভুলগুলো চিহ্নিত করে এর থেকে পরিত্রাণের পথ খুঁজে বের করতে হবে। শিখতে হবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। 

কারো অনুগত হয়ে নিজের অস্তিত্বকে বিকিয়ে দেয়া যাবে না। তাহলে একদিন নিজের পরিচয়ই থাকবে না। মুসলিম বিশ্বের জন্য এটা কাঁদা ছোড়াছুড়ির সময় নয়। বরং পরস্পর পরস্পরকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখে উন্নতি জাতি গঠনে এগিয়ে যেতে হবে। সাধ্যমতো মুসলিম পুর্ণজাগরণে কাজ করতে হবে। 

মুসলমানরা আজ ঘুমিয়ে পড়েছে। তারা এই ভেবে প্রশান্তিতে আছে আমরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। কিন্তু তারা বোধহয় এই কথা ভুলে গেছে, কেউ আসমান থেকে সৌভাগ্যের অধিকারী হয়ে দুনিয়ায় আসে না। বরং নিজেদের চেষ্টা সাধনাই তাদের সম্মানজনক জায়গায় নিয়ে যায়। সংখ্যার দিক থেকে মুসলমানরা বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি হয়েও কেন মাত্র এক কোটি ইহুদিদের মোকাবেলায় এরকম অসহায় হয়ে পড়ল।  বিশ্বের শক্তিরধর রাষ্ট্রগুলো কেন এসব নীরবে হজম করছে। তাহলে কী সেই মন্ত্র এই ইহুদিদের। 

তারা সংখ্যায় কম হলেও প্রযুক্তিগত বিদ্যা ও আবিষ্কারে তারা বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিয়েছে। শুধু এই মানসিক স্বস্তি মুসলমান আঁকড়ে ধরেছে, দুনিয়ার বুকে আমরা শ্রেষ্ঠ জাতি। এই আত্মপ্রশান্তি কখনোই মুসলমানদের মাথা উঁচু করে বাঁচতে শেখাবে না। বরং পরাজয়ের গ্লানে গ্রহণে বাধ্য করবে। তার চেয়ে যদি তারা সাফল্যের দ্বার চুম্বন করার প্রয়াসে জেগে উঠে, তবেই তাদের মুক্তি সম্ভব। 

এ কারণে তাদের ইমান-আকিদা ও কাজে-কর্মে প্রকৃত মুসলমান হতে হবে। সকল ক্ষেত্রে ইসলামকেই একমাত্র জীবনবিধান হিসেবে মানতে হবে। আর সাফল্যের উচ্চ শিখরে আরোহণের জন্য পার্থিব সব ধরণের সুবিধা প্রাপ্তির সুযোগ নিজেদেরই অর্জন করতে হবে। জ্ঞান, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি দক্ষতায় তাদের অন্যদের ছাড়িয়ে যেতে হবে। 

পবিত্র আল কুরআনে বলা হয়েছে,‘তোমরাই অবশ্যই বিজয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও।’ অন্যদিকে আরো বলা হয়েছে,‘দুশমনদের সাথে মোকাবেলার জন্য তোমরা যথাসাধ্য শক্তি, সাজ-সরঞ্জাম ও ঘোড়া প্রস্তুত রাখবে। এ দিয়ে তোমরা আল্লাহর দুশমন ও তোমাদের দুশমনদের ভীত-সন্ত্রস্ত করবে।’ (সূরা আল আনফাল, আয়াত : ৬০)। 

মুসলমানদের সব বিজয়েই এই দুইটি জিনিস অপরিহার্য ছিল। আর এই দুইটি জিনিসি যাদের মধ্যে থাকবে তাদের বিজয় সুনিশ্চিত। এ কারণে সাহাবায়ে কেরাম আজমাইন আ: সংখ্যায় কম হয়েও সাচ্চা ইমান আর শক্তি দিয়ে শক্তিশালী জালিম বাহিনীর বিরুদ্ধেও বিজয়ী হতে পেরেছে। আর সেখানে এর ব্যতিক্রম হয়েছে সেখানেই হয়েছে পরাজয়।  

লেখক : মুহাম্মদ মিজানুর রহমান (সাহিত্যিক ও গবেষক) 

আমাসরংবাদ/এআই