Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৭ জুন, ২০২৫,

তালাকের ৩ বছর পর স্ত্রীর যৌতুক মামলা!

বেলাল হোসেন মিলন, বরগুনা॥প্রিন্ট সংস্করণ

সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১৭, ০৬:৩১ এএম


তালাকের ৩ বছর পর স্ত্রীর যৌতুক মামলা!

বিবাহ বিচ্ছেদের তিন বছর পর প্রাক্তন স্বামীর বিরুদ্ধে যৌতুকের দাবিতে মামলা দায়ের করেছেন প্রাক্তন স্ত্রী। আর এ মামলায় জেল খেটেছেন প্রাক্তন স্বামী ও তার বাবা। ভুক্তভোগী স্বামী ও তার বাবার অভিযোগ, আইন অনুযাযী যথাযথ নিয়মে তালাক সম্পন্ন হওয়ার তিন বছর পরে হয়রানির উদ্দেশ্যে এ মামলা করা হয়েছে। মামলা সূত্রে জানা যায়, গত ১৫ আগস্ট ২০১২ সালে বরগুনার বামনা উপজেলার বুকাবুনিয়া গ্রামের একেএম বেলায়েত হোসেনের ছেলে মোঃ আল-আমিনের সাথে পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার বৈদ্ধপাশা এলাকার লোকমান হাওলাদারের মেয়ে মোসাঃ তানিয়া আক্তারের সাথে ইসলামী বিধিসম্মতভাবে বিয়ে হয়। এরপর মোটামুটি সুখেই কাটছিল দম্পতির। তানিয়ার বাবা ও মামা দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসী। ভুক্তভোগী স্বামী আল আমিন জানান, বিদেশে লোক পাঠানোর নামে তার মাধ্যমে ৬ লাখ টাকা নেন শাশুড়ী মমতাজ বেগম। আর এ টাকার বিপরীতে পূবালী ব্যাংক লিঃ বামনা শাখার সঞ্চয়ী হিসাব নং-১১৪৬১০১১০৭৯৪০ এর ২১৮১৬৪১ নম্বর একটি চেক দেন। কিন্ত দীর্ঘদিনেও কাউকে বিদেশের ভিসা দিতে না পারায় এ নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে তার স্ত্রী তানিয়া বাবার বাড়িতে চলে যান। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর স্ত্রী তানিয়া আইনগতভাবে তাকে আদালতের মাধ্যমে তালাক দিয়ে ঢাকা চলে যান। তালাক পাওয়ার পর আল-আমিন তার স্ত্রীকে ফিরিয়ে আনতে ঢাকায় গেলে উল্টো তার বিরুদ্ধে ঢাকার আদালতে ১০৭/১১৭ ধারায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তানিয়া। ওই মামলায় তানিয়া অভিযোগ করেন, তিনি (তানিয়া) আল-আমিনকে তালাক দেয়া সত্ত্বেও আল আমিন বিভিন্ন সময়ে তাকে বিরক্ত করে আসছিলেন। এ অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতে মুচলেকা দিয়ে আল-আমিন বাড়ি ফিরে আসেন। এদিকে সময়মত হিসাবের বিপরীতে টাকা জমা না দেওয়ায় শাশুড়ির দেয়া চেকটি ‘ডিজঅনার’ করে ব্যাংক। ফলে পাওনা টাকা আদায়ের জন্য গত ২২ নভেম্বর ২০১৪ সালে আল-আমিনের মা খাদিজা আক্তার পারুল খুলনা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। পাওনা টাকা আদায়ের এ মামলার পরপরই তানিয়া আক্তার বাদী হয়ে পটুয়াখালী বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে যৌতুকের দাবিতে নির্যাতনের অভিযোগ এনে আল-আমিন, তার বাবা কেএম বেলায়েত হোসেন, মা খাদিজা আক্তার পারুল ও বোন নাসরিন আক্তার লাইজুকে আসামী করে একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ৭১/১৬। পরে মামলাটি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার গাজীপুরা ইসমাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। এদিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিজ্ঞ বিচারক আল-আমিন ও তার বাবা কেএম বেলায়েত হোসেনকে জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কেএম বেলায়েত হোসেন ৯ দিন ও আল-আমিন ৪৬ দিন হাজতবাসের পর জামিনে মুক্ত হয়। আল-আমিন অভিযোগ করে বলেন, ‘আমি ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হয়েছি। ঘটনার সঠিক তদন্ত না করে আমাকে দোষী সাব্যস্ত করে প্রধান শিক্ষক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।
আমার সাথে তানিয়ার ৩ বছর আগে আইন ও শরিয়ত মোতাবেক বিচ্ছেদ হয়েছে। তার দায়েরকৃত ১০৭ ধারার মামলায় ও আমার মা’য়ের দায়েরকৃত চেক ডিজঅনারের মামলার জবাবে বাদী নিজেই তারিখ উল্লেখ করে তালাকের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। অথচ আমি তার কাছে যৌতুক দাবি করে নির্যাতন করেছি, এটা কী করে সম্ভব? মূলত মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ মোখলেসুর রহমান আমার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। আমি সে টাকা দিতে অস্বীকার করি। টাকা না দেয়ায় আমার বিরুদ্ধে তিনি মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন।’ এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলার গাজীপুরা ইসমাইল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ মোখলেসুর রহমান মুঠোফোনে বলেন, আল-আমিন বিভিন্ন সময়ে তানিয়াকে নির্যাতন ও মারধর করত এর প্রমাণ পেয়েছি। কিন্তু বাদীর মামলার অভিযোগ প্রসঙ্গে আসামী পক্ষের বক্তব্য ও কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আসামীদেরকে নোটিশ করা হয়েছিল, কিন্ত তারা যোগাযোগ করেনি। বিয়ে বিচ্ছেদের তিন বছর পর কী করে স্ত্রী’র কাছে যৌতুক দাবী ও নির্যাতন সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মামলার বাদী দাবি করেছে তার সাথে বিচ্ছেদ হয়নি। তবে কী তদন্ত রিপোর্ট একপেশে নয়! এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের সহকারি কৌশলী ও (এপিপি) অ্যাডভোকেট আব্দুল খালেক বলেন, আদালত প্রমাণাদি যাচাই বাছাই করেই আসামীদের জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন। তালাকের পর যৌতুকের দাবিতে মামলায় প্রাক্তন স্বামী কী করে অভিযুক্ত হতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট খালেক বলেন, হয়ত আসামী পক্ষ যথাযথ প্রমাণাদি সরবরাহ করতে পারেনি অথবা অন্য কোনো কারণ থাকতে পারে। বাদীর মা মমতাজ বেগম এর বিরুদ্ধে আসামী পক্ষের একটি চেক ডিজঅনারের মামলা রয়েছে। ওই মামলাটি তুলে নিতেই মূলত এ মামলটি দায়ের করে চাপ প্রয়োগ হয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, শুনেছি এরকম একটি ঘটনা রয়েছে। মামলার বাদী মোসাঃ তানিয়া আক্তারের মা মমতাজ বেগম তালাকের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, আল-আমিন আমার মেয়ের জামাই। তাকে আমার মেয়ে তালাক দেয়নি। আল-আমিন নিজেই তালাকপত্র তৈরি করেছে। ১০৭ ধারা ও চেক সংক্রান্ত মামলায় তালাকের বিষয়টি আপনারাই উল্লেখ করেছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘উকিলরে দিয়া কি লেখানো হইছে আমি জানি না।’