Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই, ২০২৫,

চিত্রা ও বেগবতি নদী দখলের উৎসব প্রভাবশালীদের

মো. শাহ আলম, কালীগঞ্জ (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ২, ২০১৯, ০৬:৫৮ পিএম


চিত্রা ও বেগবতি নদী দখলের উৎসব প্রভাবশালীদের

ঝিনাইদহ জেলাসহ কালীগঞ্জের ওপর দিয়ে বয়ে চলা কুমার, চিত্রা ও বেগবতি নদী ভরাট করে ফসলের ক্ষেত বানানোর উৎসবে মেতেছে নদিপাড়ের প্রভাবশালীরা। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হারিয়ে যাচ্ছে একসময়ের খরস্রোতা এসব নদী। প্রয়োজনীয় সংস্কার না করায় তলদেশ ও নদীর দু’পাড় ভরাট হয়ে গভীরতা কমে খালে পরিণত হয়েছে। ফলে নদীর তীরে চলছে ধান ও সবজি চাষ। এদিকে স্থানীয় নদিপাড়ের প্রভাবশালীরা নদী দখলের মহোৎসবে ব্যস্ত। অনেকেই নদীর ভেতরেই গড়ে তুলেছেন দোকান, ঘরবাড়ি। আবার এ জেলার যে সব শহরের ওপর দিয়ে এ নদি প্রবাহিত হয়েছে, সে সব নদির দু’পাশের জমির মালিকরা বাসাবাড়িসহ তৈরি করছেন বহুতল ভবনসহ মার্কেট।এমন চিত্র ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় প্রবাহিত ঐতিহ্যবাহী চিত্রা ও বেগবতি নদীর। নদী দখলমুক্ত ও খনন করে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিতে নেয়া হচ্ছে না কোনো পদক্ষেপ।সরেজমিন দেখা যায়, ঝিনাইদহ সদরের গান্না থেকে শুরু করে কালীগঞ্জের মঙ্গলপৈতা বাজার ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার নদীপথ। এ নদীর অধিকাংশ জায়গায় ওপরের পাড় কেটে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ট্রাকে করে বাইরে থেকে মাটি এনে ভরাট করে ফসলি জমি তৈরি করা হয়েছে। বর্তমানে ফসলিজমির সীমানা দুই পাড়ে এমন স্তরে গেছে যে, নদীর সীমানা এখন দুই-তিন হাত চওড়া ড্রেনের মতো। বর্তমানে নদীর গভীরতা সর্বোচ্চ পাঁচ থেকে ছয় হাত। অথচ কয়েক বছর আগেও ভরা বর্ষায় পানির গভীরতা ছিল ১৫ থেকে ২০ হাত। একসময় এই নদীর পানি দিয়ে পার্শ্ববর্তী ইরি ক্ষেতে সেচ দেয়া হতো। আষাঢ় থেকে কার্ত্তিক পাঁচ মাস নদীতে বড় বড় নৌকায় এ এলাকার বিখ্যাত খেজুরের গুড়, ধান, পাট, বাতাবি লেবু, নারিকেল বোঝাই করে দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হতো। এসব নদীর পাড় গড়ে ওঠা গ্রামগুলোতে রয়েছে অসখ্য জেলেপরিবার। তারা একসময় শুধু এই নদীতেই মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। শুকনো মৌসুমেও আট থেকে ১০ হাত পানি ছিল। অথচ বর্তমানে বর্ষা মৌসুম শেষ হওয়ার কয়েক দিনের ভেতরেই নদীতে হাঁটু পানি হয়ে যায়। নদীর পাড়ের চাষিরা বিভিন্ন জায়গায় উঁচু বাঁধ দিয়ে চাষাবাদ করে। অনেকে নদীগর্ভে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করছেন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের দখলকৃত নদী সীমানায় খেটেখাওয়া সাধারণ মানুষের যেন প্রবেশই নিষেধ। এমনকি কোনো কোনো জায়গায় নদীতে সর্বসাধারণের গোসল করতেও বাধা দেয়া হয়।কালীগঞ্জের শ্রীরামপুর, হেলাই, ফয়লা, রায়গ্রাম, মস্তবাপুর, ষাটবাড়িয়া, মনোহরপুর ও মঙ্গলপৈতা এলাকায় অনেকেই নদীর তলদেশের মাটি কেটে স্থানীয় ইটভাটায় বিক্রি করছেন। অপর দিকে, চাপরাইল বাজার ও মঙ্গলপৈতা এলাকায় প্রায় লোকই নদীর সীমানায়ই গড়ে তুলেছেন দোকান ও বসতঘর। তাদের দাবি, সরকারি বন্দোবস্তের নিয়ে ভোগদখল করছেন তারা। তবে এলাকার সাধারণ জনগণ মনে করেন, অচিরেই নদীর সীমানা নির্ধারণ ও খনন করে নাব্যতাসহ ফিরিয়ে আনা সময়ের দাবি। না হলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এ অঞ্চলের বিভিন্ন এরাকা মরুভূমিতে পরিণত হবে।এলাকার কয়েকজন গ্রামবাসী জানান, এ অঞ্চলের প্রভাবশালী কয়েকজন কৃষক বছরের পর বছর নদী ভরাট করে ধান চাষ করে আসছেন। কালীগঞ্জ উপজেলার মঙ্গলপৈতা বাজারের পাশে চিত্রা নদী ভরাট করা অবস্থায় কয়েকজনের সাথে কথা বললে তারা বলেন, ‘আমরা জোন হিসেবে মালিকের কাজ করি। এ বিষয়ে যারা জোন দিয়ে ভরাচ্ছে, তাদের পরিবারের সদস্যরাও কোনো মন্তব্য করতে চাননি। এ লাকাবাসীকে জিজ্ঞাসা করলে তারা জানান, জমি-সংলগ্ন নদীর পাড়ও নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করেন। এ কারণে নদীর গতিপথ বন্ধ করে চাষাবাদ করেন। এ বছরও অনেকেই ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন নদীতে। আবার অনেকে ধান চাষও শুরু করেছেন। কিন্তু জনপ্রতিনিধি বা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) কাউকে কখনো বাধা দিতে দেখা যায়নি।ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারী প্রকৌশলী মিরাজ গাজী জানান, যারা ফসলের ক্ষেত বানাতে নদী কাটছে, তারা অবৈধভাবে কাটছে। ইতোমধ্যে ঝিনাইদহে ডেল্টা প্লান-২১ প্রকল্পের আওতায় সাতটি খাল খননের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে, অচিরেই খনন শুরু হবে। বেশ কয়েকটি নদী খনন করার জন্য ইতোমধ্যে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ডিপিপি প্রকল্পে আওতায় জেলার নদিগুলো খননে সব নদিই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। প্রকল্পের আওতায় অবৈধ সব দখলদারকে উচ্ছেদ করা হবে। এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্না রানী সাহা বলেন, ‘বিষয়টি জানলাম, সরেজমিন তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।