Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

মানিকগঞ্জে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক সংস্কার

মামুন মিয়া, মানিকগঞ্জ

জানুয়ারি ১৭, ২০২১, ১১:৫০ এএম


মানিকগঞ্জে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সড়ক সংস্কার

মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার কাটিগ্রাম বাজার থেকে আটিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত তিন হাজার ১০০ মিটার সড়ক সংস্কারে ঝামা ও নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। 

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে সংস্কার কাজে ব্যবহৃত ঝামা ও নিম্নমানের সামগ্রী সরিয়ে পুনরায় কাজ করতে তিনদিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুল হক। একইসঙ্গে সড়ক সংস্কারে তদারকির দায়িত্বে থাকা সদর উপজেলার উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইসলাম হোসেন এ কাজের প্রশংসা করায় ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের হয়ে কাজ করায় তাকে শোকজ করেন তিনি।

গত বুধবার বিকালে তিনি এ নির্দেশ দেন। তবে তার এ নির্দেশনা মানেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্পা এন্টারপ্রাইজ। বরং নিম্নমানের সামগ্রীর উপর ইটের সুরকি দিয়ে তা ঢেকে দেওয়া হয়। দ্রুত কাজ শেষ করতে অধিকাংশ অংশ কার্পেটিং করা হয় আর বেশ কিছু অংশ বালু দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়।

গত মঙ্গলবার সরেজমিনে দেখা যায়, কাটিগ্রাম বাজার থেকে আটিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত ৩১০০ মিটার সড়কে সংস্কার কাজ করছেন শ্রমিকরা। এতে তারা ব্যবহার করছেন ঝামা ও দুই নম্বর ইট। 

স্থানীয়রা বলছেন, এগুলোর মধ্যে শুধু দু’নম্বর নয়, তিন নম্বর, চার নম্বর ইটও রয়েছে। যেগুলো রিকশার চাকায় পিষ্ট হয়ে গুড়ো হচ্ছে মুহূর্তে। 

শ্রমিকরা জানান, এই কাজ তদারকি করছেন প্রকৌশলী ইসলাম হোসেন।

বুধবার সদর উপজেলা প্রকৌশল কার্যালয়ে গিয়ে দেখা হয় উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইসলাম হোসেনের সঙ্গে। তিনি জানান, ৩১০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থ সড়কটির সংস্কার ব্যয় ১ কোটি ১৮ লাখ ৩৪ হাজার ৬০৫ টাকা। সিডিউল অনুযায়ী সড়কটির ঘনত্ব হবে ৪ ইঞ্চি ডব্লিউবিএম ও ২৫ মিলিমিটার কার্পেটিং। আর সংস্কার কাজ শেষ করতে হবে আগামী ২ মার্চের মধ্যে।

কাজের মান সম্পর্কে জানতে চাইলে ইসলাম হোসেন বলেন, কাজের মান অনেক ভালো হয়েছে। জেলা প্রশাসক এস এম ফেরদৌস ও নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুল হক সংস্কার কাজ পরিদর্শন করে প্রশংসা করেছেন।

এ সময় ঠিকাদারকে ডেকে এই প্রতিবেদককে ম্যানেজ করার পরামর্শ দেন উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইসলাম হোসেন। ঠিকাদার নন্দ বসাক প্রতিবেদকের পকেটে টাকা ঢুকিয়ে দিয়ে সংবাদ প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন। সংবাদে ঘুষ দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হবে জানালে ঠিকাদার টাকা বের করে নেন।

ওই দিন বিকালে মানিকগঞ্জ এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী রেমা ফয়জুল হককে সড়ক সংস্কারের ঝামা ও নিম্নমানের সামগ্রীর ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে পুরো ঘটনা জানানো হয়। 

এরপর এ বিষয়ে তার মন্তব্য জানতে চাইলে তিনি এই প্রতিবেদকের কাছে তিনদিনের সময় চান। একইসঙ্গে তিনি উপ-সহকারি প্রকৌশলী ইসলাম হোসেনকে শোকজ করেন ও ঠিকাদারকে তিনদিনের মধ্যে বারোয়ারি খোয়া সম্পূর্ণ তুলে নিয়ে পুনরায় কাজ করার নির্দেশ দেন।

এরপর শুরু হয় ঠিকাদারের ফোনের যন্ত্রণা। তিনি প্রতিবেদককে ম্যানেজ করতে উঠে পড়ে লাগেন। পরে স্থানীয় এক সাংবাদিকের সহায়তায় দুই লাখ টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেন এবং প্রকৌশলী ইসলাম হোসেনের গুণকীর্তন করতে থাকেন।

সংস্কার কাজের সর্বশেষ অবস্থা জানতে শনিবার বিকালে আবারো গিয়ে দেখা যায়, ঝামা ও নিম্নমানের ইট তোলা হয়নি বরং ইটের সুরকি দিয়ে সেগুলো ঢেকে দেওয়া হয়েছে। তড়িঘড়ি করে অধিকাংশ সড়কে কার্পেটিং করা হয়েছে। বেশ কিছু অংশ বালু দিয়ে ঢাকা হয়েছে। তবে বাকি অংশটুকুতে এখনো ঝামা ও নিম্নমানের ইট দেখা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ফয়জুল হককে বারবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

আমারসংবাদ/কেএস