Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪,

ইভ্যালির ভেলকিবাজিতে আটকে আছে যুবকের স্বপ্ন

জুলাই ১৮, ২০২১, ০৯:৪০ এএম


ইভ্যালির ভেলকিবাজিতে আটকে আছে যুবকের স্বপ্ন

ঋণ করে রাইড শেয়ারিং কোম্পানীর পাঠাও চালিয়ে জীবিকা নির্বাহের জন্য এ বছরের জানুয়ারিতে অগ্রীম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা দিয়ে মোটরসাইকেল অর্ডার করেছিলেন ইমন মাহমুদ। দীর্ঘ কয়েকমাস পার হয়ে যাওয়ার পরও স্বপ্নের বাইকটি হাতে না পেয়ে বারবার ইভ্যালির সাথে কথা বলার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি।

রোববার (১৮ জুলাই) ইভ্যালির ধানমন্ডি কার্যালয়ে এসে দেখেন ইভ্যালি অফিসে বড় তালা ঝুলছে। কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সেখানেই।

তিনি জানান, করোনা শুরু হওয়ার কয়েকদিন পর আমি চাকরি হারিয়ে ফেলি। পরে টুকটাক বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে আমাদের সংসার চালাতাম। এভাবে কাজ করে পারিবারের বাবা মাকে বলে মটর সাইকেল কেনার জন্য ঋন নেই। টাকা তেমন না থাকায় এক বন্ধুর পরামর্শে ইভ্যালিতে মটর সাইকেলের জন্য অর্ডার করি। ভাবছিলাম মটর সাইকেলটা পেলে উবার বা পাঠাও চালিয়ে যে আয় হবে তা দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চালাতে পারবো। কিন্তু এখন দেখছি আমার আশার কোন কিছুই হলো না। যেই টাকা অগ্রিম দিয়েছি সেই টাকাটা পাবো কিনা তাও জানিনা। তাদের সাথে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও কোন ভাবে যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।

ইকরামুল অলি জানান, আমি ইভ্যালিতে প্রথম প্রথম কয়েকটি ছোট ছোট জিনিস অর্ডার করেছিলাম। তখন পণ্য হাতে পেলেও বেশ লেট করেই ডেলিভারি দিয়েছিলো। হঠাৎ একটি ডিজিটাল সাউন্ডবক্স অর্ডার করি। যার মার্কেট মূল্য ছিলো ১৫ হাজর টাকা। কিন্তু ইভ্যালিতে ঢুকে দেখি এর মূল্য ১ হাজার ৭০০ টাকা। তখন এই প্রোডাক্টটি আমি অগ্রীম টাকা জমা দিয়ে অর্ডার করি। দুদিন পর ইভ্যালি আমাকে ম্যাসেজ দিয়ে জানায় আমার অর্ডারকৃত পণ্যটি তাদের ষ্টকে নেই। তখন আমি আমার দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে আমাকে ২ দিন অপেক্ষা করতে বলে। তাদের প্রসেসিং শেষ হলে আমার টাকা ফেরত দেওয়া হবে জানায়। এভাবে প্রায় ২ মাস কেটে যায়। আমার টাকা ফেরত দেওয়ার কোন খবর নেই।

তখন আবার আমি ইভ্যালির সাথে যোগাযোগ করি। তারা আমার কাছে আবারও দুইদিনের সময় চায়। আবারও ১৫ দিন পার হয়ে গেলে কোন খবর থাকে না। তখন আবার ফোন দিলে আবার ২৪ ঘন্টা সময়ের মধ্যে ফেরত দিবে বলে সময় চাওয়া হয়। তাতেও প্রায় ৪ দিন কেটে যায়। কোন উপায়ন্তর না পেয়ে আবারও ইভ্যালিতে ফোন দিলে তারা আমাকে বলে টাকাটা আমার বিকাশে ব্যাক করে দিছে। তাদের আমি চ্যালেঞ্জ করে বলি আমার কাছে কোন টাকা আসেনাই। যদি আপনারা টাকা পাঠিয়ে থাকেন তাহলে আপনাদের ট্রানজেকশন আইডি দেন আমাকে। তাও তারা আমাকে দিতে পারেনি। শুধু আমি না, হয়তো এমন অনেকের কাছ থেকে টাকা নিয়ে পরবর্তীতে আর ফেরত দেয়নি। 

সাব্বির হাসান জানান, আমি ইভ্যালিতে বাই ওয়ান গেট ওয়ান (একটি কিনলে আরেকটি ফ্রি) এমন অফার দেখে এক বন্ধুর কাছ থেকে টাকা ধার করে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা অগ্রীম দিয়ে ২টি এসি অর্ডার করি। অর্ডারের পর প্রায় ৬ মাস ঘুরিয়ে আমাকে ২টি এসি দিয়েছে। আরো যে দুইটি এসি তারা দেখিয়েছে তা এখন পর্যন্ত পাবো কিনা অনিশ্চয়তায় আছি। কয়েকদিন পর পর আমাকে তারিখ দেওয়া হচ্ছে। নতুন নতুন তারিখে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে যাচ্ছে। 

‌‘এছাড়াও, আমি ৩০ হাজার টাকার একটি ক্যামেরা অর্ডার করেছিলাম। সেটাও প্রায় ৬ মাস পার হয়ে গেছে। মে মাসে ডেলিভারি হয়েছে দেখাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমার প্রোডাক্ট হাতে পাওয়ার কোন আপডেট নেই। এসব বিষয় নিয়ে তাদের ফোন দিলে তারা নানা রকম তালবাহানা জবাব দেয়। ভোক্তা অধিকারেও অভিযোগ দিয়েছিলাম। সেখানে গিয়েও কোনো প্রতিকার পাই নি। তাও প্রায় ৩ মাস পার হয়ে গেছে। এখন শঙ্কার মধ্যে আছি আদৌ আমার অগ্রীম দেওয়া টাকা পাবো কিনা?’

মোবাইল ফোনে কথা হয় ইভ্যালির আরেক ক্রেতা বিশাল আকাশের সাথে। তিনি জানান, এ্যাপেল ব্রান্ডের আইফোন এক্সআর মডেলের একটি ফোন অর্ডার করেছিলাম। ইভ্যালি আমাকে মার্চ মাসের ২৭ তারিখে ফোনটি ডেলিভারি দিয়ে দিছে বললো। কিন্তু মাঝখানে প্রায় ৩ মাস কেটে গেলো এখন পর্যন্ত ফোনটি হাতে পেলাম না। বেশ কয়েকবার তাদের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছিলাম। তারা দিচ্ছি দিচ্ছি করে সময়ক্ষেপন করতেছে। কয়েকদিন আগে তাদের অফিসে গিয়ে দেখি অফিস তালা মারা। সাথে সাথে তাদের ফোন দিয়ে দেখি নাম্বারটিও বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মোবাইল ফোনেরতো কোন খবর নাই। অগ্রীম যে টাকা দিলাম সেটারও কোন হদিস নাই। এখন কি করবো তাও বুঝে উঠতে পারতেছিনা।

এছাড়াও, ইভ্যালির বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে কথা হয়। তারা বিভিন্ন সময় অগ্রীম টাকা দিয়ে প্রোডাক্টের অর্ডার করে এখনো পর্যন্ত সেই প্রোডাক্টের কোন হদিস পাননি। তারা বলছেন, আদৌ আমাদের প্রোডাক্ট হাতে পাবো কিনা তাও অনিশ্চিত। আমরা চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সাধারণ জনগণের কোটি কোটি টাকা যারা লোপাট করতে চাচ্ছে তাদের আইনের আওতায় এনে আমাদের টাকাগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে।

আমারসংবাদ/জেআই