Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪,

দশ বছরেও বিচার পাননি র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন

অনিক আহমেদ, গবি প্রতিনিধি

মার্চ ২৩, ২০২১, ১০:৪০ এএম


দশ বছরেও বিচার পাননি র‌্যাবের গুলিতে পা হারানো লিমন

২০১১ সালের ২৩ মার্চ র‌্যাবের অভিযানের সময় দুর্ঘটনাক্রমে গুলিবিদ্ধ লিমন হোসেনের পা হারানোর ঘটনা কারো অজানা নয়। মাত্র ১৬ বছর বয়সে গুলিবিদ্ধ কিশোর লিমনের পা পরে কেটে ফেলতে হয়। তখন ইন্টারমিডিয়েট প্রথম বর্ষে অধ্যয়নরত লিমন পরবর্তীতে সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি) থেকে আইন বিভাগে পড়াশোনা করেন। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করে তিনি এখন প্রতিষ্ঠানটির আইন বিভাগেই শিক্ষকতা করছেন। কিন্তু পঙ্গুত্ব তার পিছু ছাড়েনি। সারাজীবন বয়ে বেড়াচ্ছেন এই অভিশাপকে।

দশ বছর আগে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক সেই ঘটনায় ন্যায়বিচার চেয়ে তার মা র‌্যাবের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। কিন্তু এত বছর পেরিয়ে গেলেও আজও তা আলোর মুখ দেখেনি। তদন্তেই আটকে আছে সবকিছু। এখনো তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়নি। 

সংশ্লিষ্টরা জানান, মামলার পর কয়েক দফায় অনেকগুলো তদন্ত কমিটি হয়েছে। র‌্যাব, পুলিশ, বিভাগীয় কমিশনারের পর এখন সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এ মামলার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে।

তথ্য মতে, এই মামলায় একবার প্রতিবেদন দাখিল করা হয়েছিল। আদালত সেটার ত্রুটিগুলো চিহিৃত করে, তা যাচাইয়ের জন্য আবারো নির্দেশ দিয়েছে। মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা, বরিশালের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আকবরের প্রতিবেদন প্রকাশের জন্য ভুক্তভোগী পরিবার জোর দাবি করেন। কিন্তু আজও তা প্রকাশ করা হয়নি।

দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এই মামলার অগ্রগতি নিয়ে হতাশ ভুক্তভোগী লিমন হোসেন। দৈনিক আমার সংবাদকে তিনি বলেন, আমি খুবই হতাশ। দেশে ন্যায়বিচার নাই, আমি নিজে তার জ্বলন্ত উদাহরণ। দশ বছর শেষ হয়েছে গেছে, এখনো তদন্ত কমিটি তাদের রিপোর্ট দিতে পারেনি। যদিও তাদের স্বচ্ছ বা নিরপেক্ষ তদন্ত করার ক্ষমতা নাই। তাদের হাত-পা বেধে দিছে। এটা বিচার বিভাগের জন্য অত্যন্ত লজ্জাজনক ঘটনা।

এদিকে মামলা করায় আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, প্রথমত আমরা এখন পর্যন্ত ন্যায়বিচার পেলাম না। এখন আবার বিচার চাওয়ার জন্য আমাদের বাড়িছাড়া হতে হয়েছে। স্থানীয় সন্ত্রাসী বাহিনীর কারণে আমরা বাড়ি যেতে পারিনা। 

বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এত সময় লাগার কারণ হিসেবে সরকারকে দায়ী করে তিনি আরও বলেন, সরকার এখন প্রশাসনের উপর ভর করে টিকে আছে। র‌্যাবের এই অন্যায়ের বিচার করার মতো সৎ সাহস সরকারের নাই। তবে আমাদের মনোবল দৃঢ় আছে। বিচার একদিন হবেই। আমরা হাল ছেড়ে দিব না। বিচারের জন্য যতদূর যাওয়া দরকার যাব।

তদন্তের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে দায়িত্বপ্রাপ্ত  পিবিআইয়ের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার আমিনুল ইসলাম বলেন, মাসখানেক হলো আমি মামলাটি হাতে নিয়েছি। পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে মূল ঘটনা বের করার চেষ্টা করছি। আসলে এসব বিষয়ে একটু সময় লাগে। কেননা তদন্ত রিপোর্ট সম্পন্ন করে জমা দেওয়ার পর আবার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা যাচাই করেন। এরপর তা প্রকাশিত হয়। তবে আগের চেয়ে কম সময় লাগবে বলে আশা করছি।

তদন্ত কর্মকর্তারা স্বচ্ছতা বা নিরপেক্ষতা বজায় রেখে কাজ করতে পারছেন না, অভিযুক্ত লিমন হোসেনের এমন বক্তব্যকে নাকচ করে দিয়ে তিনি বলেন, উপর মহল থেকে কোনো চাপ নাই। চাপ থাকলে তো আগে একবার তদন্ত শেষ করে কোর্টে দিত না। পেন্ডিং অবস্থায় থাকতো। তদন্ত শেষ হয়েছিল। আদালতের কাছে যেখানে ত্রুটি মনে হয়েছে, তা যাচাইয়ের জন্য আবারো দিয়েছে।

আমারসংবাদ/কেএস