Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

বিদেশি শিক্ষার্থীর ঐতিহ্য হারানোর পথে হাবিপ্রবি 

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি 

এপ্রিল ১, ২০২১, ০২:৩৫ পিএম


বিদেশি শিক্ষার্থীর ঐতিহ্য হারানোর পথে হাবিপ্রবি 

সেশনজট, শিক্ষক রাজনীতি, আবাসন সংকট, অনুন্নত শিক্ষা ব্যবস্থা, সার্কুলার প্রকাশে বিলম্ব, করোনা মহামারি এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা সহ নানাবিধি কারণে দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বিদেশি শিক্ষার্থীরা। ভৌগোলিক কারণে নেপালি শিক্ষার্থীরা হাবিপ্রবিতে পড়তে আগ্রহী হলেও সময়ের সাথে সাথে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি না পাওয়ায় কমে যাচ্ছে নেপালি শিক্ষার্থীর সংখ্যাও।

ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে অধ্যয়নরত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৭ ব্যাচের নেপালি শিক্ষার্থী ব্রীজ কিশোর ইয়াদাভ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নির্ধারিত সময়ের মাঝে আমাদের সম্মান ডিগ্রী প্রদান করতে পুরোপুরি ব্যর্থ। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় অনেক শিক্ষার্থী হাবিপ্রবি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। তাছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সময়ের প্রেক্ষিতে সুযোগ সুবিধা বাড়াতে পারেনি। তবে সুযোগ সুবিধা বাড়লে হাবিপ্রবিতে অনেক নেপালি শিক্ষার্থী পড়তে আসবে বলে বিশ্বাস করি।
 
হাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত সুরাজ কুমার সাহা নামের আরেক বিদেশি শিক্ষার্থী অভিযোগ করেন, বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্লাস শুরু হওয়ার কমপক্ষে ছয় মাস আগে ভর্তির প্রক্রিয়া শুরু করা উচিত। কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার থাকায় অল্প সময়ে অনেক শিক্ষার্থী আসতে পারে না। বিগত সময় গুলো দেখা যায় বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে আসতে আসতে প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু হয়ে গেছে। তার উপর বাংলাদেশে এসে খাপ খাওয়ানোর সমস্যা তো রয়েছেই।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব অনুযায়ী হাবিপ্রবিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তরে ২০১৪ সালে  ভর্তি হয় মোট ২২ জন, ২০১৫ সালে ৪২ জন, ২০১৬ সালে ৫৯ জন, ২০১৭ সালে ৬১ জন, ২০১৮ সালে ৬১ জন, ২০১৯  সালে ২৫ জন এবং ২০২০ সালে মাত্র ৪ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে বলে জানা যায়। 

ইন্টারন্যাশনাল হলের হল সুপার সহযোগী অধ্যাপক ড. মোঃ জামাল উদ্দিনের সাথে বিদেশী শিক্ষার্থীদের  আবাসিক সংকটের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি জানান, ছেলেদের হলে সর্বোচ্চ ১৪০ জন থাকতে পারবে  যদিও বর্তমানে ১০৫ জন ছাত্র রয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হলো এক দেশের শিক্ষার্থী অন্যদেশের শিক্ষার্থীর সাথে রুম শেয়ার করতে চায় না। এমনকি তারা একটি রুমে একজন করে থাকতে চায়। তবে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর পূর্বে তাদের যোগ্যতা যাচাই করা উচিত। কারণ বেশ কিছু শিক্ষার্থী রয়েছে যারা কোনো ভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার যোগ্যতা রাখে না।

তবে ছেলেদের মতো মেয়েদের হলে এমন সমস্যা নেই বলে জানা যায়। বর্তমানে প্রায় ৩৫ জন বিদেশি মেয়ে শিক্ষার্থী হাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত রয়েছে বলে নিশ্চিত করেন ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের হল সুপার অধ্যাপক ডঃ মোঃ আবু সাঈদ। 

হাবিপ্রবি প্রশাসন বিগত সময়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক  বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর সুনাম অর্জন করলেও সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, পুরো ক্যাম্পাসে ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স সেকশনের জন্য নেই কোনো অফিস রুম। এমনকি নেই কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী। ২০১৩ সাল থেকে অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকারকে উক্ত শাখার ইনচার্জের দায়িত্ব দেয়া হয়।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে জানতে চাইলে অধ্যাপক ড. বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ইউজিসি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির ব্যাপারে আমাদের সব সময় উৎসাহ দিয়ে আসছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো যাতে বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সার্কুলার দেশি শিক্ষার্থী ভর্তির সার্কুলারের কয়েকমাস আগেই প্রকাশ করা হয়। এতে করে বিদেশি শিক্ষার্থীদের তথ্য যাচাই-বাছাই করতে সুবিধা হয়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স শাখার জন্য পৃথম অফিসরুম ও জনবল সংকট নিরসনে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ নেয়া হচ্ছে কিনা এ ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রতিবছর সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে প্রত্যেক বিদেশি শিক্ষার্থীদের হলে ভর্তি হতে হয়। এছাড়া ওয়াই-ফাই সুবিধা, বাবুর্চি খরচ সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধার জন্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে নেয়া হয়। এছাড়া  অতিরিক্ত কোনো অর্থই নেয়া হয় না।

পক্ষান্তরে, নেতিবাচক কর্মকাণ্ডের জন্য বহুবার খবরের শিরোনাম হয়েছেন হাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত বিদেশি শিক্ষার্থীরা। ইয়াবা সেবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন নিষিদ্ধ জিনিস গ্রহণ করার ব্যাপারে অভিযোগ রয়েছে বিদেশী শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে। এছাড়া মাধেমধ্যেই সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন একাধিক সূত্র নিশ্চিত করে।

সার্বিক বিষয় নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. বিধান চন্দ্র হালদার (রুটিন দায়িত্ব) বলেন,  করোনার কারণে বিদেশি শিক্ষার্থী কমে যেতে পারে। তবে আমাদের পরিকল্পনা আছে বিদেশি শিক্ষার্থীদের  জন্য পৃথক একটি ইন্টারন্যাশনাল হল তৈরি করা। আর  আবাসন সংকট না থাকলে এমনিতেই অনেক শিক্ষার্থী হাবিপ্রবিতে পড়তে আগ্রহী হবে। 

উল্লেখ্য, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীদের যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল বৃত্তির আওতায় আনা হয় এমর্মে রেজিস্ট্রার বরাবর আবেদন পত্র জমা দিয়েছে হাবিপ্রবির ১৮ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। ইউজিসির ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী হাবিপ্রবি বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তি করানোর দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে অবস্থান করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী এ মুহুর্তে ছেলে ও মেয়ে শিক্ষার্থী মিলে প্রায় ১৩৮ জন শিক্ষার্থী হাবিপ্রবিতে অধ্যয়নরত রয়েছে। 

আমারসংবাদ/কেএস