Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

শিক্ষকদের দ্বন্দে ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা

জুন ১২, ২০২১, ০৭:৪০ এএম


শিক্ষকদের দ্বন্দে ফলাফল প্রকাশে দীর্ঘসূত্রতায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা

১৯ মাসেও ফলাফল প্রকাশ করতে পারেনি জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।

২০১৯ সালের অক্টোবর মাসের ২৮ তারিখ তৃতীয় বর্ষের শেষ সেমিস্টার পরীক্ষা শেষ হয়। বিশ্ববিদ্যালয় নিয়মানুযায়ী পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে ফলাফল প্রকাশের কথা থাকলেও ২০১৫ -১৬ শিক্ষাবর্ষের তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষার ফলাফল ১৯ মাসেও প্রকাশ করতে পারেনি। 

যার কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বিভাগের শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ কোন্দল। করোনা মহামারীর কারণে সরকার থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির ঘোষণা কার্যকর হয় ২০২০ সালের ১৭ মার্চ। সেই সময় পর্যন্ত পরীক্ষা গ্রহণ পরবর্তী সময় ছিলো প্রায় ৫ মাস। করোনার বন্ধের মধ্যেও বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক বিভাগ রেজাল্ট প্রকাশ করার নজির রয়েছে।

ফলাফল প্রকাশ না হওয়ায় পরবর্তী সেমিস্টার পরীক্ষায় বসতে পারছে না ২০১৫-১৬ বর্ষের শিক্ষার্থীরা। যার কারণে দেড় বছরের অধিক সময় ধরে আটকে আছে ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরাও।

করোনা মহামারীর কারণে অনুষ্ঠিত হওয়া জরুরী দুটো একাডেমিক কাউন্সিল সভার সিদ্ধান্ত ছিলো পূর্বের থেকে অধিকতর দ্রুত সম্পন্ন হওয়া পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করতে হবে সেই সিদ্ধান্তেরও ব্যত্যয় ঘটেছে বিভাগটিতে।

ফলাফল প্রকাশে বিলম্বের কারণ খুঁজতে গিয়ে উঠে আসে শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষকের অভিযোগ। যার কারণে আটকে আছে ফলাফল প্রকাশ। 

এর আগেও বিভাগের শিক্ষকদের দ্বন্দ মেটাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে গঠন করা হয়েছিলো কমিটি। সেই কমিটিও সমাধান আনতে পারেনি বিভাগটির পরিচালনায়। শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের থেকে পাল্টাপাল্টি অভিযোগও জমা পড়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে। 

বিভাগটির প্রধান অধ্যাপক ড. আশরাফ আলী সিদ্দিকী বলেন, পরীক্ষা কমিটিতে থাকা শিক্ষকরা আমাকে সহযোগিতা না করলে আমি কি করবো? বিভাগের এক শিক্ষক সায়মা তানজিয়া তিনি অভ্যন্তরীণ নাম্বার প্রদান করেননি বারবার বলার পরেও। তাহলে আমি কিভাবে ফলাফল প্রকাশ করবো? ক'দিন হয়েছে তিনি নাম্বার জমা দিয়েছেন এখন চেষ্টা করছি ফলাফল প্রকাশের। আশা করি খুব দ্রুতই ফলাফল প্রকাশ করতে পারবো।এমনকি পরীক্ষা কমিটির সভাতেও আসেন না বিভাগের আরেক শিক্ষক। 

তবে নাম্বার না দেয়ার কথা অস্বীকার করে বিভাগটির শিক্ষক এফ কে সায়মা তানজিয়া বলেন, এটি সঠিক নয়। আমি অনেক আগেই নাম্বার জমা দিয়েছি।বিভাগের প্রধান বারবার হয়রানি করান অন্য শিক্ষকদের। সকল কমিটিতে তিনি সভাপতি হোন।উনার বাইরে কেউ কিছু বলতে পারেনা। উনার কারনেই অন্য শিক্ষকরা কাজ করতে পারেন না। ফলাফল প্রকাশ না হওয়াটা আসলেই দুঃখজনক। 

ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়ার দায় বিভাগের শিক্ষকরা এড়াতে পারে কিনা জিজ্ঞেস করলে বিভাগটির শিক্ষক মোঃ নকিবুল হাসান খান বলেন, এখানে আমার দায় নেই।দায় যিনি দায়িত্বে আছেন তার।আমি আমার কোর্স সম্পন্ন করেছি।

তবে সঠিক সময়ে ফলাফল প্রকাশ করতে না পারায় দায় রয়েছে শিক্ষকদের বলে মতামত জানিয়েছেন বিভাগটির অন্য শিক্ষক বিপুলেন্দু বসাক।

পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক ড. নির্মল চন্দ্র সাহা বলেন, আমাদের এই দপ্তর হলো পোস্ট অফিসের মতো।আমাদের এখানে আটকে থাকে না।পুরোটাই বিভাগের বিষয়। আমাদের কিছু করার নেই এখানে। ফলাফল প্রকাশে বিলম্ব হওয়া কিংবা দ্রুত হওয়া পুরোটাই বিভাগের উপর নির্ভর করে।

এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৯ মাসেও ফলাফল প্রকাশ না হওয়া নিয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এইচ এম মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অনলাইনে এসকল সমস্যার সমাধান হয় না।খুব দ্রুতই বসে তদের মধ্যকার সমস্যার সমাধান করা হবে এবং ফলাফল প্রকাশে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বিভাগটির শিক্ষার্থীদের স্বাক্ষর নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিভাগের প্রধানের পক্ষে ও বিপক্ষে প্রশাসন বরাবর অভিযোগ দেয়া হয়েছিলো। অভিযোগ রয়েছে সেই স্বাক্ষর দিতে এক প্রকার বাধ্য করা হয়েছিলো উভয় পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের।

আমারসংবাদ/এআই