Amar Sangbad
ঢাকা রবিবার, ০৪ মে, ২০২৫,

ইবি হাতিরঝিল খ্যাত লেকের বেহাল দশা

ইবি (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি

ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২২, ০৭:৪৫ এএম


ইবি হাতিরঝিল খ্যাত লেকের বেহাল দশা

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে কিন্তু মফিজ লেকে যায়নি এমন শিক্ষার্থী খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইবি ক্যাম্পাসের পশ্চিম পাশে প্রকৌশল ভবন এবং মেডিকেলের পিছনে মফিজ লেক অবস্থিত। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠা লগ্নে এই লেকের নাম ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় লেক বা ইবি লেক থাকলেও পরবর্তীতে এটি মফিজ লেক নামে পরিচিতি পায়। নাম পরিবর্তনের পিছনে অনেক জনশ্রুতিও শোনা যায়। 

কয়েকবছর আগে আকিজ গ্রুপের অর্থায়নে লেকের উপর একটি দৃষ্টিনন্দন ব্রিজ, উত্তর-পশ্চিম পাশে একটি ওয়াচ টাওয়ার এবং লেকের পাশে বসার স্থান তৈরি করা হয়েছিলো৷ লেকটি পরিষ্কার করা হয়েছিলো। ব্রিজে লাইটিং ও করা হয়েছিলো। যেকারণে সন্ধ্যার পর লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেতো। তখন লেকের পরিষ্কার পানি, আশেপাশের পরিবেশ এবং রাতের সৌন্দর্য দেখে অনেকেই এই লেক কে ইবির হাতিরঝিল নামকরন করেন।

শীতকালে অতিথি পাখির আগমনে লেকের সৌন্দর্য আরও বেড়ে যেতো। পাখির কিচিরমিচিরে মুখরিত থাকতো লেকের আশপাশ। শিক্ষার্থীদের মূল আড্ডাস্থল ছিলো লেক। 

সময়ের পরিবর্তনে ইবির সেই হাতিরঝিল এখন যেনো পঁচা বিলে পরিণত হয়েছে। কচুরিপানায় ছেয়ে গেছে পুরো লেক। পরিষ্কার পানিতে মাছের সাঁতার কেটে বেড়ানোর মনোমুগ্ধকর দৃশ্য এখন আর দেখা যায় না কচুরিপানার জন্য। লেকের আশপাশও ঝোপঝাড়ে পরিপূর্ণ হয়ে আছে। সেখানে আস্তানা গেড়েছে বিষাক্ত সাপ। এসকল কারণে লেকে এখন আর আগের সেই পরিবেশ টা নাই। এখন শিক্ষার্থীরা খুব একটা আসে না, গানের আসরও খুব একটা বসতে দেখা যায় না। 

লেক ছিলো একসময় শিক্ষার্থীদের কোলাহলে পরিপূর্ণ। করোনার কারণে দীর্ঘদিন ক্যাম্পাস বন্ধ থাকার পর ক্যাম্পাসে এসে লেকের এই অবস্থা দেখে শিক্ষার্থীরা হতাশ। শীতকালে এই লেকে প্রচুর অতিথি পাখির আগমন ঘটতো। কিন্তু এখন আগের থেকে কম পাখি আসে আর আসলেও চলে যায়। কারণ পাখিরা আসলে মফিজ লেকেই থাকতো। কিন্তু এখন কচুরিপানায় পরিপূর্ণ লেকে তাদের থাকার মতো কোনো অবস্থা নাই।  

একসময় মফিজ লেক ইবি ক্যাম্পাসের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন জায়গা ছিলো। কিন্তু এখন তা অতীত। চার মাস হয়ে গেলো বিশ্ববিদ্যালয় খোলার। কিন্তু এখনো একই অবস্থায় পড়ে আছে লেকটি। অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে একসময়ের দৃষ্টিনন্দন লেকের অবস্থা এমন হয়ে আছে বলে মনে করেন সাধারন শিক্ষার্থীরা। 

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী অনি আতিকুর রহমান বলেন একসময় লেকের সৌন্দর্য সবাইকে বিমোহিত করতো। আমরা মজা করে ইবির হাতিরঝিল ডাকতাম। মজার ছলে বললেও কথাটা সত্যি। রাতের লাল নীল আলোয় সাজানো ব্রিজ, পরিষ্কার পানিতে মাছের সাঁতার কাটা, শীতের সময়ে অতিথি পাখির কিচিরমিচির শব্দ এসবে বিষাদগ্রস্ত মনও ভালো হয়ে যেতো। কিন্তু লেকের সেই অবস্থা এখন আর নেই। অবহেলা এবং অব্যবস্থাপনার কারণে একসময়ের দৃষ্টিনন্দন লেকের অবস্থা করুণ হয়ে গেছে। কচুরিপানায় ভরে গেছে লেক, ঝোপঝাড়ে ছেয়ে গেছে লেকের আশপাশ। কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানাই, লেকটির সঠিক পরিচর্যা করে শিক্ষার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দিন।

ব্যাবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আশিকুর রহমান বলেন, মনোরম পরিবেশে নয়নাভিরাম দৃশ্য যেকোনো মানুষের অশান্ত মনকে শান্ত করে দেয়। চারিদিকে ঝিরিঝিরি বাতাস আর ঝিলমিল স্বচ্ছ পানির নীলাভ আভায় রীতিমতো মুগ্ধ হয়ে যায় সবাই। ঠিক তেমনই একটি জায়গা হচ্ছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন লেক। কিন্তু অযত্ন-অবহেলায় গরীবের হাতিরঝিল খ্যাত লেকটি এখন মৃতপ্রায়। লেকের স্বচ্ছ পানি তো দূরের কথা, পানি পাওয়াই দুঃস্কর। এ ছাড়া লেকের ধারে অসংখ্য গাছ কাটার ফলে পরিবেশ বিপর্যয় হয়েছে। যেটা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের হতাশ করেছে। লেকে স্বচ্ছ পানি সরবরাহ করার পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতা বৃদ্ধি করে মনোরম পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।

এ বিষয়ে প্রধান প্রকৌশলী মুন্সী শহীদ উদ্দীন মো. তারেক বলেন, লেকের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য টেন্ডার আহ্বানের সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করেছি। শীঘ্রই আমরা কাজ শুরু করবো এবং লেকের পূর্বের সৌন্দর্য ফিরে আসবে।

আমারসংবাদ/কেএস