Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

রিল লাইফের ভিলেন থেকে রিয়েল লাইফের হিরো

মে ৬, ২০২১, ০৫:৩০ এএম


রিল লাইফের ভিলেন থেকে রিয়েল লাইফের হিরো

২০২০ সালের আগে দূর্বা রানাডে কিংবা ছেদী সিং নামক খলনায়ক রুপেই পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু এই করোনা যেন সবার আসল চেহারাই বদলে দিল। পর্দায় যিনি জনজীবনের ত্রাস, বাস্তবের রাজপথে তিনিই হয়ে উঠলেন ভরসা, ত্রাতা। পর্দার সেই খলনায়ক ছেদী সিং হয়ে উঠলেন সবার কাছে বাস্তব জীবনের আসল নায়ক। 
  
লকডাউনে যখন সবাই নিজের বাড়িতে বসে পরিবার এবং নিজের সুরক্ষা নিয়ে ভাবছেন, সেই সময় সোনু বেরিয়ে পড়েছিলেন দেশের নানা প্রান্তে আটকে থাকা পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি পৌঁছানোর ব্যবস্থা করে দিতে। শুধু তাই নয়, স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য নিজের হোটেলের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। বিদেশে আটকে থাকা ভারতীয় পড়ুয়াদের দেশে ফেরার জন্য বিমানের ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। এ ছাড়াও বহু মানুষের খাবার, পড়াশোনার খরচ, চিকিৎসার খরচ সব কিছুর দায়িত্বও তুলে নিয়েছিলেন নিজের কাঁধে। 

করোনার তাণ্ডবে ভারতে লকডাউন শুরুর পরই মহারাষ্ট্রের করোনা-যোদ্ধা চিকিৎসক-নার্স এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য মুম্বাইয়ের জুহুতে তার হোটেলের দরজা খুলে দেন অভিনেতা। এরপর থেকে আর থেমে থাকেননি অভিনেতা। এক ফোন কলে ১০০  দিন মজুরদের বাড়িতে ট্রাক ভর্তি করে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস, খাবার-দাবার, মূলত গ্রসারি আইটেম পৌঁছে দেন সোনু।

গত বছরের ১০ মে এর ঘটনা। রাস্তা দিয়ে অসংখ্য লোক হেঁটে যাচ্ছিলেন। কারও কাঁধে ব্যাগ, কোলে বাচ্চা। এই দৃশ্য দেখে মহারাষ্ট্রের থাণে বাসস্ট্যান্ডে থমকে গিয়েছিলেন সোনু। হেঁটে যাওয়া প্রায় সাড়ে তিনশো শ্রমিকের উদ্দেশে সুঠাম চেহারার অভিনেতার জিজ্ঞাসা ছিল, যাবেন কোথায়? এ ভাবে হেঁটে কদ্দূর ?

জুতোর সোল খুইয়ে ফেলা, গোড়ালি ফেটে রক্ত বেরোতে থাকা এক শ্রমিকের জবাব ছিল কর্ণাটক। মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন সোনু। তারপর রূপকথা!

যোগাযোগ করেন মহারাষ্ট্র সরকারের স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে। তারপর কর্ণাটক সরকারের সঙ্গে ইমেল চালাচালি। দু’ঘণ্টার মধ্যে কর্ণাটক এবং মহারাষ্ট্র সরকার সবুজ সংকেত দেয় সোনুকে। তারপরই শুরু হয় যুদ্ধকালীন তৎপরতা। ওই রাতটা থানেতে কয়েকটি অস্থায়ী তাঁবু টাঙিয়ে রাখার বন্দোবস্ত করা হয় ৩৫০ জন কর্ণাটকের শ্রমিককে। পরের দিন সকালে ১০টি বাস চলে আসে সেখানে। পৌঁছে যান সোনু। সঙ্গে খাবার এবং পানি।

বাসের ব্যবস্থা কে করল মহারাষ্ট্র সরকার না কর্ণাটক সরকার? না তারা কেউ নয়, একদম ব্যক্তিগত উদ্যোগে সেই ব্যবস্থা করেছিলেন ‘সেই ছেদি সিং।’ 

তারপর একটার পর একটা দিন গেছে আর মারাঠা মুলুকের এ প্রান্ত সে প্রান্ত থেকে আবদার এসেছে সোনুর কাছে। বাড়ি ফিরিয়ে দেবেন ভাইয়া? বয়স্ক নারী কাতর আর্জি নিয়ে বলেছেন, আমাদের বাড়ি ফিরিয়ে দাও না বেটা! কারো আর্জি ফেলে দেননি তিনি। গত বছরের ২৪ মে পর্যন্ত ১২ হাজারের বেশি মানুষকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছেন সোনু। 

এরপর লকডাউনের মধ্যে যেখানে পরিযায়ী শ্রমিকরা সংকটে পড়ছেন, সেখানেই মুশকিল আসান হয়ে হাজির হয়েছেন ছ’ফুট তিন ইঞ্চির ‘বাহুবলী।’

শ্রমিকদের কেবল বাড়িতেই ফেরাননি সোনু। তাদের কাজে ফেরানোর জন্যেও করেছিলেন ব্যবস্থা। ‘প্রবাসী রোজগার’ নামে একটি অ্যাপ লঞ্চ করেন যার মাধ্যমে দেশের যে কোনও প্রান্তে কাজ খুঁজে পেতে পারে মানুষ।

সোশ্যাল মিডিয়ায় হোক কিংবা ব্যক্তিগত উৎসের মাধ্যমে, যেভাবেই খবর পেয়েছেন সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন সোনু। কখনও কারো বাড়িতে খাবার পৌঁছে গেছে তো, কারো বাড়িতে ট্রাক্টর। 

সোনুর একা নেওয়া উদ্যোগে এখন অনেকেই পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন তার। সম্প্রতি এক রিয়্যালিটি শোয়ের অতিথি বিচারক হয়ে এসেও মধ্যপ্রদেশের মালওয়া অঞ্চলের প্রত্যন্ত গ্রাম নিমাচের সব মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন সোনু। শুধু তাই নয় সোনু আর টিমের প্রচেষ্টায় গত ৪ মে বেঁচে গেছে ২২ জন করোনা রোগীর প্রাণ। 

সোনুর হাত ধরেই যেন ভারতের সাধারণ মানুষ এই মহামারীর সাথে লড়তে সাহস সঞ্চয় করছে। এভাবে ধীরে ধীরে রিল লাইফের ভিলেন থেকে রিয়েল লাইফের হিরো হয়ে উঠছেন সোনু সুদ।

আমারসংবাদ/এডি