Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ০৮ মে, ২০২৪,

অসুস্থতা যখন চরমে তখন মা-ছেলের নির্মল ছবিতেও সমস্যা খুঁজে বের করে

বিনোদন ডেস্ক

মে ১০, ২০২১, ০৯:১৫ এএম


অসুস্থতা যখন চরমে তখন মা-ছেলের নির্মল ছবিতেও সমস্যা খুঁজে বের করে

গতকাল ছিল বিশ্ব মা দিবস। মা দিবস উপলক্ষে ফেসবুকে সবাই নিজেদের মায়ের সাথে ছবি শেয়ার করেছেন। সেই তালিকায় রয়েছেন অভিনেতা চঞ্চল চৌধুরীও।  কিন্তু এ ছবির নিচে নেটিজেনদের একাংশ বাজে মন্তব্য করতে থাকেন।  ধর্মীয় বিষয়কে সামনে এনে অনেকে আঘাত করেছেন অভিনেতাকে। শোবিজ অঙ্গনের অনেক তারকা শিল্পী এর প্রতিবাদ করেছেন। 

বিষয়টি নিয়ে গুণী নির্মাতা মাসুদ হাসান উজ্জ্বল তার ফেসবুকে দীর্ঘ একটি লেখা পোস্ট করেছেন। যা অনেক নির্মাতা-শিল্পী শেয়ার করেছেন। তার এ লেখাটি আমার সংবাদের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

চঞ্চল চৌধুরী তাঁর মা এর সঙ্গে অসামান্য এক ছবি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়াতে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের স্বীকার হয়েছেন । তাঁদের মা ছেলের অপার্থিব নির্মল হাসির বিপরীতে এই আক্রমন মানসিক ভাবে সম্পূ্র্ণ অসুস্থ এক জাতি সম্পর্কে আমাদেরকে উদ্বিগ্ন করে ! 

না আমি নিন্দা জানাতে আসিনি । পরিস্থিতি এখন এতটাই ভয়াবহ যে নিন্দা জ্ঞাপন করাটা হাস্যকর মনে হবার সম্ভাবনাই বেশী ! চঞ্চল চৌধুরী একজন শক্তিমান অভিনেতা , তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্পর্কেও কমবেশী ধারণা রাখি , এইসমস্ত বিকৃত আচরণে তিনি নূণ্যতম বিচলিত হবেন না বলেই প্রত্যাশা রাখি । 

কেবল সাম্প্রদায়িকতা নয় , মানুষের পরশ্রীকাতরতা এখন রিতিমত মানসিক বিকারের পর্যায় পৌঁছেছে । নিজের স্বজাতিকে নানা কারণে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে মানুষ আনন্দ পায় । সর্ববিষয়ে ট্রল করার প্রবণতা উদ্বেগজনক হারে বেড়েছে । আমি চেষ্টা করেছি ঘটনার গভীরে যেতে , খুব গভীরে যেতে হয়নি তার আগেই সম্ভবত এই বিকৃতির অন্যতম কারণ আবিস্কার করে ফেলেছি । 

শোশ্যাল মিডিয়ার কল্যানে সর্বস্তরের মানুষই কিন্তু এখন পার্ফর্মার । শাহরুখ খান থেকে শুরু করে হিরো আলম , টিকটক অপু সকলেই পার্ফর্মার । তো আপনি নিজেও যখন একজন পার্ফর্মার , আপনার থেকে মেধা, মনন এবং যোগ্যতায় এগিয়ে থাকা পার্ফর্মারকে আপনি সহ্য করতে পারেন না ! আপনি এমন কাউকে সামনে রাখতে চান যে আপনার তুলনায় খুবই নীচু যোগ্যতার ! যে সামনে থাকলে নিজেকে সুপিরিয়র ভাবতে আপনার সুবিধা হয় ।
 
এই যে হিরো আলম যা ই করে না কেন তার কেন মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয় ? এটা কি তার জনপ্রিয়তা ? তা কিন্তু নয় , এই যে তার অশিক্ষা এবং আনাড়ীপনা দিয়ে একেক প্রচেষ্টা , সেটা দেখে বাকি পার্ফর্মাররা নিজেকে সুপিরিয়র ভাবার সুযোগ পায় । হাসাহাসি করে , ট্রল করে আনন্দ পায় । ভেবে দেখুনতো দেশে যে এতো বড় মাপের সংগীত শিল্পী রয়েছেন শেষ কবে তাঁদের কোন গান মিলিয়ন ভিউ হয়েছে ? কারণ তারা পার্ফর্মার হিসাবে প্রশিক্ষিত এবং সুপিরিয়র , তাদেরকে ট্রল করার সুযোগ নেই , সুতরাং এড়িয়ে যাওয়াটাই শ্রেয় । 

শপিং মল , ফেরীঘাট সব খানের ভীড়ভাট্টা নিয়ে নিন্দার ঝড় বয়ে যাচ্ছে । ছোটলোক , অশিক্ষিত, মুর্খ বলে ট্রল করা হচ্ছে ! ওদিকে গুলশান বনানীতে শপিং এর চাপে বাইরে বেরই হওয়া যায় না , সেটা নিয়ে ট্রল হওয়া তো দূরের কথা , টু শব্দটিও কেউ করে না ! ঐ যে সুপিরয়রদের নোটিস না করাটাই আরামদায়ক , তাই ! নিজের ছোট্ট গন্ডিতে বসে নিজেকে রাজা ভাবার এই সুযোগ কি হাতছাড়া করা যায় ? কোভিড নিয়ে খোদ বিশ্ব স্বাস্থ সংস্থা যেখানে কনফিউজড , এখানে হাতে একটা ফোন নিয়ে বিজ্ঞের মত সকলে মাস্ক পরে কোভিড ঠেকিয়ে দিচ্ছেন ! সন্ধ্যায় পার্কে মাস্ক পরে দৌড়ানোর সময় আমার প্রায়শই প্রশ্ন করতে মন চায় -ভাই আপনাদের মাথায় মাস্ক পরে দৌড়ানোর বাধ্যবাধকতা দেওয়ার বুদ্ধিটা কি করে আসলো ? এর ফলে ফুসফুসে যে ভয়ানক চাপ পড়ে , সেটা সামলানোর বুদ্ধি জানা আছে তো ?
 
যেইসমস্ত বড় মাপের সংগীত শিল্পীকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি , তাঁদের সকলেরই নিজের স্টুডিও রয়েছে , কিন্তু তাঁরা নতুন গান করছেন না । আমি বলব নতুন গান করবার মোটিভেশন পাচ্ছেন না ! হিরো আলম, মাহফুজুর রহমানের মিলিয়ন ভিউ এর গানের (?) বিপরীতে তারা আসলে কিইবা করতে পারেন ! 

ঘরে ঘরে এখন গায়ক, নায়ক , সংবাদ কর্মি । সবাই যদি পার্ফর্ম করে দর্শকটা আসলে কে হবে ? ফলে নতুন এক শ্রেণীর উৎপত্তি হলো , সেটা হল ট্রলবাজ শ্রেণী । এরা যেকোন ভাল উদ্যোগকে সযত্নে এড়িয়ে গিয়ে ওঁত পেতে থাকে ট্রল করবার যোগ্য ঘটনা বা কন্টেন্ট এর অপেক্ষায় । সেটা যদি নাও পাওয়া যায় তখন সুস্থসুন্দর ঘটনার  ভেতরেও খারাপ খোঁজার চেষ্টা করে , যে কোন মুল্যে ট্রল করতে না পারলে তাদের যে আর কোন কাজই থাকে না ! 

ফলে অসুস্থতা যখন চরমে তখন মা-ছেলের নির্মল এক ছবিতেও সমস্যা খুঁজে বের করে তারা । এখানে ধর্মিয় বিষয় এসেছে বলে একবাক্যে ঘটনাটিকে সাম্প্রদায়িকতা বলতে সুবিধে হচ্ছে । অথচ ব্যক্তি পর্যায়ে একেকজন মানুষ যে কোন না কোন ভাবে সাম্প্রদায়িক এবং একমাত্র নিজেকে সঠিক এবং বাকিদের বেঠিক প্রমাণ করতে চাওয়াটাই যাদের কাজ , সেটা আমরা লক্ষ করছি না ! 

এতোক্ষণ তো সমস্যা দেখালাম । উত্তরণের পথ কি নেই তাহলে ? পথ একটাই , আরেকটি রেনেসাঁ। এ্যাপ্রিসিয়েশন না থাকলেও নিজের ভাল কাজগুলোকে জারি রাখতে হবে । ১৫ শতকের অন্ধকার যুগে দ্য ভিঞ্চি বা মাইকেলঅ্যাঞ্জেলোরা যদি কাজ না করে অ্যাপ্রিসিয়েশনের আশায় বসে থাকতেন , পৃথিবীর শিল্পমাধ্যমের এই যুগান্তরারী উন্নয়ন কি আদৌ সম্ভব হতো ? 

মানতে হবে আমরা ইতিমধ্যেই ঘোর অন্ধকারে নিমজ্জিত । ক্রমেই সত্য-সুন্দরের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে আসছে । তবুও অটল বিশ্বাসের আলোকবর্তিকা হাতে কাউকে না কাউকে দাঁড়িয়ে থাকতেই হবে ।

[embed]<div id="fb-root"></div> <script async defer crossorigin="anonymous" src="https://connect.facebook.net/en_US/sdk.js#xfbml=1&version=v10.0" nonce="BsEpIjfj"></script> <div class="fb-post" data-href="https://www.facebook.com/masud.ujjal/posts/10223984076246036" data-width="500" data-show-text="true"><blockquote cite="https://www.facebook.com/masud.ujjal/posts/10223984076246036" class="fb-xfbml-parse-ignore"><p>চঞ্চল চৌধুরী তাঁর মা এর সঙ্গে অসামান্য এক ছবি পোস্ট করে সোশ্যাল মিডিয়াতে সাম্প্রদায়িক আক্রমণের স্বীকার হয়েছেন । তাঁদের...</p>Posted by <a href="https://www.facebook.com/masud.ujjal">Masud Hasan Ujjal</a> on&nbsp;<a href="https://www.facebook.com/masud.ujjal/posts/10223984076246036">Sunday, May 9, 2021</a></blockquote></div>[/embed]

আমারসংবাদ/এডি