আমার সংবাদ ডেস্ক
জুলাই ২৩, ২০১৯, ০৭:০৫ এএম
স্বপ্ন মানুষের একটি মানসিক অবস্থা, যাতে দ্রষ্টা নিজেই ঘুমন্ত অবস্থায় বিভিন্ন কাল্পনিক ঘটনা অবচেতনভাবে অনুভব করে থাকে। ঘটনাগুলি কাল্পনিক হলেও স্বপ্ন দেখার সময় সত্যি বলে মনে হয়।
অধিকাংশ সময় স্বপ্নদ্রষ্টা নিজেই সেই ঘটনায় সাক্ষী বলে মনে করতে থাকে।
স্বপ্ন হল ধারাবাহিক কতগুলো ছবি ও আবেগের সমষ্টি যা ঘুমের সময় মানুষের মনের মধ্যে ভাসে। এগুলো কল্পনা হতে পারে, অবচেতন মনের কথাও হতে পারে।
স্বপ্নের শ্রেণীবিন্যাস করা আসলে বেশ কষ্টকর। সাধারনত মানুষ অনেক স্বপ্ন দেখে, তবে বেশীরভাগই জাগ্রত অবস্থায় হারিয়ে ফেলে।
স্বপ্ন মূলত মানুষের গোপন আকাঙ্ক্ষা ও আবেগের বহিঃপ্রকাশ। এটি মানুষের মেমোরি গঠন, সমস্যা সমাধান এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয়করণ করতে সাহায্যও করে।
এটি মূলত কল্পনা। তারপরেও আমরা কি স্বপ্ন দেখতে ছাড়ি? হয়ত না। তবে, স্বপ্নও আমাদের ছাড়তে চায় না। তাই দুই চোখের পাতা এক করলেই আপনাআপনি মনের আয়নায় ভেসে ওঠে আকাশ কুসুম ছায়াছবি। তাকে না যায় ধরা, না যায় ছোঁয়া।
শুধু অনুভবের মাধ্যমে রোমন্থন করা ছাড়া স্বপ্নের কোন গতি নেই। কিন্তু অদ্ভূত লাগে যখন ঘুম ভাঙে দিনের আলোর ফোটার সঙ্গে সঙ্গে স্বপ্নও উধাও হয়ে যায়! যদিও কিছু কিছু স্বপ্নের রেশও অনেক সময় মস্তিষ্ক ধরেও রাখে।
ঘুম থেকে ওঠার পর তখন আমরা নিজে নিজে ভাবতে বসি, কেন এমন স্বপ্ন দেখলাম? তাই না!
যাইহোক, জীবনে অনেক স্বপ্নইতো দেখেন, কখনও কি সাপের স্বপ্ন দেখেছেন? এই ধরুন, চার দিক থেকে এঁকেবেঁকে ধেয়ে আসছে নানা প্রজাতির সাপ। কেউ হয়ত দু’ফাঁক করা জিভ বার করে ঘ্রাণ নিচ্ছে আপনার।
অথবা কেউ আবার ছোবল মারতে উদ্যত হয়ে ফোঁস ফোঁস করছে।
ওই সময় আপনি পালানোর চেষ্টা করেও পারছেন না। আবার কখনও হয়ত এমন স্বপ্নও দেখেছেন, সাপকে পিটিয়ে মারার প্রাণপণ চেষ্টা করছেন। কিন্তু পারছেন না।
আর যদি মেরেও ফেলেন তা হলে একটা ভয় কাজ করছে প্রতিনিয়ত। এই ভেবে যে, এটা কী করলাম! সাপটির সঙ্গীনি হয়ত সর্বক্ষণ লক্ষ রাখছে আপনার দিকে। এমন সব স্বপ্ন দেখার পর ঘুম থেকে উঠেও তার রেশ থেকে যায়।
মনের ভিতর দুশ্চিন্তা কাজ করে। ভাবেন, এমন অশুভ স্বপ্ন কেন দেখলাম!
প্রথমে বলে রাখা ভাল, হিন্দু রীতি অনুযায়ী সাপের স্বপ্ন কিন্তু অশুভ নয়। সাপকে শক্তি এবং রূপান্তরিত ভাবনার প্রতীক হিসাবে ধরা হয়।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, সাপের স্বপ্ন দেখছেন মানে কোথাও আপনার ব্যক্তি চরিত্র পরিবর্তন হচ্ছে। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের উপজাতিরা এবং আদি আমেরিকানরা বিশ্বাস করেন, ইচ্ছাশক্তির প্রতীক হল সাপ।
সাপ যেমন নিজের খোলস ত্যাগ করে নতুন রূপ পায় তেমনই সাপের স্বপ্নের মধ্যে লুকিয়ে থাকে আপনার পরিবর্তিত রূপ।
আবার পুর্নজন্ম, সমৃদ্ধি এবং উর্বরতা এই লক্ষণগুলো খুঁজে পাওয়া যায় সাপের স্বপ্নেই।
তবে অস্ট্রিয়ার মনোবিজ্ঞানী সিগমুন্ড ফ্রয়েডের ‘দ্য ইন্টারপ্রিটেশন অব ড্রিমস’ বইয়ে স্বপ্নের যে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, সেখানে বলা হয়েছে বাস্তব জীবনের সঙ্গে অধিকাংশ স্বপ্নের মিল থাকে।
ফ্রয়েডের মতে, দুটি মানসিক পরিস্থিতিতে স্বপ্ন দেখি আমরা। প্রথমত, আমাদের অবচেতন মনে যে সুপ্ত ইচ্ছা লুকিয়ে থাকে তাকে স্বপ্নের মাধ্যমে প্রবলভাবে পূরণ করার চেষ্টা করি আমরা। আর দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা।
মূলত স্বপ্নের মাধ্যমে আমরা ‘স্বার্থ সিদ্ধির জন্য’ ইচ্ছাকে দমনও করি।
মোদ্দা কথা, সব স্বপ্ন আসলে কোনও না কোনও ভাবে ইচ্ছাপূরণের বাসনা থেকেই উদ্ভূত। সেটা ইতিবাচক বা নেতিবাচক দুটোই হতে পারে।
ফ্রয়েডের তত্ত্ব অনুযায়ী, আপনি যে সাপের স্বপ্ন দেখার পিছনে, বাস্তব জীবনের কোনও উদ্বেগ, ভয় বা ক্রোধ জন্মেছে এমন ঘটনার যোগ রয়েছে।
সেগুলি অবচেতনে সুপ্তবস্থায় ছিল। তাই, স্বপ্ন দেখার পর যদি মনে দাগ কেটে থাকে, তাহলে ভয় না পেয়ে এ বার স্বপ্নের সূত্রগুলি সত্যান্বেষীর মতো খুঁজতে থাকুন।
সূত্র- জি নিউজ
জেডআই