Amar Sangbad
ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫,

লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনী

আমার সংবাদ ডেস্ক

ডিসেম্বর ১২, ২০১৭, ০৮:১৫ এএম


লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনী

মধ্যযুগের ইরানি কবি নিজামী তার কাব্য লায়লি-মজনুর জন্য ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। আরব মিথ ‘লায়লা-মজনু’ অবলম্বনে তিনি তার কাব্য রচনা করেন। অধরা প্রেমের এক বিয়োগস্ত গাথা এ কাব্য। কাব্য লিখিত হওয়ার আগে শতাব্দী থেকে শতাব্দীতে এই মিথ আরবে প্রচলিত ছিল।

প্রেমের ইতিহাসে, বিশেষ করে এই উপমহাদেশীয় মুসলিম সমাজে কালজয়ী হয়ে উঠে দুইটি চরিত্র, লায়লী ও মজনু। স্বর্গীয় প্রেমের প্রতীক মানা হয় এই জুটিকে। বলা আছে, লায়লার পিতা মজনুকে আহত করলে লায়লারও আহত হতো, এমননি ছিল তাঁদের সেই স্বর্গীয় প্রেম।

এই দুই প্রেমিক-প্রেমিকা পড়ালেখা ভুলে শুধু প্রেমের পাঠ নেয়। অন্য কিছু ভালো লাগে না। এ কথা মা জানলে লাইলীর পাঠশালায় যাওয়া বন্ধ করে দিলেন।মজনুর কাছে পত্র লেখে বলে এজন্য কলম ভেঙে ফেলেন মা। লাইলীকে দেখার জন্য মজনু অন্ধ ভিখারির বেশ ধরে লাইলীর বাড়িতে গিয়ে দেখা করে। পিতা তা জানতে পেরে মজনুকে মেরে তাড়িয়ে দেন। মজনুর বদনাম ছড়িয়ে যায় সবখানে।

বেদনায়, বিরহে মজনু পাগল হয়ে যায়। বাবা অনেক বুঝিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসেন। কিন্তু মজনুর উন্মত্ততা কাটে না। মজনুর বাবা আমির লাইলীর বাবা সুমতির কাছে বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যান। পাগলের কাছে মেয়ে বিয়ে দিতে অস্বীকার করেন লাইলীর বাবা। অনেক অনুরোধের পর রাজি হন লাইলীর বাবা। মজনু বিবাহ আসরে আসে। লাইলীর কুকুর দেখে তাকে জড়িয়ে ধরে, চুম্বন করে এবং কুকুরের রূপের প্রশংসা করে মজনু। বিয়ে ভেঙে যায়।

আবার কাপড়-চোপড় খুলে ফেলে বনে চলে যায় মজনু। সারা পৃথিবীতে সে শুধু লাইলীকে দেখে। অন্যদিকে লাইলীও মজনুকে ভুলতে পারে না। তার চিন্তায় শুধুই মজনু। লাইলীকে জোর করে বিয়ে দেয়া হয় ইবনে সালামের পুত্রের সঙ্গে। কিন্তু লাইলী স্বামীকে গ্রহণ করে না। মজনুর বিরহদশা দেখে নয়ফলরাজ লাইলীর বাবাকে যুদ্ধে পরাজিত করে লাইলীকে নিয়ে আসেন।

কিন্তু রূপান্ধ নয়ফল নিজেই বিয়ে করতে চান লাইলীকে। তিনি মজনুকে হত্যা করতে গিয়ে নিজেই বিষমিশ্রিত সুরা পান করে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। লাইলী চলে যায় পিতার সঙ্গে। মজনু ফিরে গেল তার অরণ্যবাসে।

স্বামী মারা যাবার পর, যদিও লায়লা মজনুর কাছে ফিরে আসে, কিন্তু প্রচন্দ দুঃখ আর অনাহারে মজনু মারা যায়। লায়লাও তাঁর ভালোবাসা মজনুর পথ অনুসরণ করে। মৃত্যুর পর তাদের পাশাপাশি সমাধিস্থ করা হয়। ‘দুই দেহ এক আত্মা,’ নামক বহুল প্রচলিত কথা এই যুগলের অনুপ্রেরণা পাওয়া। স্বর্গে গেয়েও ভালবাসার মানুষকে চাওয়ার তৃষ্ণার্ত হৃদয়ের আকুতি এই কাহিনীকে অমর করে রেখেছে।

লাইলী-মজনু প্রেমকাহিনী পৃথিবীর মুসলমান জাতির কাছে ঘরোয়া এবং এক অনুপম সম্পদ। এটি বংশপরম্পরায় ধরে রাখা ঐতিহ্যেরই অংশ। এখনও এই প্রেমকাহিনীর আবেদন কমে যায়নি মুসলমানের অন্তর থেকে। তাই বলে এই কাহিনী একেবারেই কোনো সম্প্রদায় বিশেষের হয়ে থাকেনি। কবিদের হাতে শব্দে-ছন্দে, সুরে-তালে সম্প্রদায়কে ছাড়িয়ে আপামর মানুষের প্রাণের সম্পদ হয়ে উঠেছে। কেউ প্রেমে পাগল হলে কিংবা প্রেমের উন্মত্ততা বোঝানোর জন্য মজনু বলা হয়। আদর্শ প্রেমের উদাহরণ হিসেবে কোনো কিছু বলতে গেলে প্রথমেই আসে লাইলী-মজনুর নাম।

বাঙালি মুসলমানের জীবনে আজ পর্যন্ত যত গল্প-উপাখ্যান শেকড় গেড়ে আছে তার মধ্যে এই লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনী একটি উল্লেখযোগ্য আখ্যান। বাঙালির কাছে রাধা-কৃষ্ণ, শিরি-ফরহাদ, ইউসুফ-জোলেখার প্রেমের গল্প যেভাবে পরিচিত লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনীও তেমনি পরিচিত। গল্পটি এত গভীরভাবে বাঙালি জীবনে আলোড়ন তুলেছে, বাঙালির আত্মগত ভালোবাসার অংশ হয়ে উঠেছে যে কল্পনার এই দুই নর-নারী আপনের চেয়ে আপন আজও বাঙালি জনজীবনে।

প্রেমের মধ্য দিয়ে আল্লাহকে পাওয়ার যে সাধনা সুফি সাধকরা করেছেন তাতে বিরহের আগুনে পুড়ে খাঁটি হওয়ার দিকেই তারা জোর দিয়েছেন সমধিক। নজরুলের সেই বিখ্যাত গান, 'লাইলী তোমার এসেছে ফিরিয়া মজনু গো আঁখি খোল' শ্রোতার কানের ভেতর দিয়ে মনের ভেতরে ভাবাবেগ তৈরি করে এবং একইসঙ্গে চোখের সামনে মরু প্রান্তর অরণ্যের ভেতর দিয়ে ছুটে চলা বিরহী মজনুর একটি দৃশ্যমানতাও তৈরি হয়ে যায়। তখন এই কাহিনী সত্য কি মিথ্যা, কল্পনার না বাস্তবের তা গৌণ হয়ে ওঠে। শুধু বুকের ভেতরে বেদনার লু হাওয়া বয়ে যায় অতৃপ্ত প্রেমিক-প্রেমিকার জন্য।

সমাজ যাদের ব্যথা বোঝেনি, পরিবার যাদের প্রেমকে স্বীকার করেনি। বঞ্চিত দুইটি জীবন ঝরে গেছে পরিণয়হীন। আজও অনেকেই বিশ্বাস করেন যে, বেহেশতে লাইলী-মজনুর বিয়ে অনুষ্ঠিত হবে। এ নিয়েও অনেক কিংবদন্তি চালু আছে এ দেশে। এভাবে একটি প্রেমের কাহিনী মানুষের কাছে পবিত্র এক বন্ধনের প্রতীক হয়ে উঠেছে। অথচ এই কাহিনী কার কলমে কিংবা কল্পনায় প্রথম অঙ্কুরিত হয়েছিল তার কোনো ঐতিহাসিক প্রমাণ আজও মেলেনি। কাহিনীর স্থান-কাল-পাত্র আরবীয় হলেও আরবীয় সাহিত্যে এ আখ্যানের কোনো পরিচয় পাওয়া যায় না। হয়তো আরবের কোনো মৌখিক কাহিনী ফারসি কবিদের হাতে এমনতর অমর প্রেমের কাহিনী হয়ে উঠেছে। বাঙালি জীবনে যেভাবে এ গল্পটি বেড়ে উঠেছে তার পেছনে বাঙালি কবি দৌলত উজির বাহরাম খানের নাম জড়িয়ে আছে।

দৌলত উজির বাহরাম খানের কাব্যের নাম 'লাইলী-মজনু'। কাব্যটি ১৫৪৩ থেকে ১৫৫৩ সালের মধ্যে লিখিত হয়েছে বলে পণ্ডিতরা অনুমান করেছেন। লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনীও অধ্যাত্ম প্রেমের উদাহরণ রূপে টিকে আছে বাঙালি জনপদে। শুধু তা-ই নয়, প্রেমকে চিরন্তন এক সত্যের প্রতীক ধরে জীবনের মোক্ষলাভের নিয়ামক হিসেবে যে ধারণাটির জন্ম হয়েছে তার উৎসে রয়েছে লাইলী-মজনুর অমর প্রেমকাহিনী।

বাংলাদেশে যেভাবে মথুরা-বৃন্দাবনের 'রাধা-কৃষ্ণ' বাঙালির হয়ে উঠেছে, তেমনি আরব দেশের প্রেক্ষাপটে কল্পিত লাইলী-মজনুও বাঙালি জীবনের অংশ হয়ে সবার অন্তরে ঠাঁই করে নিয়েছে। এর প্রভাব এতটাই ব্যাপক হয়েছিল যে, ছেলেমেয়েদের নাম রাখার ক্ষেত্রেও লাইলী-মজনু প্রাধান্য পেত। বাংলাদেশে ইসলাম ধর্মের বিস্তারের পাশাপাশি সুফি মতবাদেরও ব্যাপক প্রসার ঘটেছিল। প্রেমের মধ্য দিয়ে পরম সত্যকে পাওয়ার সাধনায় তাই বিভিন্ন প্রণয় কাহিনীর চরিত্রগুলো আধ্যাত্মিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে। সৃষ্টি অর্থাৎ মানুষকে সুফিরা বলতেন 'আশেক' এবং স্রষ্টাকে বলতেন 'মাশুক'।

আশেক সবসময়ই মাশুকের দিকে ধাবিত হয়। যেমন রাধা ধাবিত সারাজীবন কৃষ্ণের দিকে। অর্থাৎ সৃষ্টি অপূর্ণ বলে সবসময়ই পূর্ণতার প্রতীক স্রষ্টার দিকে ছুটে চলে। মিলনের মধ্যে এর পরিসমাপ্তি ঘটে না। বিরহের মধ্য দিয়ে, চিত্তের অনবরত দহনের মধ্য দিয়ে সেই পরম সত্যকে খোঁজার মধ্যেই চরম আনন্দ নিহিত। তাই লাইলীর সঙ্গে মজনুর বিয়ে হয়নি। একটার পর একটা বাধা এসেছে।

এই বাধা কখনও সমাজ থেকে উদ্ভূত, কখনও আবার প্রেমিক-প্রেমিকার অন্তরের ভেতরে থেকেই সৃষ্টি হয়েছে। বাহরাম খানের হাতে লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনী লৌকিক জীবনের অনুষঙ্গে বাঙালির ঘরোয়া জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে; কিন্তু আবহমানকাল ধরে চলে আসা এ প্রেমকাহিনীর পবিত্রতা এতটুকুও মলিন হয়নি। বাহরাম খানের গল্পের নারী-পুরুষ আরবের, কিন্তু এদের গড়ন-গঠনে বাংলাদেশের মানুষের বেদনার অনুরণন প্রতিমুহূর্তে ধ্বনিত হয়। বাহরাম খানের কাব্যের পরিবেশ মরুপ্রান্তরের নয়, একেবারেই শ্যামলিমা বাংলার ছায়ায় ছায়ায় রচিত হয়েছে।

দৌলত উজিরই প্রথম কবি যিনি মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ধারায় এই লাইলী-মজনুর কাহিনী সংযোজন করেছিলেন। তিনি মুখে মুখে শোনা লাইলী-মজনুর গল্প এবং ফারসি সাহিত্যের কবি নিজামি, খসরু কিংবা আবদুর রহমান জামির কাহিনী মিলিয়ে তার আখ্যান রচনা করেছিলেন। বাহরাম খানের পর বাংলা ভাষায় 'লাইলী-মজনুর' প্রেমকাহিনী নিয়ে আরও অনেক গ্রন্থ লেখা হয়েছে।

পুঁথিসাহিত্যের কবি মুহম্মদ খাতের (১৮৬৪), আবুজদ জহিরুল হক (১৯৩০), ওয়াজেদ আলী (১৯৪৪) রচিত লাইলী-মজনু কাব্য গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে বহুল পঠিত ছিল। গদ্যে লেখা 'লাইলী-মজনু' আখ্যানের রচয়িতারা হলেন_ মহেশ চন্দ্র মিত্র (১৮৫৩), শেখ ফজলুল করিম সাহিত্য বিশারদ (১৯০৩), আবদুল গফুর সিদ্দিকী অনুসন্ধান বিশারদ, শাহাদাৎ হোসেন, মীর্জা সোলতান আহমদ, দ্বারকানাথ রায় (১৮৫৯), (নাটক) রাজকৃষ্ণ রায় (১৮৯১)। বাংলায় রচিত লাইলী-মজনুর কাহিনীর উৎস ফারসি ধরা হলেও কে প্রথম এ কাহিনীর আদি রচয়িতা তা জানা যায় না। ড. আহমদ শরীফের মতে, দশ শতকের ইরানি কবি রুদকির কবিতাতেই সম্ভবত প্রথম লাইলী-মজনুর প্রেম প্রসঙ্গ পাওয়া যায়। ফারসি ভাষায় নিজামি গঞ্জাবি (১১৮৮), আমির খসরু (১২৯৮), আবদুর রহমান জামি (১৪৮৪), আবদুল্লাহ হাতিভী (১৫১১), হিলালী আস্ত্রাবাদী (১৫৩৩), দামিরী (১৫২৪-৭৬), মীর্জা মুহম্মদ কামে কাসেমী গুনাবাদী (১৫৭২) প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এসব কবির লেখার মধ্য দিয়ে যে অমর প্রেমিক-প্রেমিকা বেড়ে উঠেছে তা বাঙালি কবি বাহরাম খানের হাতে এসে বাঙালির চিরন্তন প্রেমের আদর্শ উদাহরণ হয়ে উঠেছে।

'লাইলী-মজনু' আখ্যান কাব্যে আমরা দেখি যে লাইলী-মজনু কেউই পরিবার-পরিজনের অবাধ্য হয়নি। প্রেমের প্রতি তারা একনিষ্ঠ থেকেছে; কিন্তু এই একনিষ্ঠতা সমাজ-ধর্ম, সামাজিক নিয়মকে ভূলুণ্ঠিত করে সংঘটিত হয়নি। তারা নিজেরা বেদনার্ত হয়েছে, বঞ্চিত থেকেছে, অনবরত রক্তাক্ত হয়েছে হৃদয় বেদনায়; কিন্তু তা সমাজবিধ্বংসী আবহ তৈরি করেনি। তাদের ক্রন্দনধ্বনি বিরহী হিয়ার নিদারুণ যন্ত্রণাকে প্রকাশ করেছে। একেকটি ঋতু আসে আর সে ঋতুর প্রাকৃতিক পরিবেশে প্রেমিক-প্রেমিকার বিরহ অনল দ্বিগুণ হয়ে জ্বলে। বাঙালি করুণ রসের ভেতরে ডুবে থাকতে যে আনন্দ পায় তার পরিচয় এই কাহিনীতে লভ্য।

যেমন রাধাকৃষ্ণের প্রেম ব্যাকুলতার সঙ্গে প্রকৃতির ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, তেমনি লাইলী-মজনুর বিরহার্তিকে তুলে ধরার জন্য বাহরাম খান ষড়ঋতুর আশ্রয় নিয়েছেন। বৈষ্ণব পদাবলীর মতোই এদের কানেও পরস্পরের নাম মধুবর্ষণ করে। বেঁচে থেকেও এরা কেঁদেছে বিরহে, মৃত্যুর পরও তারা কাঁদিয়েছে শ্রোতাকে। যে প্রেম হয়েছিল শৈশবের প্রথম দেখায়, যৌবনের প্রখর বসন্তে তার তীব্রতা বেড়েছে; কিন্তু যন্ত্রণাকে অঙ্গাবরণ করে।

তবে ফারসি কবিদের হাতে একেবারেই কাম-গন্ধহীন আধ্যাত্মিক যে প্রেমকাহিনী লাইলী-মজনুকে ঘিরে রচিত হয়েছে, তা বাঙালি কবির হাতে ঘটেনি। বাঙালি কবির প্রেমের প্রেরণা রাধাকৃষ্ণের প্রেমকাহিনী। সমাজের বাধা প্রেম প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে সমাজ ও প্রেমের দ্বন্দ্ব নিয়ে নানা গান রচিত হয়েছে। সাধারণ মানুষের জীবনের কোনো মহত্তম উপলব্ধি হয়তো তাতে নেই; কিন্তু জীবনের সরলতম স্বীকারোক্তির পরিচয় সেখানে মেলে। যেমন_ আমাদের কিশোর বেলায় গ্রামের গায়েনদের কণ্ঠে শুনতাম, 'বন্ধু জানিয়া জানলা না, বন্ধু শুনিয়া শুনলা না, নষ্ট করল পাড়ার লোকে বন্ধু ভাঙল পিরিতি।'

এই পাড়ার লোকের কথা বৈষ্ণব পদাবলীতে আছে, লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনীতেও আছে। বাস্তব জীবনকে কেন্দ্র করে লাইলী-মজনুর প্রেমকাহিনী বেড়ে উঠেছে বলেই তা কখনও ফারসি কাব্যের অন্ধ অনুকরণ হয়ে থাকেনি। লাইলী-মজনু রক্ত-মাংসের মানুষ হয়ে উঠেছে। তাদের জীবনেও বসন্তের পত্রপুষ্প শোভা মিলনের আহ্বান নিয়ে আসে।

কিন্তু ভালোবাসার মানুষটিকে অনেক বড় করে দেখে বলেই আটপৌরে বাসনা তাদের গ্রাস করতে পারে না। বাংলাদেশে হতাশাগ্রস্ত প্রেমিক-প্রেমিকারা যেমন সংসারবিমুখ, তেমনি মজনু ঘর ছেড়ে বিবাগী হয়ে যায়_ এটি বাঙালির গৃহত্যাগী মানসিকতার ঐতিহ্যকেই তুলে ধরে। তাই আরবের লাইলী-মজনু বাংলার জলে-কাদায় মিলেমিশে বাঙালির প্রেম-ভালোবাসার চিরন্তন নিদর্শন হয়ে আছে।