Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা

রনি আকন্দ, কালাই (জয়পুরহাট) 

ডিসেম্বর ১৩, ২০২০, ০২:১৫ পিএম


লাল-সবুজের ফেরিওয়ালা

আর মাত্র দুদিন পরেই ১৬ ডিসেম্বর। বিজয়ের চেতনায় এ মাসের শুরু থেকেই জাতীয় পতাকার ব্যবহার বেড়ে যায়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর জন্ম হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের। এই ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসে এটি চূড়ান্ত বিজয়ের রূপ ধারণ করে। এই দিনটিকে সামনে রেখে জয়পুরহাটের কালাই উপজেলায় জাতীয় পতাকার বেচাকেনা অনেক ধুম পড়েছে। 

পতাকার ফেরিওয়ালারা উপজেলায় বিজয় দিবসের আগমনী বার্তা বহনের বড় একটি ভূমিকা পালন করেন। এ ডিসেম্বরে অন্যরকম ফেরি চলে সারা বাংলায়। এ ফেরিওয়ালারাও বর্তমান উত্তরসূরিদের রেখে যাওয়া খেদ নিয়ে সংসার চালাতে একখন্ড লাল-সবুজ ভালোবাসা ফেরি করে বেড়ান। তাতে আর্থিক লাভ আছে। অবশ্য শুধুই লাভ থেকে তারা এটা করেন না। এর মাঝে একখন্ড কাপড়ের প্রতি ভালোবাসাও জড়িত। এ থেকেই তাদের এ ফেরির সুখ! তাদেরও অন্য বাংলা দেখতে ইচ্ছে হয়। এ ইচ্ছার অংশ এমনতর ফেরিওয়ালা বেশ। জাতীয় জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সেই দিনটিকে কেন্দ্র করে চারদিকে লাল-সবুজের ফেরিওয়ালাদের কাঁধে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে পতাকা। 

ফেরিওয়ালারা উপজেলার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ঘুরে ঘুরে জাতীয় পতাকা বিক্রি করছেন বিজয়ের নিশান। কয়েক ফুট লম্বা বাঁশের ওপর থেকে নিচ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে বড় থেকে ছোট আকারের জাতীয় পতাকা সাজিয়ে পথে পথে পায়ে হেটে ঘুরে ঘুরে পতাকা বিক্রি করছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। তাদের কাঁধে উড়ছে আমাদের বিজয়ের নিশান। তারা শহরের অলিগলিতে হাঁকডাক দিয়ে বিক্রি করছেন দেশের জাতীয় পতাকা। এক একটি বাঁশের বাহারি সাইজের পতাকা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। কেউ কেউ ডাক দিয়ে দেখছেন পতাকা। সাইজের সঙ্গে দামে মিললেই কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। নির্ধারিত মাপে কাপড়ের পতাকার পাশাপাশি কাগজ দিয়ে তৈরি পতাকাও বেশ বিক্রি হচ্ছে। 

ফরিদপুর জেলা থেকে কালাই উপজেলাতে পতাকা বিক্রেতা করতে আসা আজামুল ও রাশেদুলের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জীবিকার জন্যই শুধু এই পতাকা বিক্রি করা নয়। এই পেশার মধ্যে রয়েছে দেশাত্মবোধ ও দেশপ্রেম। প্রতিবছর বিজয় দিবস উপলক্ষে তারা ফেরি করে পতাকা বিক্রি করেন। আর বিজয় দিবস যতই ঘনিয়ে আসে ততই তাদের জাতীয় পতাকা চাহিদা বেড়ে যায়। তাদের কাছে আকারভেদে ছোট- বড় পতাকা, কাগজের ছোট পতাকা, কাগজের বিজয় স্মৃতিসংবলিত ক্যাপ, মাথায় পরার পতাকাসংবলিত রাবার ব্যান্ড, সংবলিত জাতীয় পতাকা আছে।

কালাই বাসস্ট্যান্ড চত্বরে পতাকা কিনতে আসা পলাশ, আতাউর, মামুন জানায়, এ মাস বিজয়ের মাস। আমরা লাল সবুজ পতাকার জন্য যুদ্ধ করেছি। বিজয়ের সঙ্গে পতাকা অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই পতাকা কিনতে এসেছি। আমার সন্তানের জন্য জাতীয় পতাকা ক্রয় করে আমি গর্বিত। আমি মনে করি-পতাকার মাধ্যমে শহীদদের সন্মানকে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছি। আর তারা সেটিকে অন্তরে যত্নের লালন করবে। 

উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধ অধ্যক্ষ মুনীশ চৌধুরী বলেন, ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর এই দেশ স্বাধীন করতে লেগেছে। বেঁচে থাকার জন্য ভয়াবহ যুদ্ধ করেছি। তিরিশ লাখ মানুষের জীবন ও দুই লাখের মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে জন্ম হয়েছে আমাদের এই সোনার বাংলাদেশ। আমরা পেয়েছি লাল-সবুজ পতাকা। সেই অনুভূতি আর সেই ভালোবাসা দেশের প্রতিটি মানুষের হৃদয়ে থাকার প্রয়োজন বলে তিনি মনে করেন।  

তিনি আরও বলেন, বিজয়ের এমন ক্ষণে পতাকা বিক্রি ও উড়ানোর প্রবণতাকে সাধুবাদ দিয়ে জানাই, এ অবশ্যই সুখের। তবে লক্ষ্য রাখতে হবে পতাকা যেন সুনির্দিষ্ট মাপে বানানো হয় এবং নিয়ম মেনে উড়ানো হয়।

আমারসংবাদ/কেএস