নারীদের স্বপ্ন পুরণের মাধ্যম কুমড়ো বড়ি

বাতাসে বইছে হিমেল হাওয়া, শিশিরে ভিজছে লতাপাতা। নানা রকম সবজি, পিঠাপুলী আর উৎসবের বার্তা নিয়ে আগমন হয়েছে শীতের। শীতের আমেজ যেন পল্লীতেই সাড়া ফেলে বেশি। শীত আসার সাথে সাথে যেমন উৎসবের ধুম পরে যায়, তেমনই ধুম পরে যায় কুমড়ো বড়ি বানানোর।
শীত শুধু গ্রামবাংলার উৎসব, পার্বনের ঋতু নয়, লোকায়িত ঐতিহ্যনুসারে বাংলার শীতকাল কুমড়ো বড়ির মৌসুম।
শীতের আগমনের শুরু থেকেই গ্রামবাংলার নারীরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন কুমড়োর বড়ি বানাতে। কিশোরী থেকে বৃদ্ধ সকল বয়সের নারীরা এই কুমড়ো বড়ি বানাতে অংশগ্রহন করেন। কুমড়ো বড়ি বানানো তাদের কাছে একটি উৎসবের মতো।
মাসকলাইয়ের ডাল আর চাল কুমড়ো দিয়ে বানানো হয় কুমড়োর বড়ি। মাসকলাই শুকিয়ে জাতাতে ভেঙে ডাল বানিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। সেটার সাথে চাল কুমড়ো কুরে ডাল ও কুমড়ো পানিতে ধুয়ে আলাদা শিলপাটায় পেষা হয়। তারপর শীত সকালের মিষ্টি রোদ উঠলে পেষানো কুমড়ো ও ডাল একত্রে মিশিয়ে চাটাই, নেট অথবা কাপড়ের ওপর হাতের ছোঁয়ায় লাইন করে বড়ি বানিয়ে বসানো হয়। কড়া রোদে শোকানোর পর খাওয়ার উপযোগী হয় কুমড়োর বড়ি।
যে কোনো শীতের সবজির স্বাদ যেন আরো দ্বিগুন বাড়িয়ে দেই কুমড়ার বড়ি।
এখন পল্লীর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই দেখা যায় নারীদের একত্রে কুমড়ো বড়ি বানানো এবং বাড়ির চালে চালে বড়ি শুকানোর দৃশ্য।
তবে নারীরা এখন কুমড়ো বড়ি শুধু নিজের রান্নার স্বাদ বৃদ্ধিতে ব্যবহার করেন না, পরিবারের আয়ের উৎস হিসেবেও কেউ কেউ এটিকে ব্যবহার করছেন, হয়ে উঠছেন নারী উদ্যোক্তা।
এখন শুধু বাজারে নয়, অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যায় কুমড়ো বড়ি।
নারী উদ্যোক্তা পল্লিস্বাদের ওনার কাকলী পারভীন বলেন, ছোট বেলা থেকেই কুমড়ো বড়ি অনেক প্রিয় একটি খাবার। আগে নিজের পরিবারের জন্যেই বানাতাম শুধু। পরে ভেবে দেখলাম এইটা আমার পরিবারের একটি আয়ের উৎসও হতে পারে। এজন্যই পল্লীস্বাদ নামে আমি একটি অনলাইন পেজ খুলি। এই শীতে কুমড়ো বড়িতে ভালো সাড়া পাচ্ছি।
তিনি আরও জানান, তার সাথে সাথে আরো অনেক নারীরই আয়ের উৎস হয়ে উঠেছে এই কুমড়ো বড়ি।
কুমড়ো বড়ি এখন শুধু একটি ঐতিহ্যবাহী খাবার নয়, গ্রামের নারীদের সফলতার স্বপ্ন পুরনের একটি মাধ্যম।
আমারসংবাদ/এডি