আমার সংবাদ ডেস্ক
ফেব্রুয়ারি ২২, ২০২১, ০৪:৫০ এএম
বছর ঘুরে আবারও এসেছে ফেব্রুয়ারি মাস। প্রতিবছর এই মাসটির তাৎপর্যতা তো আমরা সকলেই জানি। কিন্তু যে কারণে এই মাসটি এতো গুরুত্বপুর্ণ, সেই বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ও মর্যাদা আমরা কতোখানি রক্ষা করছি, সেই বিষয়টিই আজ প্রশ্নের সম্মুখীন। দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি, প্রতি বছর কেবল আজকের দিনটি ঘিরেই আমাদের বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষা কিংবা ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের যত আকুতি দেখা যায়। বাকী বছর জুড়ে চলে কেবল ভাষা দূষণ আর বাংলা ভাষার অপসংস্কৃতি। তাই এই কথা বলাই যায় বর্তমান সময়ে বাংলা ভাষার সৌন্দর্য ও মর্যাদা রীতিমতো হুমকির সম্মুখীন।
যুগ যতো এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে বায়ুদূষন আর ভাষাদূষণ দুটোই যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ছে এবং ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। এফএম রেডিওগুলোতে বাংলা-ইংরেজির অদ্ভুত মিশেল ও বিকৃত উচ্চারণ গুলো এখন মানুষের গা-সওয়া হয়ে গেছে। কারণ এখন কেউ আলাদা ইংলিশ কিংবা বাংলা বলে কিংবা লিখে না, এখন সবই বাংলিশ হয়ে গেছে। আগে এই বিষয়টি বুঝতে অসুবিধা হলেও এই প্রজন্মের কাছে বাংলিশ বিষয়টিই বেশি পরিচিত।
এখন দৈনন্দিন কথোপকথনে সম্বোধন হিসেবে ভাই নয় ব্রো, বোন নয় সিস, বন্ধু নয় ইয়ার কথাগুলোই বেশি প্রচলিত। এগুলো নিয়ে লেখালেখি বা প্রতিবাদ এখন কদাচিৎ বা ফেব্রুয়ারি মাসের রুটিন আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ।
ভাষা দূষণের আর একটি উপাদান অশ্লীল শব্দের ব্যবহার। বিনোদন, আনন্দ বা হাসি-ঠাট্টা মানেই কতিপয় বিশেষ বর্গীয় শব্দের সাবলীল ব্যবহার। ফেসবুক-ট্রল ও ইউটিউবের কিছু বিনোদনধর্মী ভিডিওগুলো যেন বিকৃত, অশ্লীল ও নোংরা শব্দ ও গালাগালি ছাড়া বিনোদধর্মী হতেই পারে না।
তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি এদের দর্শকপ্রিয়তা ও জনপ্রিয়তা ঈর্ষণীয়, কোনো কোনো ক্ষেত্রে এদের দর্শক সংখ্যা লাখ কিংবা কোটির ঘরে। তার মানে এই অশ্লীলতারও গ্রহণযোগ্যতা আছে ও এক শ্রেণির দর্শক এগুলো রীতিমতো উপভোগ করছেন। অথচ কমে যাচ্ছে ইত্যাদির মতো নির্মল আনন্দ-কৌতুক অনুষ্ঠানের দর্শক।
ভাষার অপসংস্কৃতির আর একটি বড় ক্ষেত্র হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যেম। যেখানে অশুদ্ধ-বিকৃত বাংলা বানানের পাশাপাশি অশ্লীল শব্দ ব্যবহার বেড়েই চলছে। ফেসবুকে যাদের হাজার বন্ধু ও অনুসারী এবং যাদের লেখা হাজারবার পড়া ও শেয়ার করা হয়, তারা যেন সচেতন ও স্বচ্ছন্দভাবে আরও অধিক বিনোদন দেওয়ার প্রচেষ্টায় অশুদ্ধ-বিকৃত ও অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করছেন। এদের কাছে জীবনটা জীবন নয় সেটা গীবন, ওকে টা অকা, কোথায় শব্দ হয়ে গেছে কুতায়। এইসব বিকৃত ও অশুদ্ধ শব্দাবলিসহ তেনা প্যাঁচানোর মতো বাজে ও আরও বিশেষ বর্গীয় অশ্লীল শব্দ ছাড়া এদের অনুভূতি প্রকাশ যেন সম্পূর্ণ হয় না।
ভাষার সৌন্দর্যহানির ক্ষেত্রে বর্তমান সময়ের বাংলা নাটক ও টেলিফিল্মের ভূমিকা উল্লেখ না করলেই নয়। বিনোদনের নামে অত্যন্ত স্থূল ভাঁড়ামি, আঞ্চলিক শব্দের যথেচ্ছ ব্যবহারে প্রমিত বাংলাকে বেশ পরিকল্পিতভাবেই বিদায় দেওয়া হয়েছে। তাই নাটকে উচ্চবিত্ত চরিত্রদের খাইসি, করসি, গেসি শব্দাবলি ও গ্রামীণ পটভূমিকার সংলাপসমূহ বিশেষ করে ময়মনসিংহের আঞ্চলিক শব্দ ‘ফিহিন্নী/ফিকিন্নী’ যেন যেকোনো পর্যায়ের মনের ভাব প্রকাশে অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
অথচ এই ময়মনসিংহের আঞ্চলিক শব্দ গুলোই এক সময় প্রয়াত হুমায়ূন আহমেদ তার নাটকে সুন্দরভাবে ব্যবহার করেছেন। যা একই সঙ্গে শিল্পমান ও আবেগ-অনুভূতি প্রকাশে ভিন্নমাত্রা সংযোজন করেছে।
কিন্তু দিন বদলের সাথে সাথে বদলে যাচ্ছে সবকিছু। বাংলা ভাষার অপসংস্কৃতির কারণে দূষিত হচ্ছে বাংলা ভাষা। তাই শুধু ২১ ফেব্রুয়ারিকে কেন্দ্র করে ভাষার জন্য আওয়াজ না তুলে সারা বছর সঠিক, শুদ্ধ ও প্রমিত ভাষার ব্যবহার করার জন্য উৎসাহী করতে বাঙালীকে। তাহলেই বাংলা ভাষা দূষণ রোধ সম্ভব।
আমারসংবাদ/এডি