Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মায়ের মুখে ৩১ বার এবং ঘাড়ে ৪৮ বার ছুরিকাঘাত করে ইসাবেলা

আমার সংবাদ ডেস্ক

জুলাই ৮, ২০২১, ০৬:৪৫ এএম


মায়ের মুখে ৩১ বার এবং ঘাড়ে ৪৮ বার ছুরিকাঘাত করে ইসাবেলা

মাত্র ১৮ বছরের এক তরুণী ইসাবেলা গুজম্যান। আর ১০ জন তরুণীর চেয়ে খানিকটা বেশিই স্বপ্ন দেখতে ভালোবাসতেন। তবে পারিবারিকভাবে তেমন সুখী ছিলেন না ইসাবেলা।

নিম্নবিত্ত পরিবারেই ইসাবেলার জন্ম। আমেরিকার কলোরোডায় বাবা-মায়ের সঙ্গেই বাস করতেন তিনি। যখন যা চাইতেন তা দেওয়ার সামর্থ্যও ছিল না তার বাবা-মায়ের। এমনকি তাদের অবস্থা বুঝতেও চাইতেন না জেদি ইসাবেলা।

নিজের খেয়াল খুশি মতোই চলাফেরা করতে ভালোবাসেন। অল্পতে ধনী হওয়ার স্বপ্নও দিন দিন বুকে লালন করে আসছিলেন। এরই মধ্যে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যায়। ইসাবেলা তার ইচ্ছা পূরণ না করায় বাবা-মা কাউকেই তেমন পছন্দ করতেন না। তারপরও মায়ের সঙ্গেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। তবে মায়ের সঙ্গে সারাক্ষণই ঝগড়ায় ব্যস্ত থাকতেন ইসাবেলা।

তার মা এক সময় ইউন মি হো রিচার্ড নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। বিয়ে করার সিন্ধান্ত নেন। তবে মায়ের সঙ্গে রিচার্ডের মেলামেশা একেবারেই পছন্দ করতেন না ইসাবেলা। এ নিয়ে মা মেয়ের ঝগড়াও হতো দিন-রাত।

বিভিন্ন সময় ঝগড়া করার এক পর্যায়ে ইসাবেলা তার মাকে মেরে ফেলার হুমকিও দিতেন। কয়েকবার রিচার্ডের সামনেই ঝগড়া করেছেন। মায়ের গায়ে থুতুও দিয়েছেন। বেশিরভাগ সময় ঘরের দরজা বন্ধ করেই থাকতেন ইসাবেলা। প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হতেন না।

ইউন মি রিচার্ডের সঙ্গে সময় কাটাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে গোসল করতে চলে যান বাড়ির উপর তলায়। এ সময় রিচার্ড নিচে বসে টিভি দেখছিলেন। কিছুক্ষণ পরই তিনি ইউন মির চিৎকার শুনতে পান। তার নাম ধরে চিৎকার করছিলেন ইউন মি।

রিচার্ড উপরে গিয়ে দেখতে পান বাথরুমের দরজা ভেতর থেকে বন্ধ আর ইসাবেলা তার মায়ের উপর ঝাঁপিয়ে পরে উপরি ঝুপড়ি ছুরিকাঘাত করছেন। রিচার্ড দরজা ভাঙার চেষ্টা করেন। এরপর তিনি নিচে এসে পুলিশকে ফোন দেন। ইসাবেলা যখন বাইরে বেরিয়ে আসেন; তখন হাতে তার মায়ের রক্তে লাল হওয়া ছুরিটিও ছিল।

সেখান থেকে ফোঁটায় ফোঁটায় রক্ত পড়ছে। আর ইসাবেলার সারা শরীরে রক্ত।

পুলিশ আসার আগেই ইসাবেলা পালিয়ে যায়। অন্যদিকে ইউন মিও মারা যায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই। বেরিয়ে আসার সময় ইসাবেলার মুখে রিচার্ড সন্তুষ্টির ছাপ দেখেছিলেন বলে পুলিশকে জানান।

এরপর ইসাবেলা পুরোপুরি বেপাত্তা হয়ে যায়। সারা শহরে ইসাবেলার ছবি পোস্টার করে লাগিয়ে দেয় পুলিশ। এমনকি পুরস্কারও ঘোষণা করে। কিছুদিন পর, এক ব্যক্তি পার্কিং লটে থাকা একটি গাড়ির ডিকিতে একটি রক্তাক্ত দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে ফোন দেন।

পুলিশ সেখানে গিয়ে দেখতে পান পুরো শরীরে রক্ত মাখা অবস্থায় সেখানে পরে আছে ইসাবেলা। সঙ্গে তার মাকে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরিটিও ছিল। পুলিশ ইসাবেলাকে গ্রেফতার করে নিয়ে আসে।

ইসাবেলা কোনো রকম বাঁধা দেননি আটক করার সময়।

এমনকি আদালতেও এমন ভাব করছিলেন যেন কিছুই হয়নি। তার সেই মুখভঙ্গি ধরা পড়েছে সাংবাদিকদের ক্যামেরায়। আটকের পর তার মেডিকেল টেস্টে ধরা পরে ইসাবেলা প্যারানয়েড সিজোফ্রেনিয়া নামক মানসিক রোগে আক্রান্ত। তিনি তার মাকে হত্যার কথাও স্বীকার করেন আদালতে।

মুখে ৩১ বার এবং ঘাড়ে ৪৮ বার মোট ৭৯ বার ছুরিকাঘাত করেন তার মায়ের শরীরে। এই সময় ইসাবেলা নিজেও কিছুটা জঘম হয়েছিলেন। চিকিৎসকরা বলেছিলেন, ছুরি চালাতে অদক্ষ হওয়ায় আঘাত করার সময় হাত ফসকে নিজের শরীরেও কিছু জঘম করে ফেলেন তিনি।

ইসাবেলা গুজম্যানকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় আদালত। সেইসঙ্গে তাকে পুয়েবলোতে কলোরাডো মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয় চিকিৎসার জন্য। পরে অবশ্য তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে ২০১৫ সালে একজন কারারক্ষীর দ্বারা যৌন নির্যাতনের স্বীকার হয়েছিলেন ইসাবেলা।

এক সাক্ষাৎকারে ইসাবেলা বলেন, তিনি স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে চান। তবে তা হয়তো কখনো সম্ভব নয়। নিজ মাকে হত্যার দ্বায়ে দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন তিনি। সেই সাজা ভোগ করবেন কারাগারে শারীরিকভাবে এবং অনুতাপের মানসিকভাবেও।

মায়ের খুন করেও ইসাবেলা যেভাবে স্বাভাবিক ও হাসিমুখে আদালতের কাঠগড়ায় উঠেছিলেন, সেসব ভিডিও ও ছবি এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে। এমনকি টিকটকেও আছে তার নামে একাধিক আইডি এবং ফ্যান গ্রুপ। টিকটক ব্যবহার না করেও জনপ্রিয় টিকটকার বনে গিয়েছেন ইসাবেলা। টিকটকে তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘সুইট বাট সাইকো’।

তার ভক্ত অনুরাগীরা ইসাবেলার ওই সময়ের বিভিন্ন ছবি ও ভিডিওর অঙ্গভঙ্গিকে অনুকরণ করে শত শত ভিডিও তৈরি করছেন। টিকটকে বর্তমানে ভাইরাল ‘ট্রেন্ড’ হয়েছে ইসাবেলা। তার সুন্দর মুখশ্রীর প্রেমে পড়ছেন অনেকেই। আবার তার ফ্যান গ্রুপের সদস্যরাও মানসিকভাবে বিকৃত বলে অনেকেই মন্তব্য করছেন।

সূত্র: মিডিয়াম

আমারসংবাদ/এডি