Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

তালেবান আসলে কারা?

আমার সংবাদ ডেস্ক

আগস্ট ১৮, ২০২১, ০৬:১০ এএম


তালেবান আসলে কারা?

আফগানিস্তান এখন তালেবান গোষ্ঠির নিয়ন্ত্রণে। ঠিক যেমন ছিল ২০ বছর আগে। ২০০১ সালে যখন মার্কিন সেনাবাহিনী ঢুকে; তখন ক্ষমতায় ছিল তালেবান। তখন দেশটির প্রেসিডেন্ট ছিলেন তালেবান নেতা মোল্লা ওমর। জানা যায়, আফগানিস্তানের ক্ষমতা থেকে তালেবানকে জোর করে সরানো হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পরিচালিত এক যুদ্ধের মাধ্যমে।

তবে ২০ বছর পর, নতুন করে সংগঠিত হওয়ার মাধ্যমে তালেবান আবারও আফগানিস্তান দখলে নিয়েছে। আগামী মাসে মার্কিন সৈন্য যুক্তরাষ্ট্রে ফেরত যাওয়ার কথা। তবে তার আগেই রক্তপাত ছাড়াই ক্ষমতা নিল তালেবান। ১৫ আগস্ট রাজধানী কাবুল দখল করেছে তালেবান। প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনিও সেদিন ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছেন।

কিন্তু এই তালেবান আসলে কারা? কীভাবে এই গোষ্ঠীর উত্থান ঘটে আফগানিস্তানে? কেমন ছিল তালেবান শাসন ব্যবস্থা?

তালেবান আসলে কারা এবং কীভাবে এর উত্থান?

পশতু ভাষায় তালেবান অর্থ হলো- ছাত্র। ১৯৯০ সালের শুরুতে উত্তর পাকিস্তানে এই তালেবান আন্দোলনের জন্ম হয়। এই আন্দোলনে মূলত পশতুন অর্থাৎ পশতুভাষীদের প্রাধান্য। ধারণা করা হয়, মাদ্রাসাগুলোতেই প্রথমে তালেবান গোষ্ঠি সংগঠিত হয়।

পাকিস্তান এবং আফগানিস্তান এই দুই দেশের সীমান্তের দু’দিকেই আছে বিস্তীর্ণ পশতুন অধ্যূষিত এলাকা। তালেবান এসব অঞ্চলে খুব দ্রুত প্রভাবশালী হয়ে উঠে। তালেবানদের প্রতিশ্রুতি হলো, ক্ষমতায় গেলে তারা শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং কঠোর শরিয়া শাসন জারি করবে।

তালেবান নেতৃত্বের কাঠামো

দক্ষিণ-পশ্চিম আফগানিস্তান থেকে তালেবান খুব দ্রুত তাদের প্রভাব সম্প্রসারিত করে। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে তালেবান ইরান সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ হেরাত দখল করে নেয়। আর এর ঠিক এক বছর পর তারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে।

তারা প্রেসিডেন্ট বুরহানউদ্দীন রাব্বানির সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠা করে। বুরহানউদ্দীন রাব্বানি ছিলেন আফগান মুজাহিদীন বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৮০-র দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে এই আফগান মুজাহিদীনরা প্রতিরোধ সংগঠিত করেছিল।

১৯৯৬ সালে কাবুল ও কান্দাহার দখল করে তালেবানরা। এরপর তারা প্রেসিডেন্ট বুরহানউদ্দিন রাব্বানির সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠা করে। ১৯৯৬-২০০১ সাল পর্যন্ত আফগানিস্তানে মৌলবাদী ইসলামিক শক্তি হিসেবে শাসন করেছিল তালেবান।

কেমন ছিল তালেবান শাসন ব্যবস্থা?

আফগানিস্তানকে নিজেদের শাসনে আনার পরই সেদেশে কঠোর ইসলামিক শাসন জারি করে তালেবানরা। পুরুষদের দাড়ি রাখা ও নারীদের বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। সেইসঙ্গে বন্ধ করে দেওয়া হয় মেয়েদের স্কুলে যাওয়া। টেলিভিশন, সংগীত, সিনেমাও নিষিদ্ধ করে তারা।

এসব প্রেক্ষাপটে তালেবানের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লংঘনের অভিযোগ ওঠে। তালেবানদের একাধিক পদক্ষেপে নিন্দার ঝড় ওঠে আন্তর্জাতিক মহলে। যদিও এবার নারীদেরকে লেখাপড়ার সুযোগসহ চাকরি করারও অনুমতি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছে তালেবান।

এরই প্রেক্ষিতে ১৭ আগস্ট থেকে নারী চাকুরিজীবীদেরও কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের রাজনৈতিক দফতরের উপ-প্রধান আব্দুস সালাম হানাফি বলেন, কারও প্রতি অবিচার করা হবে না এবং নারীরা তাদের হিজাব রক্ষা করে কর্মস্থলসহ সব কাজ স্বাভাবিকভাবে চালিয়ে যেতে পারবেন।

২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মার্কিন মুল্লুকে জঙ্গি হামলার ঘটনার মোস্ট ওয়ান্টেড ওসামা বিন লাদেনকে আশ্রয় দিয়েছিল তারা। লাদেনকে হাতে পেতে আফগানিস্তানে আক্রমণ চালায় আমেরিকা। এর ২০ বছর আফগানিস্তানে শেকড় গাড়ে আমেরিকা। তবু তালেবানমুক্ত হয়নি আফগানিস্তান।

এর মধ্যে গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তালেবানের ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

পাকিস্তানের ভূমিকা: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ যে তারাই তালেবানের নেপথ্য কারিগর। কারণ এতে কোনো সন্দেহ নেই, শুরুর দিকে যে আফগানরা তালেবান আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন; তারা সবাই পাকিস্তানের বিভিন্ন মাদরাসায় পড়াশোনা করতেন।

যদিও পাকিস্তান বরাবরই তা অস্বীকার করে এসেছে। তবে তালেবান সরকার স্বীকৃত তিন দেশের মধ্যে ছিল পাকিস্তানের নাম। আফগানিস্তানের ক্ষমতা দখলের পর তালেবানকে অন্য যে দুটি দেশ স্বীকৃতি দেয়; তারা ছিল সৌদি আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত। আর পাকিস্তান তালেবান সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক ছেদও করেছিল সবার শেষে।

আবারও তালেবান যেভাবে ক্ষমতায় এলো

২০১৩ সালে আফগানিস্তানে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার আশা তৈরি হয়। তখন তালেবান কাতারে একটি অফিস খোলার ঘোষণা দেয়। তারপরও উভয়পক্ষের মধ্যকার অবিশ্বাস থেকেই যায়। সঙ্গে সহিংসতাও অব্যাহত থাকে। এর দুই বছর পর, আগস্ট মাসে তালেবান স্বীকার করে, তাদের নেতা মোল্লাহ ওমরের মৃত্যুর দুই বছর পর পর্যন্ত এ খবর তারা গোপন রেখেছিল।

শারীরিক অসুস্থতার কারণে মোল্লাহ ওমর পাকিস্তানের এক হাসপাতালে মারা যান। এরপর তালেবানের নেতৃত্ব নিয়ে অর্ন্তকোন্দল শুরু হয়। এরপর ২০১৫ সালের আগস্টের কিছুদিন পর তালেবান জানায়, তারা মোল্লাহ মনসুর নামে এক নতুন নেতার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

মোল্লাহ মনসুর ছিলেন মোল্লাহ ওমরের ডেপুটি। ২০১৬ সালের মে মাসে মোল্লাহ মনসুর মার্কিন ড্রোন হামলায় নিহত হন। তার জায়গায় তালেবানের নতুন নেতা হন মৌলভী হিবাতুল্লাহ আখুন্দযাদা। এখন পর্যন্ত তিনিই তালেবানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা।

এ ঘটনার ৫ বছর পর ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবানের মধ্যে শান্তি চুক্তি হয়। এরপর তালেবান তাদের কৌশলে পরিবর্তন আনে। বড় বড় শহরে এবং সামরিক ঘাঁটির ওপর জটিল হামলার পরিবর্তে তারা টার্গেট করে করে হত্যা করছিল। এতে বেসামরিক আফগানদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়।

তালেবানের হামলার টার্গেট ছিল সাংবাদিক, বিচারক, শান্তির জন্য আন্দোলনকারী এবং গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা নারীরা। এসব কর্মকাণ্ড থেকে সবাই ধারণা করে, তালেবান তাদের চরমপন্থী মতাদর্শ পরিবর্তন করেনি; বরং কৌশল বদলেছে মাত্র।

নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২১ সালের এপ্রিলে ঘোষণা করেন, সব মার্কিন সেনা ১১ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান ছাড়বে। এ দিনেই আল-কায়েদার হামলায় নিউইয়র্কে ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ধসে পড়েছিল।

২০০১ সালে ক্ষমতা থেকে উৎখাতের পর তালেবান বাহিনী এখন সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে আছে। নেটোর সাম্প্রতিক এক রিপোর্ট অনুসারে, তালেবানের ৮৫ হাজার নিয়মিত যোদ্ধা আছে।

সূত্র: বিবিসি

আমারসংবাদ/এডি