Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

শেষ ভালোবাসায় প্রত্যাশা ঝরেছে আকুতি হয়ে

সাব্বির আহমেদ

সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২১, ০৫:৪০ পিএম


শেষ ভালোবাসায় প্রত্যাশা ঝরেছে আকুতি হয়ে

সকাল থেকেই কিঞ্চিৎ মেঘলা আকাশ। বেলা গড়িয়ে তা আরও গাঢ় হয়েছে৷ এদিকে উসখুস যেন বাড়ছিল। কখন শেষ ঘণ্টা বাজবে। ইতি ঘটবে পরীক্ষার। আনুষ্ঠানিকভাবে চুকিয়ে যাবে শিক্ষা জীবনের নাতিদীর্ঘ অধ্যায়। অবশেষে এলো সেই কাঙ্ক্ষিত প্রহর। লম্বা নিঃশ্বাস ফেলতে ফেলতে হুড়মুড়িয়ে পরীক্ষার কক্ষ থেকে থেকে বেড়িয়ে পড়া। খইমুড়ির মতো নিজেকে খোলা আকাশ পানে ছুড়তে থাকা......।

আকাশও যেন ছিল অকৃপণ৷ বিদায়ের সুর যেন তার রঙে মিশে একাকার। মেঘাচ্ছন্ন প্রকৃতিরও যেন বড্ড মন খারাপ। খারাপ হবে নাইবা কেন?

শেষটা রাঙিয়ে রাখতে তাদের ঈষৎ পরিকল্পনা যে ছিল-এসব দেখে কিছুটা আন্দাজ করা গেল। সবাই খণ্ড খণ্ড হয়ে মাঠে জড়ো হন। অতিমারিতে মাঠের সতেজ ঘাসগুলোও তাদেরকে বেশ আপ্যায়ন করলো। এই দিন আর পরীক্ষার ভালো মন্দ নিয়ে কথা নয়, নেই কোনো বাড়ি ফেরার তাড়া। ছেলে মেয়ে সবাই গা এলিয়ে বসে যান ঘাসের চাদরে। 

[media type="image" fid="144433" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

তাদের সবার শিক্ষাজীবনের পরীক্ষা শেষ। দিনটি বুধবার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি সাত কলেজের অনেক শিক্ষার্থীর মাস্টার্সের শেষ পরীক্ষা ছিল। বাকি শুধু ভাইভাই। সেজন্যই হয়তো মনের কোনে আনন্দ আহ্লাদ সবই ভর করেছিল, ফুটেছেও৷ সঙ্গে অনেকের প্রত্যাশাও আকুতি হয়ে ঝরেছে। 

রায়হান, মিলি, রাজু, বিপাশারা সেই ২০১৪ সালে অনার্স ১ম বর্ষে ভর্তি হন। সবাই সরকারি তিতুমীর কলেজের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী। চার বছরের অনার্স শেষ হতে লেগেছে প্রায় ছয় বছর৷ করোনার মাস্টার্সেও ফুরিয়েছে দেড় বছর। সব মিলিয়ে 'লং জার্নি'- নিখাঁদ আবেগ আর ভালোবাসার পুঞ্জিটা চওড়া হয়েছে৷ কিন্তু নানা কারণে প্রকাশ পায়নি। সেই অব্যক্ত কাব্যগুলো এলোমেলোভাবে ঝরেছে তার বিদায়ী কণ্ঠ থেকে। 

দলবেঁধে সরকারি বাঙলা কলেজের মাঠে নিজের ফ্রেমে বন্দি করেন। এই কলেজেই তারা অনার্স মাস্টার্সের সব পরীক্ষা দিয়েছেন। কেন্দ্র নিয়েও তাদের স্মৃতি। শেষ বেলায় কে কার সঙ্গে কিভাবে ছবি তুলবে তা নিয়েই যেন দরকষাকষি হৈ-হুল্লোড়ের চলে কতক্ষণ। তবে খানিকক্ষণ চুপসে থাকতে দেখা যায় কয়েকজনকে। 

আসিফ, খাজা, বৃষ্টি, নিলয়ের গলাটা কেমন জানি ভার ছিল৷ অতিমারি মাড়িয়েও পরীক্ষা শেষ করতে পেরে একদিকে যেমন আনন্দ ছিল, অন্যদিকে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আর দেখা না হওয়ার কষ্ট ছিল। অতীত আফসোসেকেও টেনে এনেছেন তারা। ক্লাসে অতীত স্মৃতি তুলে রাঙিয়ে রাখার ঊন দিকটা তুলে ধরেন। 

[media type="image" fid="144434" layout="normal" caption="1" infograph="0" parallax="0" popup="1"][/media]

সবকিছু শেষে কেউ ফেসবুকে লাইভ করেছেন। গলা ছেড়ে গেয়েছেন। ছন্দহীন স্বরে এদিকওদিক তাল মিলিয়ে হাস্যরসে ভাসিয়ে দেন বিল্লাল। আর রায়হানের প্রত্যাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যেন তাদের মাস্টার্স পরীক্ষার মূল্যায়ন পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে করে দ্রুত ফলাফল প্রকাশ করে। একই কথা বলেন মেহেদী ও তুহিন। তারা যেন দ্রুত চাকরি জীবনে প্রবেশ করতে পারেন, সেজন্য রেজাল্ট চান সল্প সময়ের মধ্যে। আর কোন দাবি নিয়ে ঢাবির দুয়ারে যেতে চান না৷ চাকরির প্রস্তুতিটা জোরেশোরে নিতে চান৷ জীবন থেকে ক্ষয়েছে অনেকটা সময়। 

শেষ ভালোবাসার এমন চিত্র শুধু বাঙলা কলেজই নয়, ঢাবির অধিভুক্ত বাকি ছয়টি ক্যাম্পাসেই চিত্রায়িত হয়। দাবিগুলো সবই প্রত্যাশায় ছুয়েছে৷ আনন্দ বিষাদের বাতাসও বইছিল এই রঙে, অভিন্ন ঢংয়ে।

আমারসংবাদ/এডি