আমার সংবাদ ডেস্ক
জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ০৯:৪০ এএম
ই-পাসপোর্ট কি?
ই-পাসপোর্ট হলো মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর আধুনিক রুপ। ২০২০ সালের ২২ জানুয়ারি এটি সর্বপ্রথম চালু হয়। একে আবার বায়োমেট্রিক পাসপোর্টও বলা হয়। এর ভিতরে একটি চিপ লাগানো থাকে। চিপটি দেখতে অনেকটা সিম কার্ডের মতো। এতে ব্যাবহার করা হয়েছে মাইক্রো প্রসেসর ও এন্টেনা প্রযুক্তি। পাসপোর্ট ধারীকে শনাক্ত করার জন্য এই চিপের ভিতরে তথ্যাবলি দেওয়া থাকে। বর্তমানে ই-পাসপোর্টে পাসপোর্টধারীর ১০ আঙ্গুলের ফিঙ্গারপ্রিন্ট, চোখের আইরিশ ও তার ছবি থাকবে বায়োমেট্রিক সংরক্ষণে। চিপে সংরক্ষণ করা ডাটা যাচাই করার জন্য থাকবে পাব্লিক কিউ ইনফ্রাস্ট্রাকচার। দক্ষিন এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশেই প্রথম এটি ইস্যু করেছে।
ই-পাসপোর্ট করতে কি কি লাগে?
ই-পাসপোর্টের ফরম পূরণ সংক্রান্ত নির্দেশাবলী ফরম পূরনের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম মানতে হয়। যেমনঃ
অনলাইনে ই-পাসপোর্ট এর আবেদন করবেন যেভাবে:
আবেদন করতে হবে অনলাইনে। ই- পাসপোর্ট এর সরকারি ওয়েবসাইটে আবেদন করতে হবে। ই-পাসপোর্টের আবেদন করতে হলে গ্রাহককে www.epassport.gov.bd ওয়েবসাইটে লগ ইন করে ডিরেক্টলি টু অনলাইন অ্যাপ্লিকেশনে (Directly to online application) অপশনে ক্লিক করতে হবে। প্রথম ধাপে বর্তমান ঠিকানার জেলা শহরের নাম ও থানার নাম নির্বাচন করতে হবে। পরের ধাপে ব্যক্তিগত তথ্য সম্বলিত ই-পাসপোর্টের মূল ফরমটি পূরণ করে সাবমিট করতে হবে। বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষাতেই এর আবেদন করা যাবে। আবেদনের ধাপ ৫ টি।
ওয়েবসাইটে ঢুকার পর অনলাইনে আবেদন ট্যাবটিতে ক্লিক করে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে। পরে আপনি যে এলাকায় বসবাসরত আছেন আর পাশের অফিসটি খুঁজে নিতে হবে। পরে আবেদনের জন্য আপনার প্রয়োজনীয় ইমেল আড্রেস, নাম ও পাসওয়ার্ড দিতে হবে ও তথ্যবলি যুক্ত করতে হবে।
ই-পাসপোর্ট ফি:
ই-পাসপোর্ট আবেদন অনলাইনে দাখিল করার সময়ে পাসপোর্ট ফি পরিশোধ করা যাবে। পাসপোর্ট ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে হিসাব করা হবে। বাংলাদেশস্থ পাসপোর্ট অফিসের আবেদন দাখিলের ক্ষেত্রে অনলাইনে পেমেন্ট করা যাবে। অনলাইন পেমেন্ট ছাড়াও ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া এবং ঢাকা ব্যাংকে নির্ধারিত ফি জমা দেয়া যাবে।
পাসপোর্ট ফি: ৪৮ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছরের মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
৪৮ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছরের মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ৫ বছরের মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
৬৪ পৃষ্ঠা এবং ১০ বছরের মেয়াদ সহ পাসপোর্ট
ই- পাসপোর্ট এর ফি পরিশোধ পাসপোর্ট এর জন্য নির্ধারিত ফি আছে যা পূরণ করতে হয়। ফি সবসময় এক হয় না। পাসপোর্ট এর ধরন অনুযায়ী ফি স্বয়ংক্রিয়ভাবে নির্ধারিত হয়। অনলাইনের মাধ্যমে বা সশরীরে ফি দেওয়া যাবে। ব্যাংকের ক্ষেত্রে ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালি ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া ও ঢাকা ব্যাংকে ফি পরিশোধ করা যাবে । পরে স্লিপ সংগ্রহ করে নিজের কাছে রাখতে হবে ও পাসপোর্ট তুলার সময় তা অফিসে জমা দিতে হবে। অনলাইনে ফি দিলে আবেদনের সারাংশতে তা জমা হবে আর জমা না হলে অনলাইনে পেমেন্ট স্লিপ তুলে রাখতে হবে।
*অতি জরুরি পাসপোর্ট এর আবেদন প্রক্রিয়া এমন অনেক সময় হয় যখন পাসপোর্ট খুব জরুরি ভিত্তিতে দরকার হয় সেক্ষেত্রে আপনি দুই দিনের মধ্যে পেতে Super express এর মাধ্যমে আবেদন করতে পারেন। এক্ষেত্রে আপনাকে কিছু তথ্য জানতে হবে।
ই-পাসপোর্ট ভুল সংশোধন করার নিয়ম
১. নাম বা অন্যান্য তথ্য ভুল হলেঃ আবেদনের সময় সাবধানে কাজ করা উচিত আর যদি ভুল হয় সেক্ষেত্রে অনলাইন আবেদনের সারাংশ নিয়ে পাসপোর্ট অফিসে যান। সেখানে সমস্যার সমাধান করা যাবে। তবে নাম সংক্রান্ত সমস্যা হলে অবশ্যই ছাড়পত্র লাগবে।
২. অ্যাপয়েন্টমেন্টে উপস্থিত না থাকলে করণীয়ঃ অনলাইনে পাসপোর্ট এর আবেদন করার পর অফিসে যেতে হয় তবে না যেতে পারলে নিজের একাউন্টে লগ ইন করতে হবে সেখানে Re-schedule / cancle বাটনে ক্লিক করে নতুন এ্যালাইনমেন্ট পেতে পারেন। তবে একবার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেলে তা না হারানো।
৩. আবেদন করার পরেও অ্যাপয়েন্টমেন্ট না পেলেঃ এর সঠিক কোনো উপায় নেই কিন্তু তার জন্য আগে থেকেই বারবার এ্যাকাউন্ট চেক করতে পারেন অপেক্ষা করতে পারেন অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার আগ পর্যন্ত।
৪. কোনো তথ্য পরিবর্তন করতে করণীয়ঃ অনেক সময় আগের তথ্য পরিবর্তন করতে হয় তখন আপনাকে অফিসে যেতে হবে পরে সেখানে আপনি যা পরিবর্তন করতে চান তার বর্তমান অবস্থার তথ্য দিতে হবে।
৫. আবেদনে ব্যাবহার করা ইমেল বা মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে চাইলেঃ এক্ষেত্রে আপনি মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করতে পারবেন। এ্যাকাউন্টে লগ ইন করে একাউন্ট ডাটা সিলেক্ট করে আগের নাম্বার ডিএক্টিভেট করে নতুন নাম্বার দিতে হবে। কিন্তু ইমেল পরিবর্তন করা যাবে না।
ই-পাসপোর্ট সংক্রান্ত প্রচলিত প্রশ্নাবলী ও তার উত্তরঃ
(১)ইমেইল এড্রেস ছাড়া অনলাইনে আবেদন করা যাবে?
উত্তরঃ না, অনলাইনে আবেদন করতে চাইলে ইমেইল এড্রেস ছাড়া হবে না এটি লাগবেই। এক্ষেত্রে Google/Gmail ব্যাবহার করুন।
(২)অনলাইন আবেদনের পাসওয়ার্ড ভুলে গেলে করনীয় কি?
উত্তরঃ সেক্ষেত্রে ইমেইল একাউন্ট আপনাকে সাহায্য করবে। প্রথমে একাউন্ট লগ ইন এর স্থানে গিয়ে Forgot Password এ গিয়ে আবেদনের একাউন্টের সাথে সাংযুক্ত করা ইমেইল একাউন্ট লগ লগ ইজ করলে নতুন ইমেইল আসবে ও পাসওয়ার্ড পেয়ে যাবেন।
(৩)একাউন্ট খুলার সময় ইমেইল এড্রেস প্রবেশ করানোর পরেও একাউন্ট কনফারমেশন মেসেজ না পেলে কি করণীয়?
উত্তরঃ ইমেইলটির বানান ও সঠিকভাবে দেওয়া নিয়ে নিশ্চিত হয়ে একাউন্টে লগ ইন করে শপাম ফোল্ডারে গেলেই হবে।
(৪)অনলাইন থেকে পিডিএফ নামানোর পর হাতে লিখে কি আবেদন করা যাবে?
উত্তরঃ না, পিডিএফ নামানোর পরে পিডিএফ ফরম্যাটে তথ্যগুলো বসাতে হবে। এতে হাতে লেখার স্থান নেই সব অনলাইনে করতে হবে।
(৫)পিডিএফ নামিয়ে প্রিন্ট করে আবেদন করলে কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট অনলাইনে পাওয়া যাবে?
উত্তরঃ না, শুধুমাত্র অনলাইন আবেদনকারীর জন্য আর বাকিরা পাসপোর্ট অফিস থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাবে।
(৬)এসএসসি/ এইচএসসি এর সার্টিফিকেটের নাম এবং জন্ম সনদে নাম ভিন্ন হলে কি করতে হবে?
উত্তরঃ জন্ম নিবন্ধন অনুযায়ী সব তথ্য দিতে হবে।
(৭)জন্ম সনদে নিজের বাবা বা মায়ের নাম ভুল হলে ঠিক না করে কি আবেদন করা উচিত?
উত্তরঃ না, অবশ্যই তা সংশোধন করে পরে আবেদন করতে হবে।
(৮)জাতীয় পরিচয়পত্র ছাড়া কি আবেদন করা যাবে?
উত্তরঃ ২০ বছরের নিচে হলে করা যাবে এর বেশি হলে করা যাবে না।
(৯)নিয়মিত পাসপোর্ট এর আবেদনকে কি জরুরি পাসপোর্টে রুপান্তর করা যাবে।
উত্তরঃ হ্যাঁ করা যাবে। সেক্ষেত্রে পাসপোর্ট চূড়ান্ত হওয়ার আগেই বাড়তি ফি পরিশোধ করে অফিস বা ব্যাংক থেকে স্লিপ তুলতে হবে।
(১০) পাসপোর্ট এর তথ্য কি সত্যায়িত করতে হবে?
উত্তর: রনা এখানে সত্যায়িত করতে হয় না মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এ করতে হয়।
(১১) ছাত্র আইডি কার্ড বা ইউটিলিটি বিল কি দেখাতে হবে?
উত্তরঃ পাসপোর্ট আবেদনে না লাগলেও মাঝে মাঝে পুলিশ ভেরিফিকেশন এ লাগে তাই সাথে রাখা ভাল।
(১২)পুলিশ ভেরিফিকেশন এ কি পুলিশ বাড়িতে আসে না নিজেকে যেতে হয়?
উত্তরঃ যেকোনোটিই হতে পারে তাই দুইটার জন্য প্রস্তুত থাকা ভালো।
(১৩) ই-পাসপোর্টের জন্য কি আগের মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এর প্রিন্ট ফরম ব্যাবহার করা যাবে?
উত্তরঃ না, আলাদা করে ফরম ডাউনলোড করতে হবে ই- পাসপোর্টের জন্য।
(১৪)মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট থাকলে কি স্বাভাবিকভাবেই আবেদন করতে হবে?
উত্তরঃ হ্যাঁ আগের পাসপোর্ট এর কোনো কিছুই স্বয়ংক্রিয়ভাবে যুক্ত হবে না নিজের করতে হবে।
(১৫)অনলাইনে ফরম পূরণ করে ভুল হলে কি অনলাইনেই করা সম্ভব অফিসে না গিয়ে?
উত্তরঃ না কাগজে ভুল থাকলে য়া অফিসে গিয়েই ঠিক করতে হবে।
(১৬)পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করার পর বাতিল করতে চাইলে কি করতে হবে?
উত্তরঃ একাউন্টটি মুছে দিতে পারেন। ফি পরিশোধ না হলে এমনিতেই ৩ মাস পরে মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে।
(১৭)একাউন্ট মুছে ফেলার পরেও কি অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়া যাবে?
উত্তরঃ আগে থেকে অ্যাপয়েন্টমেন্ট থাকলে পাবেন না থাকলে পাবেন না।
(১৮)পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে দালালের হাতে পড়লে কি করণীয়?
উত্তরঃ অনেক স্থানেই এই সমস্যা দেখা যায়। যদি আপনার পাসপোর্ট এ কোনো ভুল না থাকে দালালরা আপনাকে সমস্যায় ফেলতে পারবে না।
(১৯) পুলিশ ভেরিফিকেশন এ সমস্যা হলে কি করণীয়?
উত্তরঃযদি সমস্যা হয়েই যায় এক্ষেত্রে স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশের সাথে কথা বলতে হবে।
(২০) ছবির সাইজ ও ব্যাকগ্রাউন্ড কেমন হবে?
উত্তরঃ প্রাপ্ত বয়স্কদের ছবি লাগে না। ৬ বছরেত শিশুর ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড হবে ধূসর ও ১৫ বছরের কম হলে পিতামাতা সহ ধূসর ব্যাকগ্রাউন্ডের ছবি জমা করতে হবে।ছবির আকার পাসপোর্ট সাইজ।
আমারসংবাদ/আরএইচ/এআই