Amar Sangbad
ঢাকা বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪,

ই-কমার্সে অস্বস্তিতে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২১, ০৪:৫৫ পিএম


ই-কমার্সে অস্বস্তিতে সরকার
  • ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে দায়িত্ব নেবে না বাণিজ্য মন্ত্রণালয়
  • ইভ্যালির টাকা কোথায় গেছে জানে না মন্ত্রণালয় আইনি পদক্ষেপ নিতে চিঠি দেয়া হবে
  • ৯ ই-কমার্স কোম্পানির নিরীক্ষা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক

বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ই-কমার্স সুনামের সাথে ব্যবসা করলেও দেশের ই-কমার্স নিয়ে অস্বস্তিতে পড়েছে সরকার। করোনার কঠিন সময়কে কাজে লাগিয়ে দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহক হয়রানি করছে প্রতিনিয়তই। এতে করে সারাদেশেই বিক্ষোভ, মামলা, অভিযোগ লেগেই আছে।

এদিকে সমস্যা সমাধানের পথ না দেখিয়ে অন্যদের উপর চাপিয়ে দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে- ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জসহ ১০টি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আর দায়িত্ব নেবে না। এখন থেকে তাদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ব্যবস্থা নেবে।

গতকাল মঙ্গলবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-ভ্যালিসহ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকের পর বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের এ কথা জানান।

ইভ্যালি ইস্যুতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আর সময় নিতে চায় না উল্লেখ করে হাফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আইনি পদক্ষেপ হিসেবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠি দেয়া হবে।

প্রাথমিকভাবে ইভ্যালি ইস্যুতে আইনি পদক্ষেপে গেলেও পরবর্তীতে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, বুম বুম, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, কিউ কম, আদিয়ান মার্ট, নেট.কম এবং আলেশা মার্টের বিষয়ে মন্ত্রণালয় একই পদক্ষেপে যাবে উল্লেখ করেন বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) সেলের প্রধান হাফিজুর রহমান।     

হাফিজুর রহমান বলেন, ইভ্যালির টাকা কোথায় গেছে সেটা জানা যায়নি। দুর্নীতি দমন কমিশন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকও তদন্ত করছে। হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সভায় ইভ্যালি, ই-অরেঞ্জ, ধামাকাসহ বিভিন্ন ই-কমার্সের বিষয় উঠে এসেছে।  প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে আইন অমান্য করেছে, সুতরাং মিনিস্ট্রি সরাসরি কোনও দায়িত্ব নেবে না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রেফার করা হবে।’

৯ ই-কমার্স কোম্পানির নিরীক্ষা চায় বাংলাদেশ ব্যাংক: আর্থিক অনিয়ম ও ভোক্তা ঠকানোর অভিযোগে আলোচিত ৯টি ই-কমার্স কোম্পানির হিসাব খতিয়ে দেখতে নিরীক্ষক নিয়োগ দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের পরিচালক অতিরিক্ত সচিব হাফিজুর রহমান জানান, গত রোববার তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই চিঠি পেয়েছেন। তার আগে ই-মেইলেও একই পরামর্শ এসেছে।

তিনি জানান, ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ই-অরেঞ্জ, ধামাকা, কিউকম, সিরাজগঞ্জ শপ, আলাদিনের প্রদীপ, বুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি ও আলেশা মার্টের আর্থিক লেনদেন বিষয়ে জানতে গত আগস্টের শেষ দিকে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দিয়েছিল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন তারা এসব প্রতিষ্ঠানে নিরীক্ষক নিয়োগ দিয়ে ব্যবসার হিসাব বের করার পরামর্শ দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে। ‘ব্যবসার বিস্তারিত তথ্য জানতে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়ার প্রসঙ্গটি এসেছে। আমরা এই বিষয়ে কাজ করছি,’ বলেন হাফিজুর রহমান।

বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম  বলেন, ‘আমরা মন্ত্রণালয় থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি। মন্ত্রণালয়কে বলেছি, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থা বুঝতে হলে তৃতীয় কোনো পক্ষকে দিয়ে অডিট করাতে হবে। দেশে ই কমার্সের ব্যবসা বেশ কয়েক বছর ধরেই বাড়ছিল, এর মধ্যে মহামারি শুরু হলে নতুন নতুন বেশ কিছু কোম্পানি রাতারাতি ফুলে ফেঁপে উঠতে শুরু করে। বাজারমূল্যের চেয়ে অর্ধেক দামে পণ্য বিক্রির প্রলোভন দেখিয়ে এসব কোম্পানি লাখ লাখ গ্রাহকের হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠছে এখন। অনেকে অর্ধেক দামে পণ্য কিনে পরে বেশি দামে বিক্রির আশায় এসব কোম্পানিতে লাখ লাখ টাকার অর্ডার করেছেন। কিন্তু তাদের অনেকে মাসের পর মাস অপেক্ষা করেও পণ্য বুঝে পাননি, কোম্পানি তাদের টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। এসব ঘটনায় ইভ্যালি, ই অরেঞ্জসহ বিভিন্ন কোম্পানির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলাও হয়েছে সম্প্রতি। সহজে গ্রাহক আকৃষ্ট করার জন্য এসব কোম্পানি অর্ধেক দামে মোটরসাইকেল বিক্রির অফারই বেশি দিয়েছিল। টাকা পরিশোধ করার ৪৫ দিনের মধ্যে মোটরসাইকেল বুঝিয়ে দেয়ার কথা থাকলেও গ্রাহকদের মাসের পর মাস অপেক্ষা করিয়ে রেখেছে কিউকুম। কিউকমের গ্রাহকরা ফেসবুকে নানা অভিযোগ জানানোর পাশাপাশি ঢাকার তেজগাঁও এলাকায় ওই কোম্পানির অফিসের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভও করেছেন।

এ বিষয়ে কিউকমের জনসংযোগ কর্মকর্তা আরজে নিরবের সঙ্গে ১০ দিন আগে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেছিলেন, ‘আমরা যেসব বাইক বিক্রির অফার দিয়েছিলাম সেগুলোর স্টক শেষ হয়ে গেছে। সে কারণে বিলম্ব হচ্ছে।’

আরেক কোম্পানি আলেশা মার্টের গ্রাহক মুমিনুল ইসলাম গতকাল বলেন, দুই লাখ টাকায় দুটি বাজাজ পালসার মোটরসাইকেল কিনতে টাকা জমা দিয়েছিলেন তিনি। গত ২০ জুলাই পণ্য দেয়ার কথা থাকলেও তা এখনো পাননি। ‘তারা বারবার তারিখ পরিবর্তন করছে। আমি ধৈর্য ধরতে ধরতে এখন উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ছি।’ একইভাবে গ্রাহক ঠকানোর অভিযোগে প্রতারণা মামলা হওয়ার পর ই-অরেঞ্জের মালিকদের ইতোমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ইভ্যালির বিরুদ্ধে গ্রাহকের পাশাপাশি পণ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান, পণ্য পরিবহন প্রতিষ্ঠানের, নিজস্ব কর্মীসহ বিভিন্ন মানুষের বকেয়া দিতে না পারার নতুন নতুন অভিযোগ প্রতিদিনই আসছে। প্রায় ১১৬ কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ এনে ই-কমার্স কোম্পানি ধামাকার বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ-সিআইডি।

গ্রাহকের শতকোটি টাকা ধরে রাখার অভিযোগের মুখে রয়েছে আলাদিনের প্রদীপ; রিফান্ডের নামে নিজস্ব মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অ্যাকাউন্টে টাকা সরানোর অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে আসছে। এসব কোম্পানির উদ্যোক্তারা এখন আর ফোন ধরেন না। তবে মাঝে মধ্যে ফেসবুক লাইভে এসে তারা গ্রাহকদের বিভিন্ন আশ্বাস দিয়ে যাচ্ছেন।