Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

মহামারিতেও সিএসআর খাতে ব্যয় কমেছে

রেদওয়ানুল হক

সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২১, ০৬:৫০ পিএম


মহামারিতেও সিএসআর খাতে ব্যয় কমেছে
  • এক টাকাও ব্যয় করেনি ২৯ ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান
  • অপ্রয়োজনীয় কার্যক্রমে ব্যয় করেছে ১২ ব্যাংক
  • স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের নির্দেশনা ৬০ শতাংশ, হয়েছে ৫১ শতাংশ

করোনাকালেও সিএসআর খাতে ব্যয় করছে না কিছু ব্যাংক। কোভিড-১৯ কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতকেও প্রভাবিত করেছে। চলতি বছরের প্রথমার্ধে (জানুয়ারি-জুন) আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ব্যাংকের সিএসআর খাতে ব্যয় কমেছে ৫৬ কোটি টাকা। ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ব্যাংকগুলো এ খাতে ব্যয় করে ৫১৭ কোটি টাকা।

তবে ২০২১ সালের প্রথমার্ধে ৪৬১ কোটি টাকা সিএসআরে খরচ করেছে ব্যাংক। তাছাড়া ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো উল্লিখিত খাতে ব্যয় করেছে তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, আলোচ্য সময়ে সামাজিক কার্যক্রমে কোনো ব্যয় করেনি ২৯ ব্যাংক-আর্থিক প্রতিষ্ঠান।

এর মধ্যে রয়েছে বিকেবি, রাকাব, প্রবাসী কল্যাণ, বাংলাদেশ কমার্স, কমিউনিটি, পদ্মা, সীমান্ত, হাবিব, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান এবং উরি ব্যাংক। এ ছাড়া নামসর্বস্ব সামাজিক কার্যক্রমে ব্যয় করে শূন্যের খাতা থেকে নাম কাটিয়েছে ১২ ব্যাংক। যাদের সিএসআর ব্যয় এক লাখ টাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ। করোনার মধ্যে অন্যান্য ব্যাংক শুধু স্বাস্থ্য খাতেই কোটি কোটি টাকা ব্যয় করছে। সেখানে নামমাত্র ব্যয় এ খাতের উপর অনাগ্রহের বহিঃপ্রকাশ।

এদিকে সিএসআরে ব্যয় না করা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২০টি। এর মধ্যে রয়েছে— অগ্রণী এসএমই ফাইন্যান্সিং কোম্পানি লি, আভিভা ফাইন্যান্স লি, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লি, বে লিজিং অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি, সিভিসি ফাইন্যান্স লি, ফারইস্ট ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লি, জিএসপি ফাইন্যান্স কোম্পানি (বাংলাদেশ) লি, ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লি, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লি, ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি, লংকান অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্স লি, মেরিডিয়ান ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি, মাইডাস ফাইন্যান্সিং লি, ন্যাশনাল ফাইন্যান্স লি, প্রাইম ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি, দ্য ইউএই বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট কোম্পানি লি, ইউনাইটেড ফাইন্যান্স লি এবং উত্তরা ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লি।

তথ্য অনুযায়ী, সামাজিক কার্যক্রমে ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ ব্যয় করেছে তার মধ্যে স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় হয়েছে ২৩৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। যা মোট ব্যয়ের ৫১.৫৮ শতাংশ। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো জানুয়ারি-জুন ২০২১ ষান্মাসিকে সিএসআর তিন কোটি ১৩ লাখ টাকা ব্যয় করেছে। আলোচ্য সময়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠানেও সর্বোচ্চ ব্যয় হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে, যার পরিমাণ এক কোটি টাকা যা মোট ব্যয়ের ৩২.২৭ শতাংশ।

উল্লেখ্য, করোনার সংক্রমণ রোধে বিশেষ করে স্বাস্থ্য খাতের পাশে দাঁড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। আবার বন্যার দুর্যোগেও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতের (সিএসআর) আওতায় এসব খাতে ব্যাংকের ব্যয় বেড়েছে গত ছয় মাসে। তবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এই খাতে ব্যাংকগুলোর অনুদান কমে গেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি-জুন সময়ে ব্যাংকগুলোর সামাজিক দায়বদ্ধতা খাতে ব্যয় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, টেকসই উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা সিএসআর বা বর্তমান বিশ্বে ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুদান। এটি হলো এক ধরনের ব্যবসায়িক শিষ্টাচার-রীতি বা দায়বদ্ধতা, যা সমাজের প্রতি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব পালনকে বুঝিয়ে থাকে। ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে পরিচালিত কার্যক্রমের ফলে উদ্ভূত নানারকম পরিবেশগত বিরূপ প্রভাব দূর এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মধ্যে বিদ্যমান ক্ষোভ, অসমতা ও দারিদ্র্যতা কমানো সিএসআরের প্রধান লক্ষ্য।

২০০৮ সালে প্রথমবারের মতো প্রজ্ঞাপন জারি করে সিএসআর খাতে ব্যয় করার দিকনির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। পরবর্তীতে একাধিকবার প্রজ্ঞাপন জারি এবং ব্যয়ে খাত নির্ধারণ ছাড়াও এ সংক্রান্ত আইন যথাযথভাবে প্রয়োগের জন্য বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, পরিবেশ, আয় উৎসাহী কার্যক্রম, অবকাঠামো এবং সংস্কৃতি খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে সিএসআরের অর্থ ব্যয় করতে নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

সমপ্রতি করোনা মহামারিতে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ভঙ্গুর পরিস্থিতি উন্মোচিত হলে স্বাস্থ্য খাতে সিএসআর ব্যয় বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নির্দেশনা জারি করা হয়। বর্তমানে ব্যাংকগুলোর মোট সিএসআর ব্যয়ের ৬০ শতাংশই স্বাস্থ্য খাতে ব্যয়ের নির্দেশনা রয়েছে। বাকি ৪০ শতাংশের মধ্যে ৩০ শতাংশ শিক্ষা এবং ১০ শতাংশ অন্যান্য খাতে ব্যয় করতে বলা হয়েছে।

ব্যাংকগুলোর সিএসআর খাতের ব্যয়ের দিকটি দেখাশোনা করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ। কোন খাতে সিএসআরের কত শতাংশ ব্যয় করছে বা করবে, তা সময়ে সময়ে নির্দেশনার মাধ্যমে জানিয়ে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। মানোন্নয়নের এই রেটিং একটি ব্যাংকের জন্য খুবই প্রয়োজনীয় বিষয়।