Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ই-কমার্স ও ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ

সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


 ই-কমার্স ও ব্যাংক খাতে নৈরাজ্য প্রয়োজন আইনের সঠিক প্রয়োগ
  • ইভ্যালির অফিসে কার্যক্রম বন্ধ
  • ইভ্যালির রাসেল শামীমার নামে এবার যশোরে মামলা

ই-কমার্স ও ব্যাংকিং খাতে নৈরাজ্য বন্ধে আইনের সঠিক প্রয়োগ দরকার বলে মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির  (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ।

গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনে (এফডিসি) ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধে সরকারের পদক্ষেপ বিষয়ক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন। ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসি এ ছায়া সংসদের আয়োজন করে।

এ কে আজাদ বলেন, ই-কমার্স খাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে নীতিমালা আরও সুস্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান যে হারে বেড়েছে সেই হারে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। হাজার হাজার মামলা অনেক সরকারি সমস্যা ও জনগণের অভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।

তিনি বলেন, সরকারি ব্যাংকগুলো দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। সরকার প্রতি বছর ব্যাংক খাতে ছয় হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়। এ টাকা জনগণের ট্যাক্সের টাকা। ব্যাংক খাতে ও চলছে নৈরাজ্য। আইনের যথাযথ প্রয়োগ না থাকায় ই-কমার্সের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো জনগণের টাকা নিয়ে যাচ্ছে। জবাবদিহিতা না থাকলে এমন ঘটনা আরও ঘটতে পারে ভবিষ্যতে। সবাইকে জবাবদিহিতার আওতায় এনে সঠিক আইনের প্রয়োগ করতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্র্যাসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, দেশের কোম্পানি আইন, ট্রেড লাইসেন্স আইন বা আয়কর আইনে ই-কমার্স হিসেবে নিবন্ধনের সুযোগ রাখা হয়নি। বর্তমানে ই-কমার্স ব্যাবসা তথ্য প্রযুক্তি সেবা বা আইটিইএস হিসেবে নিবন্ধিত হয়।

তিনি বলেন, অনুসন্ধানে দেখা যায় বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতে নিয়োজিত ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান কোনো ঘোষণা ছাড়াই ব্যবসা বন্ধ করে আত্মগোপন করেছে। সম্প্রতি আলোচিত ইভ্যালির চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী এবং ই-অরেঞ্জের মালিক ও তার স্বামীকে গ্রেপ্তারের পর ই-কমার্সের প্রতারণার চিত্র আরও দৃশ্যমান হয়।

তিনি আরও বলেন, ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জ ছাড়াও নিরাপদ ডটকম, ধামাকা শপিং ডটকম, আলাদিনের প্রদীপ, ব্লুম বুম, আদিয়ান মার্ট, নিড ডটকম ডটবিডি, কিউকুম নামক আরও অনেক প্রতিষ্ঠান গা-ঢাকা দেয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। ভোক্তাদের বোকা বানিয়ে মায়াজাল ও প্রতারণার ফাঁদে ফেলে বাহারি বিজ্ঞাপন, অস্বাভাবিক ও আকর্ষণীয় অফার, অবিশ্বাস্য ডিসকাউন্ট, ক্যাশব্যাক ইত্যাদি প্রলোভনের মাধ্যমে সাধারণ গ্রাহকদের কাছ থেকে হতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। প্রাথমিক হিসাবে জানা গেছে, ইভ্যালির দেনা ৪০৩ কোটি টাকা আর সম্পদ রয়েছে ৬৫ কোটি টাকার।

গ্রাহকদের কাছ থেকে পণ্যমূল্য বাবদ ২১৪ কোটি টাকা নিয়ে পণ্য সরবরাহ না করা এবং পণ্য কেনা বাবদ ১৯০ কোটি টাকা দেয়নি ইভ্যালি। এছাড়াও ই-অরেঞ্জের বিরুদ্ধে গ্রাহকের এক হাজার কোটি টাকার বেশি হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ উঠেছে। ই-কমার্স খাতে নৈরাজ্য বন্ধ করে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা তৈরির মাধ্যমে জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে তিনি সাতটি সুপারিশ করেন।

সেগুলো হলো— বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ই-কমার্স খাতের জন্য নীতিমালা ও নির্দেশিকা রয়েছে। নীতিমালা ভঙ্গ করলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শুধু প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়া যায়, কিন্তু শাস্তি দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তাই এ খাতের নৈরাজ্য বন্ধে আইন প্রণয়ন জরুরি। বিদ্যমান নৈরাজ্য অনুসন্ধান ও আইনি কাঠামো তৈরির জন্য একটি কমিশন গঠন করা। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া অনলাইন কেনাকাটায় বিভিন্ন প্রতারণায় অভিযুক্তদের দৃশ্যমান শাস্তি দিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরতের ব্যবস্থা করা।

দুদক, প্রতিযোগিতা কমিশন ও ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের বিদ্যমান আইনের আওতায় প্রতারিত গ্রাহকরা কীভাবে আইনি প্রতিকার পেতে পারেন তা জনগণকে অবহিত করা। ইভ্যালি বা ই-অরেঞ্জসহ অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে যারা প্রতারিত হয়েছে তাদের সঠিক তালিকা ও অর্থের পরিমাণ জানার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে একটি কমিটি গঠন করা।

প্রতারণায় জড়িত কাউকে ই-ক্যাব বা অন্য কোনো ব্যবসায়ী সংগঠনের সদস্য না করা। ইতোমধ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে প্রতারণায় অভিযুক্ত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোতে প্রশাসক বসিয়ে তাদের সম্পত্তি বিক্রির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের যতটা সম্ভব অর্থ ফেরত দেয়া।

অনুষ্ঠানে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় সরকারি দল হিসেবে ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি এবং বিরোধী দল হিসেবে বিজিএমইএ ইউনিভার্সিটি অব ফ্যাশন অ্যান্ড টেকনোলজির তার্কিকরা অংশ নেন। বিতর্কে জয়ী হয় বিজিএমইএ  ইউনিভার্সিটি।

ইভ্যালির অফিসে কার্যক্রম বন্ধ
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. রাসেল ও চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিনকে গ্রেপ্তারের তৃতীয় দিন আলোচিত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালি তাদের অফিসে কার্যক্রম বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে। ইভ্যালির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে গতকাল শনিবার সকালে জরুরি এক নোটিসে এ সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। এতে বলা হয়েছে, পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ইভ্যালির কর্মচারীরা বাসা থেকে অফিসের কার্যক্রম চালাবেন।

নোটিসে ইভ্যালি বলেছে, ‘সম্মানিত গ্রাহক এবং সেলার, আপনাদের জন্যই আমাদের সকল আয়োজন। আর তাই বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায়, আপনাদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার লক্ষ্যে, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ রোজ শনিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ইভ্যালি এমপ্লয়িরা নিজ নিজ বাসা থেকে অফিস কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।

‘হোম অফিস পদ্ধতিতে ইভ্যালির সকল কার্যক্রম স্বাভাবিক নিয়মে চলমান থাকবে। আপনাদের আন্তরিক সহযোগিতা আমাদের একান্তভাবে কাম্য। আপনাদের ভালোবাসাই আমাদের সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা।’ এই পোস্টের নিচে মন্তব্যের ঘরে একজন লিখেছেন, ‘দারুণ ভদ্রতার সঙ্গে পালিয়ে যাওয়ার ঘোষণাও দেয়া যেতে পারে। ইভ্যালি এই ঘোষণার সঙ্গে এটা শিখিয়ে দিলো। আপনারা সবাই বাসায় অফিস করেন। শুভ কামনা।’ আরেকজন লিখেছেন, ‘আস্তা না রেখে কি পারি!

৭-৪৫ দিনের মধ্যে প্রোডাক্ট ডেলিভারি দেবেন বলে অর্ডার নিয়ে ছয় মাস গেলো কোনো খবর নেই। এখানেই তো আস্তা রাখার জায়গা। পুরা কপাল আমার কেন যে টাকাটা দিলাম!’ অর্থ আত্মসাতের মামলার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।

শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে র্যাবের সদর দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনের পর দুজনকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ডে পাঠায়। ইভ্যালিতে ‘ওয়ান ম্যান শো’ চলত বলে দাবি করেছে র‌্যাব।

শুক্রবার প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ইভ্যালি একটি পরিকল্পিত পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। ইট ওয়াজ ‘ওয়ান ম্যান শো’।

ইট ওয়াজ রাসেল ইটসেলফ। নিজস্ব বিচার-বিবেচনায় তিনি সব করতেন। তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা ছিলো না।’ র্যাব জানায়, ইভ্যালি শুরু থেকেই লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিলো। ২০১৭ সালে শিশুপণ্যের একটি প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে রাসেল এক কোটি টাকা পান। এই টাকা দিয়ে ইভ্যালি শুরু। অফিসসহ অন্যান্য ব্যয় মিলে প্রতি মাসে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বহন করতে হয়েছে।

ইভ্যালির রাসেল-শামীমার নামে এবার যশোরে মামলা
কোতোয়ালি মডেল থানায় গত শুক্রবার গ্রাহক জাহাঙ্গীর আলম চঞ্চল এই মামলা করেছেন বলে গতকাল সকালে নিশ্চিত করেছেন উপপরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম। মামলায় বলা হয়েছে, ইভ্যালি থেকে গত ২৯ মে একটি মোটরসাইকেল কেনার জন্য টাকা দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীর আলম। তা না পাওয়ায় শুক্রবার তিনি মামলা করেছেন।

জাহাঙ্গীর অভিযোগ করেন, এক লাখ ৩০ হাজার ১৪০ টাকায় ভারতীয় বাজাজ কোম্পানির একটি পালসার মোটরসাইকেলের অর্ডার করেন তিনি। এরপর কয়েকটি কিস্তিতে পুরো টাকা পরিশোধও করেন। টাকা পরিশোধের ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে পণ্যটি ডেলিভারি দেয়ার কথা ছিলো। সাড়ে তিন মাসেও মোটরসাইকেল পাননি তিনি। এসআই রফিকুল ইসলাম বলেন, অভিযোগের বিষয়ে একজন অফিসারকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।

অর্থ আত্মসাতের মামলার পর বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের স্যার সৈয়দ রোডের বাসা থেকে রাসেল ও তার স্ত্রী শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে র্যাবের সদর দপ্তরের সংবাদ সম্মেলনের পর দুজনকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়। এরপর আদালতে হাজির করা হলে আদালত তাদের তিনদিনের রিমান্ডে পাঠায়।

ইভ্যালিতে ‘ওয়ান ম্যান শো’ চলত বলে দাবি করেছে র‌্যাব। শুক্রবার প্রেস ব্রিফিংয়ে র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ইভ্যালি একটি পরিকল্পিত পারিবারিক প্রতিষ্ঠান। ইট ওয়াজ ‘ওয়ান ম্যান শো’। ইট ওয়াজ রাসেল ইটসেলফ। নিজস্ব বিচার-বিবেচনায় তিনি সব করতেন। তার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা ছিলো না।’

র‌্যাব জানায়, ইভ্যালি শুরু থেকেই লোকসানি প্রতিষ্ঠান ছিলো। ২০১৭ সালে শিশুপণ্যের একটি প্রতিষ্ঠান বিক্রি করে রাসেল এক কোটি টাকা পান। এই টাকা দিয়ে ইভ্যালি শুরু। অফিসসহ অন্যান্য ব্যয় মিলে প্রতি মাসে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা বহন করতে হয়েছে।