Amar Sangbad
ঢাকা শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪,

দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২১, ০৬:১৫ পিএম


দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

জনগণের কাছে নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর (ডিপিএইচই)। আর নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন কভারেজের দিক দিয়ে সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় অন্যতম শীর্ষ স্থানও দখল করে আছে বাংলাদেশ। পল্লী এলাকার বিভিন্ন ধরনের নিরাপদ পানির উৎস (টিউবওয়েল) ও স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপনাগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান দায়িত্ব। 

এছাড়া পল্লী পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নির্মাণোত্তোর রক্ষণাবেক্ষণে ইউনিয়ন পরিষদকে ওয়াটসন কমিটির মাধ্যমে কারিগরি সহায়তা প্রদান, স্বাস্থ্য পরিচর্যা জোরদারকরণ এবং পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উন্নয়নে প্রয়োজনীয় সহায়তাও প্রদান করে থাকে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।

এদিকে দ্রুত নগরায়নের ফলে পৌর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন চাহিদাও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ চাহিদা পূরণে পৌরসভাগুলোর পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন অবকাঠামো নির্মাণসহ কারিগরি সহায়তার আওতায় বিভিন্ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নেও সহায়তা করছে সংস্থাটি।

বন্যা, সাইক্লোন, মহামারি ইত্যাদির কারণে সৃষ্ট জরুরি পরিস্থিতিতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থা সচল রাখার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কার্যক্রমও বাস্তবায়ন করে আসছে ডিপিএইচই। এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে পল্লী এলাকায় প্রতি ৮৮ জনের জন্য একটি সরকারি নিরাপদ খাবার পানির উৎস রয়েছে এবং আর্সেনিকমুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ কভারেজও ৮৮.৬৬ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্র।   

অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিকল্পে প্রতি ৫০ জনের জন্য একটি পানির উৎস স্থাপনের লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে সংস্থাটি। এছাড়া ভূ-পৃষ্ঠস্থ পানির যথাযথ ব্যবহার এবং সংরক্ষণ, পুকুর খননের মাধ্যমে ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার বৃদ্ধিকরণ, দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে পাইপ ওয়াটার সাপ্লাই সিস্টেম স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে অধিদপ্তরের।

এছাড়া স্বাস্থ্যসম্মত উন্নতমানের ল্যাট্রিনের কভারেজ বৃদ্ধিকরণ এবং নিরাপদ সুপেয় পানি সরবরাহের কভারেজ শতভাগে উন্নীতকরণের পরিকল্পনাও রয়েছে সংস্থাটির। এদিকে বিগত তিন অর্থবছরে গ্রাম, পৌর ও বস্তি এলাকায় তিন লাখ ১১ হাজার ৩৩২টি বিভিন্ন প্রযুক্তির পানির উৎস, ১৬২টি উৎপাদক নলকূপ, এক হাজার ৮২২.০১ কিলোমিটার বিভিন্ন ব্যসের পাইপ লাইন, ১৬ হাজার ৪৯৫টি গৃহ সংযোগ, ৬৭৩টি পুকুর খনন/পুনঃখনন, ৪৩৮টি পিএসএফ, ৫০ হাজার ৭৮৮টি স্বল্পমূল্যের স্যানিটারি ল্যাট্রিন ও ইম্প্রুভড স্যানিটারি ল্যাট্রিনসহ এক হাজার ৬৩২টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন-পাবলিক টয়লেট নির্মাণ করেছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। কেন্দ্রীয় পানি পরীক্ষাগার এবং ১৩টি আঞ্চলিক পরীক্ষাগারে প্রায় তিন লাখ ৫৪ হাজার ৪০২টি পানির উৎসে পানির গুনগতমানও পরীক্ষা করা হয়েছে।

জানা গেছে, কক্সাবাজার জেলায় ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়নমার নাগরিক’ আশ্রয়প্রার্থীর জন্য তিন হাজার ১৯২টি নলকূপ ও পাঁচ হাজার ১০০টি স্যানিটারি ল্যাট্রিন স্থাপন করেছে ডিপিএইচই। এছাড়াও ১১টি ওয়াটার রিজারভার (১০০০ লিটার), ১৪টি মোবাইল ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট ও সাতটি ভ্রাম্যমাণ ওয়াটার ক্যারিয়ার (তিন হাজার লিটার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন) যার মাধ্যমে উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন ক্যাম্পে নিরাপদ খাবার পানি সরবরাহ করা হচ্ছে।

তাছাড়াও ওই এলাকায় ১০ লাখ ওয়াটার পিউরিফাইং ট্যাবলেট এবং ৬০৮ ড্রাম ব্লিচিং পাউডার (৩০ হাজার ৪০০ কেজি) সরবরাহ করা হয়েছে। সেই সাথে ১১টি আশ্রয় ক্যাম্পে মহিলাদের জন্য ৬৪০ ইউনিট গোসলখানা নির্মাণ করা হয়েছে।

এছাড়াও কক্সাবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন কার্যক্রমে জরুরি সহায়তা প্রকল্প (এডিবি-জিওবি) এবং জরুরিভিত্তিতে রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় মাল্টি সেক্টর প্রকল্প (ডিপিএইচই অংশ) (বিশ্বব্যাংক-জিওবি) দুটির মাধ্যমে ‘বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিক’ আশ্রয়প্রার্থীর নিরাপদ পানি সরবরাহ সংক্রান্তে সেবা প্রদান করা হচ্ছে।  

চলতি অর্থবছরেই পল্লী ও পৌর এলাকায় এক লাখ ৩০ হাজার ৫২৫টি বিভিন্ন ধরনের পানির উৎস স্থাপন, গ্রামীণ এলাকায় ৩০০টি পন্ড স্যান্ড ফিল্টার নির্মাণ, গ্রামীণ এলাকায় ৯০টি পুকুর খনন/পুনঃখনন, পৌর এলাকায় ৬০টি উৎপাদক নলকূপ স্থাপন ও প্রতিস্থাপন, পৌর এলাকায় ২০০টি উৎপাদক নলকূপ পুনরুজ্জীবিতকরণ, ৬৬০ কিলোমিটার পাইপ লাইন স্থাপন, পল্লী ও পৌর এলাকায় ছয় হাজার ২০০টি ইম্প্রুভড/স্বল্পমূল্যে স্যানিটারি ল্যাট্রিন নির্মাণ, পল্লী ও পৌর এলাকায় ১৩০টি কমিউনিটি ল্যাট্রিন/পাবলিক ল্যাট্রিন স্থাপন, পল্লী ও পৌর এলাকায় ৫০ কিলোমিটার ড্রেন নির্মাণ এবং পানির গুণগতমান নিশ্চিতে পানির এক লাখ ৩০ হাজার ৫২৫টি নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষার লক্ষ্য অর্জনেও কাজ করে যাচ্ছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।