Amar Sangbad
ঢাকা শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪,

ইভ্যালির সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সেপ্টেম্বর ২২, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


ইভ্যালির সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরে হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা

ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বিক্রি ও হস্তান্তরের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট। এক আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল বুধবার বিচারপতি মুহাম্মদ খুরশীদ আলম সরকারের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

পণ্য বিক্রির নামে প্রতারণার অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির এমডি ও চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার হওয়ার পর গত ২২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মোহাম্মদ হুমায়ন কবির পল্লব এবং মোহাম্মদ কাওছার দেশের ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎ ও অর্থপাচার বিষয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্তের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। ওই রিটে ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের অর্থ ফেরত দেয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক আর্থিক লেনদেন তাৎপর্যপূর্ণভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, ব্যাংকিং খাতে অনলাইন পেমেন্টের সুবিধা, টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত সুবিধা বৃদ্ধির সুযোগে ব্যাঙের ছাতার মতো ই-কমার্সভিত্তিক অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেছে। এর মধ্যে ইভ্যালি, ধামাকা, আলেশা মার্ট, কিউকম, দালাল, ই-অরেঞ্জ, আলাদিনের প্রদীপ, দারাজ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গত কয়েক বছরে এসব প্রতিষ্ঠান সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর কার্যকর নজরদারির অভাবের সুযোগে গ্রাহক আকর্ষণে বিভিন্ন অনৈতিক অফার, ডিসকাউন্ট নামে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ বিদেশে পাচার হয়েছে।

এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে বিচার বিভাগীয় তদন্তসহ গ্রাহকের স্বার্থ রক্ষায় অবিলম্বে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে রিট আবেদনে নির্দেশনা চাওয়া হয়। রিট আবেদনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়ের সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রতিযোগিতা কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদি করা হয়।

ইকমার্স রেগুলেটরি অথরিটি গঠনের সিদ্ধান্ত
ইকমার্স বন্ধ না করে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনার জন্য একটি রেগুলেরেটরি অথরিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ইকমার্স নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা হবে। এখান থেকে ইকমার্সের জন্য রেজিস্ট্রেশন দেয়া হবে এবং কঠোরভাবে ডিজিটাল বাণিজ্য মনিটরিং করা হবে।

গতকাল বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ডিজিটাল কমার্স ব্যবসায় সাম্প্রতিক সমস্যা বিষয়ে পর্যালোচনা সভা শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হকসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, সারা বিশ্বে ইকমার্স চালু রয়েছে।

ইতোমধ্যে এ ব্যবসার সঙ্গে লাখ লাখ মানুষ জড়িত হয়েছেন। ডিজিটাল বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে বাণিজ্য পরিচালিত হবে। করোনাকালে ইকমার্স সুনাম অর্জন করেছে, মানুষ উপকৃত হয়েছে। কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের অসৎ ব্যবসা ও প্রতারণার কারণে সব ইকমার্স বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না। যারা অপরাধ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের প্রতারণার সুযোগ না পায়, সে জন্য সরকার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছে।

তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ইকমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা কার্যকর হওয়ার পর প্রতারণা বন্ধ হয়ে গেছে। এর আগে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গ্রাহকদের প্রতারিত করেছে, ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ বিষয়ে আরও কী করা যায়, সরকার তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখছে।

সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেন, ইকমার্সে অনেক মানুষের প্রতারিত হওয়ার অভিযোগ আছে। ইকমার্স পরিচালনার জন্য একটি আইন তৈরি করা প্রয়োজন। দেশের কোনো মানুষ যাতে ডিজিটাল বাণিজ্যে প্রতারিত না হন, সে জন্য পদক্ষেপ নেয়া জরুরি। এ জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম গঠন করা দরকার।

তথ্যমন্ত্রী ড. হাসান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশ ডিজিটাল হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইকমার্স জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। মানুষ যাতে প্রতারিত না হয়, সে জন্য আইন করা দরকার। এ ব্যবসা পরিচালনার জন্য একটি রেগুলেটরি অথরিটি গঠন করা যেতে পারে। গুটিকয়েক প্রতারণাকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য ইকমার্স বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না। মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এ জন্য প্রচার মাধ্যম বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগাতে হবে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ইকমার্স বন্ধ করে দেয়া ঠিক হবে না। আইনের আওতায় এনে ইকমার্সকে সুশৃঙ্খল করতে হবে, যাতে কেউ প্রতারণা করতে না পারে। মানুষ কম দামে পণ্য পেতে চাইবে, এটাই বাস্তবতা। ইকমার্স ব্যবসার জন্য জামানত রাখার ব্যবস্থা করা যায়। ব্যবসা যতো বড় হবে জামানত ততো বেশি হবে। মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হতে হবে। মানুষকে প্রতারণার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে। মানুষ যাতে টাকা ফেরত পায় সে জন্য সহযোগিতা করা প্রয়োজন।

ই-কমার্সে প্রতারণার প্রাথমিক দায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের: ই-কমার্সে প্রতারণার জন্য প্রাথমিকভাবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে দায়িত্ব নিতে হবে বলে মনে করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এ নিয়ে তিনি বলেছেন, এসব প্রতিষ্ঠান করার সময় কারো না কারো ছাড়পত্র নিয়েই করা হচ্ছে। এখানে ছাড়পত্র দিচ্ছে কমার্স মিনিস্ট্রি। তাদের প্রাইমারিলি দায়িত্ব নিতে হবে। তাদের সঙ্গে অন্য যাদের সম্পৃক্ততা আছে, তাদের সবারই আমি মনে করি দায়িত্ব নেয়া উচিত।

গতকাল দুপুরে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অর্থনৈতিক সংক্রান্ত এবং সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে তিনি এসব কথা বলেন। ই-কমার্সে প্রতারণা নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের কোনো উদ্যোগ থাকবে কি-না জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে বলবো না। মূলত কাজটি এখন আমাদের অর্থ মন্ত্রণালয়ের।

এখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভূমিকা আছে, তারা এসব বিষয় নিয়ে আসে আমাদের এখানে। আইটির বিষয় আছে, সেখানে আইসিটি মিনিস্ট্রি আছে, তারাও দায়িত্ব নেবে। এ প্রতিষ্ঠানগুলো মাঝে মধ্যে তৈরি করে মানুষকে ঠকায়। এটা কিন্তু চলে আসছে। আগে যেভাবে হতো, সেটি এখন ভিন্ন আঙ্গিকে আসছে।

আগে ম্যানুয়ালি করতো, এখন ইলেক্ট্রিক্যালি করছে। ডিজিটালাইজড ওয়েতে করা হচ্ছে। মানুষ বিশ্বাস করে এখন, কতদিকে নিয়ন্ত্রণ করবে? সরকারকে দায়িত্ব নিতে হবে অবশ্যই। সরকারই দায়িত্ব নেবে। সরকার দায়িত্ব এড়াবে কেন?

ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বিভিন্ন অফিস ঢাকার বাইরেও করা হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ঢাকার ওপর চাপ কমাতে বাইরে অফিস করা হবে কি-না সেটা অন্য মন্ত্রণালয়গুলো বলতে পারবে।কাউকে জেলে পাঠালে ই-কমার্স গ্রাহকদের কোনো উপকার নেই: প্রতারণার অভিযোগে আলোচিত ই-কমার্স ইভ্যালি ও ই-অরেঞ্জের মালিকরা জেলখানায় রয়েছেন।

এমন পরিস্থিতিতে ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কী হবে— জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কাউকে জেলখানায় পাঠিয়ে দিলে তো কোনো লাভ নেই। সে জেল খেটেই শেষ, এতে কোনো উপকার হবে না। ই-কমার্সের সার্বিক বিষয়ে মন্ত্রণালয় পজিটিভলি চেষ্টা করছে কিছু একটা করা যায় কি-না।

গতকাল বুধবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সম্মেলন কক্ষে ‘সোর্সিং বাংলাদেশ ২০২১-ভার্চুয়াল সংস্করণ’ নামে সপ্তাহব্যাপী অনলাইন মেলার আয়োজন উপলক্ষে করা এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।  

টিপু মুনশি বলেন, ই-কমার্সের কারণে অনেক গ্রাহকের অর্থ নষ্ট হয়েছে। এখন অনেককে বলতে শোনা যাচ্ছে— যাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, তাদের যদি ব্যবসা করতে দিয়ে কঠিনভাবে অবজারবেশন করা হতো, তাহলে কিছুটা ক্ষতি কাভার করতে পারতো। এ ধরনের সাজেশন আসছে।

এ বিষয়গুলো কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। জেলখানায় নেয়া সমাধান নয় জানিয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা সার্বিক বিষয়গুলো অবজারভেশন করছি। আমরাসহ চার মন্ত্রণালয় (অর্থ, বাণিজ্য, আইন ও স্বরাষ্ট্র) বিষয়টি নিয়ে কথা বলছি।

তাদের অবস্থান নির্ণয় করা হচ্ছে, কোনো উন্নতি করা যায় কি না, সে বিষয়ে দেখা হচ্ছে। ইভ্যালি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, অনেক বড় গ্রুপ অব কোম্পানি বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল; কিন্তু নেতিবাচক এসব ঘটনার কারণে তারা সরে দাঁড়িয়েছে।