Amar Sangbad
ঢাকা মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪,

সার্চ কমিটি নাকি ঐকমত্য

অক্টোবর ৫, ২০২১, ০৬:০০ পিএম


সার্চ কমিটি নাকি ঐকমত্য
  • রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ইসিতে আস্থা আ.লীগের
  • সার্চ কমিটির ইসি গঠন মানবে না বিএনপি
  • নিরপেক্ষ ও ঐকমত্যের ইসিতেই বেশি মত
  • ভোট দিতে পারার মতো ইসি চায় জনগণ
  • নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি পূর্বের সার্চ কমিটির
  • ইসিতে এ নিয়ে সন্তুষ্ট নন বিশেষজ্ঞরা

আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি শেষ হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ। তার আগেই রাজনৈতিক মাঠে চলছে তুমুল আলোচনা। ক্ষমতাসীন সরকার চায় সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাও ঘোষণা দিয়েছেন রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে সার্চ হবে তার মাধ্যমে চূড়ান্ত হবে ইসি।

অন্যদিকে এ নিয়ে অমত রাজনৈতিক বিরোধী শিবিরে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করাকে অসাংবিধানিক বলছেন বিএনপি নেতারা। বরং রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যমতের ভিত্তিতে দক্ষ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের দিয়ে কমিশন গঠনের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিএনপি নেতারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেটি রুখে দেয়া হবে। অন্যদিকে দেশের সচেতন মহলদের একাংশও চাচ্ছেন সরকারের অধীনে নিয়ন্ত্রিত ইসি গঠন নয় ঐক্যমতের ভিত্তিতে, নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে দিয়েই ইসি গঠন করতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যে প্রক্রিয়ায় সার্চ কমিটি হয়, তা দলনিরপেক্ষ মানুষ দিয়ে হয় না। কমিটি অযোগ্যদের খুঁজে বের করে, যার ফলে সর্বশেষ দুটি নির্বাচন কমিশন পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। যারা রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়, অতীতে কোনো দলের ব্যানারে ছিলো না তাদের অগ্রাধিকার দেয়া হোক। তবে বিচক্ষণ সাধারণ মানুষ বলছে, ইসি যেমনই হোক, তারা যেনো ভোট দেয়ার অধিকার পায়, নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন, নিরাপত্তা ও সুরক্ষায় যেনো ভোট দিয়ে ঘরে ফিরতে পারেন। এ নিয়ে রাজনৈতিক মাঠে আলোচনার পর গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে পল্টনে ফুটপাতে ঝটলাবাঁধা লোকদের মাঝেও আগামী নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

হাফিজ নামে এক ব্যবসায়ী বলছেন, গত দুই-তিন বছর তো ভোট দিতে পারিনি। একবার তো কেন্দ্রে গিয়ে শুনি আমার ভোট তো দেয়া হয়ে গেছে। আরেকবার গিয়ে দেখি কেন্দ্রে মানুষই নাই, কিছু মানুষ আছে বুথেও থাকে! পছন্দের প্রার্থীকেও ভোট দিতে ভয় লাগে। ওরাই জোর করে টিপ দিয়ে দেয়।

পাশে থাকা আনিসুল নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আমি একটি কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার ছিলাম, মানুষের মধ্যে তেমন উৎসাহ দেখি নাই, ভোট কেন্দ্রে চাপ নেই, মানুষও ছিলো কম। মানুষ এখন ভোট দেয়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে।

ইদ্রিস নামের আরেকজন বলছেন, এবার যে-ই আসুক সে যেনো নিরপেক্ষ হয়। অন্তত যেনো ভোটটা দিতে পারি।শুধু সাধারণ মানুষ নয়, এ নিয়ে গত সোমবার স্বয়ং মুখ খুলেছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

সোমবার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেছেন, মহামান্য রাষ্ট্রপতি একটা সার্চ কমিটি গঠন করবেন। তার মাধ্যমে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন হবে। আমরা নির্বাচনকে নির্বাচন হিসেবেই দেখি। কখনো আত্মতুষ্টিতে ভোগী না। জনগণের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করে এবং তাদের ভোট নিয়েই আবার ক্ষমতায় আসতে চাই। জনগণ ভোট দিলে আসবো, নইলে আসবো না। এ নিয়ে কথা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও।

তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে বর্তমান সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। দেশে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ হলেই কেবল নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হবে। এই লক্ষ্যে রাষ্ট্রপতি সবাইকে নিয়ে সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে সংশয়ের কোনো সুযোগ নেই।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক বলেছেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের নাম রাষ্ট্রপতির কাছে যাবে। রাষ্ট্রপতি তাদের নিয়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন। নির্বাচন কমিশন তাদের শপথ অনুযায়ী স্বাধীনভাবে দেশে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন পরিচালনা করবেন। এক্ষেত্রে সরকারের কোনো ভূমিকা বা হস্তক্ষেপ করার সুযোগ নেই, থাকবেও না। সার্চ কমিটির মাধ্যমে যে নির্বাচন কমিশন গঠিত হবে, আইনগতভাবে তারাই সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য যথেষ্ট।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘শুনতেছি ইদানিং রব উঠেছে, গণমাধ্যমেও দেখছি যে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে সার্চ কমিটি দিয়ে। তবে আমি সার্চ কমিটি কোনো দিন শুনি নাই। এই সার্চ কমিটির কোনো সাংবিধানিক ভিত্তি নাই। এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না। চেষ্টা করলে প্রতিরোধ করা হবে, বাধা দেয়া হবে। সেই বাধার মুখে সরকার টিকে থাকতে পারবে না’।

এ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা সুজনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, দেশের নির্বাচনব্যবস্থা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে, কোনো নির্বাচন তো এখন আর সুষ্ঠু হয় না। মানুষ কী এখন আর ভোট দিতে পারেন। পরপর দুটি সার্চ কমিটির পারফরম্যান্স মানুষ তো দেখেছে, আমরাও দেখেছি এ দুটি কমিটির অর্জন সন্তুষ্ট হওয়ার মতো নয়। বর্তমান কমিশনের অধীনে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হয় না। ভোটাররা ভোট দিতে চান না, কারণ তারা মনে করেন, ভোট দিয়ে লাভ নেই।